দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তাই বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কেবলমাত্র নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন।’
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে নাগরিক ঐক্যের আয়োজনে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা সুজনের পক্ষ থেকে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি এবং সেই আলোকে কাজ করছি। আমি মনে করি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘এই সরকার একদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অপরদিকে মানবাধিকার হরণ করেছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিনা অপরাধে গ্রেফতার এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই সরকার যে উন্নয়নের কথা বলে, সেই উন্নয়ন হয়েছে— তাদের সহযোগী লুটপাটকারীদের। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, এটা আমরা সবাই জানি।’
সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, ‘সরকার যদি জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করে, জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে তো বিদেশি শক্তি হস্তক্ষেপ করবেই। বর্তমান সরকারই তো বিদেশি শক্তিকে সেই সুযোগ দিয়েছে।’
সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে এই দেশে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কেবলমাত্র নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন।’
আলোচক আব্দুল হক বলেন, ‘কীভাবে একটা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খালি হয়ে যেতে পারে, তার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই সরকার। ভবিষ্যতে এ নিয়ে হলিউডে সিনেমা তৈরি হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো যেতে পারে।’
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশ যে চরম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে, সেই সংকট উত্তরণের জন্য এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা প্রয়োজন, যে সরকার ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করে একটি সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। এজন্য ৩ দিন, ৩ মাস বা ৩ বছর— কতদিন লাগবে তা বলছি না। তবে শাসন কাঠামোর সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিগত ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে সত্যিকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার পরিবর্তনের সাসঙ্গে সঙ্গে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন তথা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলছি। রাষ্ট্রের এমন একটি সংস্কার, যাতে সত্যিকার অর্থেই জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হয়ে ওঠে এবং নতুন করে কোনও স্বৈরাচারের জন্ম হতে না পারে। আমরা একটা সম্ভাবনার সূর্য দেখছি এবং আমাদের বিশ্বাস, আমরা পারবো। আর এই পরিবর্তনের, এই সংস্কারের সূচনা করতে হবে এখনই, ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে।’
নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর কাদিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন— নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান।