X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগের নতুন কমিটিতে এবার ২০ ভাগ নারী

এমরান হোসাইন শেখ
২৯ অক্টোবর ২০১৬, ২০:৫৯আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ২২:১০

আওয়ামী লীগ

নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী আগামী ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সকল স্তরে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে পথে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গত কমিটির চেয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নারী সদস্য বাড়িয়ে সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার নারীর অবস্থান ২০ শতাংশে উন্নীত করেছে দলটি। আর এর মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে দলটি যুগান্তকারী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে ৮মবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইদিনে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার উত্তরসূরী হিসেবে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল হকের নাম ঘোষণা করলে সর্বসম্মতিক্রমে তিনিও নির্বাচিত হন। একইদিনে কমিটির আরও কয়েকটি পদে নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর আজ শনিবার পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের ৮৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ৭৫ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। দলীয় সভাপতির স্বাক্ষরিত এই কমিটি নিয়ে এখন চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ।  

নতুন কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ কমিটিতে সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে নারী রয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীতে ৪ জন, সম্পাদক মণ্ডলীতে ৫ জন এবং সদস্য পদে ৬ জন। এবারের কমিটিতে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সভাপতিমণ্ডলীতে রয়েছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন। সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. দীপু মণি, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক পদে ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রোকেয়া সুলতানা। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটিতে গত কমিটির বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও সিমিন হোসেন রিমির পাশাপাশি নতুন যুক্ত হয়েছেন পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান, ড. শাম্মী আক্তার এবং মারুফা আখতার পপি।

এদিকে বিদায়ী কমিটির ১৫ সদস্য বিশিষ্ট সভাপতিমণ্ডলীর মধ্যে নারী ছিলেন ৫ জন। তাদের মধ্যে জোহরা তাজ উদ্দিন কমিটি গঠনের কিছুদিন পরে মারা যান। এবারের কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৯ জন করা হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে আগের কমিটিতে ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে নারী ছিলেন একজন। এবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ একটি বাড়িয়ে ৪টি করা হলেও একজন নারী এ পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

বিভাগীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে আগের বার কমিটি গঠনের সময় নারী ছিল ৩ জন। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শিরীন শারমিন স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় তা কমে দুই জনে দাঁড়ায়। তবে এবার দুইজনের স্থলে বেড়ে হয়েছে ৪ জন। এদিকে বিগত কমিটিতে ২৬ জন সদস্যের মধ্যে নারী ছিল মাত্র ২ জন। সেখানে এবার আরও ৪ জন বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটি গঠনের সময় নারী নেতৃত্ব ১৫ শতাংশ হলেও পরে তা কমে ১২.৩২ শতাংশে দাড়ায়। ওই কমিটির ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মোট নারী ছিলো ১১ জন। এদের মধ্যে জোহরা তাজ উদ্দিন মারা গেলে একটি এবং শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় কমিটি থেকে দুইজন নারী সদস্য কমে যায়। এদের মধ্যে জোহরা তাজউদ্দিনের পদটি শূন্য রেখেই আগের কমিটি শেষ হয়। আর শিরীন শারমিনের পদটি পূরণ হয় একজন পুরুষ সদস্যকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে। এর আগে ২০০৯ সালেও আওয়ামী লীগের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ছিল ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে।

তবে মূল কমিটিকে নারী নেতৃত্ব বাড়ার হার লক্ষ্যণীয় হলেও উপদেষ্টামণ্ডলীতে এ চিত্র হতাশাজনক। বিদায়ী কমিটিতে উপদেষ্টামণ্ডলীর ৩৬ জন সদস্যের মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র ২ জন। এবার উপদেষ্টা পরিষদের ৩৮ জনের মধ্যেও নারী রয়েছেন সেই দুইজনই।

নির্বাচন কমিশনের আরপিও অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আরপিওর ওই ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আওয়ামী লীগও তাদের গঠনতন্ত্রে একটি ধারা যুক্ত করে তাতে বলা হয়েছে, ‘আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদসহ দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে। নারী-পুরুষের সমতা আনিবার লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান হারে এই প্রবৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকিবে।’

তবে, ইতিমধ্যে আরপিও’ সংশোধনের পর ৮টি বছর কেটে গেলেও আওয়ামী লীগের সংগঠনের প্রতিটি স্তরে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। ইসি শর্ত পূরণ করতে হলে আগামী ৪ বছরের মধ্যে আরও ১৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব দলে নিয়ে আসতে হবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির হার দৃশ্যমান হলেও সংগঠনের নিম্মস্তরে এই হার আরও অনেক কম। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে নারী সম্পাদক পদ ছাড়া অন্যান্য পদে নারী নেই বললেই চলে।

তারপরেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়ার এই হারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারী নেতৃত্বের হার কিছুটা হলেও বেড়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে তাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। কারণ ২০২০ সালের মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলকে ৩০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেবল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, সকল স্তরে নেতৃত্বে যাতে নারীরা আসে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

/ইএইচএস/এনএস/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ার সাজেদুলের অভিষেক
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ার সাজেদুলের অভিষেক
দাবদাহে স্থবির চুয়াডাঙ্গার জনজীবন
দাবদাহে স্থবির চুয়াডাঙ্গার জনজীবন
বানিয়ে ফেলুন আমের কাশ্মিরি আচার
বানিয়ে ফেলুন আমের কাশ্মিরি আচার
ভোটে প্রভাব বিস্তাব করবেন না, মন্ত্রী-এমপিদের ইসি
ভোটে প্রভাব বিস্তাব করবেন না, মন্ত্রী-এমপিদের ইসি
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে