করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই দেশের আলেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল প্রবীণ রাজনীতিবিদ শেখ মো.আব্দুল্লাহর। কওমি মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতিতে ভূমিকা রাখা এই প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে আলেমরা একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারিয়েছেন বলেও অভিমত দিয়েছেন। রবিবার (১৪ জুন) পৃথক বিবৃতিতে এসব দল ও সংগঠন শোক প্রকাশ করে।
এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম গভীর শোক প্রকাশ করে শেখ মো. আব্দুল্লাহর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ কওমি মাদ্রাসার বোর্ডগুলোর শিক্ষা সনদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একইসঙ্গে উলামায়ে কেরামের সঙ্গে তার সবচেয়ে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। তিনি দেশের জাতীয় সংকটে ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নিতেন।’
পৃথক বিবৃতিতে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম ও খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুফতি রুহুল আমীন শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন ধর্মভীরু বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি অত্যন্ত সৎ, পরোপকারী ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। আমরা একসঙ্গে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, দাওয়াত ও তাবলীগ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সামাধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছি।’
মুফতি রুহুল আমীন আরও বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার বাবা শামছুল হক ফরিদপুরীর শিষ্য এবং গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার ছাত্র। আমাদের মাঝে গভীর সম্পর্ক ছিল। আমরা দুজন ভাইয়ের মতো চলাফেরা করতাম। তার ইন্তেকালে আমি এবং দেশের আলেম-উলামা অভিভাবকশূন্য হলাম। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।’
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির পর পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সরকার স্বীকৃত আল-হাইআতুল উলায়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়। এই সংগঠনটিও শেখ মো. আবদুল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান আহমদ শফিসহ অন্যরা দেশের সব আলেম, মসজিদের ইমাম, খতিব, মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের শেখ আবদুল্লাহর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানান।
শোকবার্তায় আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার নেতারা বলেন, শেখ আবদুল্লাহ ছিলেন কওমি মাদ্রাসাবান্ধব। সরকার কর্তৃক কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স (ইসলামি স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদানে তার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। তার মৃত্যুতে দেশ হারালো একজন পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ ও দরদী দেশসেবককে।
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, শেখ মো. আব্দুল্লাহ একজন সজ্জন, সদালাপী, বিনয়ী ও ধর্মভীরু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পবিত্র কুরআনে হাফেজ ছিলেন। মন্ত্রিত্ব লাভের পর ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন তিনি। দেশের আলেমদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তার মৃত্যুতে জাতি একজন আলেমবান্ধব মন্ত্রীকে হারালো।
রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। পৃথক বিবৃতিতে দলটির আমির ইসমাঈল নূরপুরী ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, শেখ আব্দুল্লাহ উলামায়ে কেরামের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন। ধর্মীয় যেকোনও বিষয়ে আলেম উলামাদের পরামর্শ নিতেন। তিনি বিভিন্নভাবে ইসলামের খেদমত করে গেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন উলামাবান্ধব ও জাতীয় রাজনীতিবিদকে হারিয়েছে, যা অপূরণীয়।
বিএনপি-জামায়াত জোটভুক্ত খেলাফত মজলিসও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। পৃথক বিবৃতিতে দলটির আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘শেখ মো. আবদুল্লাহ ব্যক্তিগতভাবে একজন সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের মতামতকে গুরুত্ব প্রদান করতেন।’ তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন দলটির নেতারা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর রুহের মাগফিরাত কামনায় ফরিদপুরের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় কোরআন খানি ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি উসামা আমীন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র সংগঠন ফুজালায়ে গওহর শোক প্রকাশ করেছে।