জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, বিগত দিনে গুম-খুনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে পুলিশ বাহিনী। তাই এ সেক্টরে সংস্কার জরুরি। নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে তোড়জোড় চললেও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অসংখ্য মানুষ তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ বাহিনীর কার্যকরী সংস্কার না হলে আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারাও আগের পথ অনুসরণ করতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস উপলক্ষে বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘নির্যাতন থেকে প্রতিরোধ: স্মৃতি, ন্যায়বিচার ও প্রতিবাদের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এনসিপির মানবাধিকার বিষয়ক সেল এ সভার আয়োজন করে।
সামান্তা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেকটা ঘটনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। নাগরিকবান্ধব কোনও আন্তরিক কর্মসূচি তাদের নেই। পুলিশ বাহিনী ও বিচার বিভাগে চলছে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা। সে আইনে দেশ চালালে নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত গণঅভ্যুত্থানে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ততা আমরা প্রায় ভুলে যেতে বসেছি। তাই এখন নারীর মর্যাদার কথা বাদ দিয়ে তাদের পোশাক, ধর্ম ও চালচলন নিয়ে কথা হচ্ছে। যারা গণঅভ্যুত্থানে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করতেন না তারাও নিজেদের ক্রেডিট জাহির করছেন। আমরা সবকিছুতেই তারিখ নিয়ে পড়ে রয়েছি। সবক্ষেত্রে ৪৭, ৫২ ও ৭১ কে টেনে আনছি। অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুমের শিকার ও তাদের পরিবারের বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেই। তিনি তাদের মূল্যানের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানান।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার বিগত দিনে নিজের বাবার গুম ও কারাগারে থাকার বিষয় তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, ২০১১ সালে তার বাবা গুম হন। পরবর্তী সময়ে কারাগারে রাখা হয় কয়েক বছর। এ সময়টায় পরিবার কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। আর একটি পরিবারও যেন এমন নির্যাতনের শিকার না হতে হয়, রাষ্ট্রের কাছে তিনি সে আহ্বান জানান।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসাইন বলেন, নতুন বাংলাদেশ নির্যাতনমুক্ত হোক। যে দেশে ভোট দিতে বাধা পেতে হবে না। নারীরা ভোট দিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হবে না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক চুক্তি করতে হবে। বিগত দিনে নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, বিগত দিনে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল। তরুণদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা হতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলে গুম-খুন করা হতো। এনসিপি চায় কোনও দল যেন আর সেদিকে না যায়।
সভায় আলোচক হিসেবে ছিলেন মানবাধিকারকর্মী খন্দকার আব্দুল লতিফ।