X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিশ্বকাপে দলকে জিতিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে চাই’

রবিউল ইসলাম
২৪ মে ২০১৯, ২১:৩১আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ২১:৫৫

তিনি নিজেই বলেন, তার ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান-পতন। কথাটা মিথ্যে নয়। পাঁচ বছর আগে অভিষেক হলেও মাত্র ১৮টি ওয়ানডে সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে যেন। দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা নিউজিল্যান্ড সফরে। গত ফেব্রুয়ারিতে কিউইদের মাটিতে টানা দুটি ফিফটির আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ তিনি বিশ্বকাপ দলে। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপচারিতায় মিঠুনের বদলে যাওয়া, জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলার রোমাঞ্চ, ক্রিকেটের সেরা আসরে লক্ষ্য ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠে এলো।

ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান-পতনের পর মিঠুন এখন ভালো খেলতে আত্মবিশ্বাসী বাংলা ট্রিবিউন: ২৮ বছর বয়সে জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। কিছু দিন আগেও কি এটা ভাবতে পেরেছিলেন?  

মিঠুন: সত্যি কথা বলতে কী, বিশ্বকাপ নিয়ে আমার কোনও স্বপ্নই ছিল না। আমি শুধু জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। বিশ্বকাপ নিয়ে কখনও বিশেষ চিন্তা করিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: তবু বিশ্বকাপের ভাবনা মাথায় উঁকি দিয়েছিল নিশ্চয়ই?

মিঠুন: নিউজিল্যান্ডে কয়েকটা ভালো ইনিংস খেলার পর বিশ্বকাপের ভাবনা মাথায় এসেছিল ঠিকই, তবে সেটা তেমন কিছু নয়। আসলে বিশ্বকাপে খেলা একজন ক্রিকেটারের জীবনে অলঙ্কারের মতো। এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারলে ক্রিকেটারদের জীবনে পূর্ণতা আসে। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া আমার জন্য বিশাল অর্জন। ক্রিকেটের সেরা আসরের সামনে দাঁড়িয়ে আমি রোমাঞ্চিত।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

মিঠুন: বিশ্বকাপ আমার কাছে ঈদের মতো। ঈদে যেমন সবাই উৎসব করে, বিশ্বকাপের দলগুলোও একটি মঞ্চে উৎসব করার সুযোগ পায়। বিশ্বের সব ক্রিকেটপ্রেমীও এই সময় উৎসবে মেতে ওঠেন।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ ১৯৯৯ সালে। সেবারের কথা হয়তো আপনার তেমন মনে নেই। বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার প্রথম উজ্জ্বল স্মৃতি কোনটি?

মিঠুন: ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় আমি অনেক ছোট ছিলাম। তখন ক্রিকেট তেমন বুঝতাম না। শুধু মনে আছে, সেবার পরিবারের সদস্যরা অনেক আনন্দ করে খেলা দেখেছিল। বিশ্বকাপ নিয়ে প্রথম উজ্জ্বল স্মৃতি ২০০৭ সালে। বিকেএসপিতে বন্ধুরা মিলে সেবারের বিশ্বকাপ উপভোগ করেছিলাম। ভারতকে হারানোর স্মৃতি তো স্পষ্ট।

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬০ রানের ইনিংস তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বাংলা ট্রিবিউন: ২০১৪ সালে অভিষেক হলেও দলে নিয়মিত হতে পারেননি। পাঁচ বছর পর কীভাবে উন্নতি করে আপনি একেবারে বিশ্বকাপ দলে?

মিঠুন: আমার জীবন কখনোই সরল-সোজা ছিল না। অনেক উত্থান-পতনের ভেতর  দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। আল্লাহর রহমতে গত কয়েকটি সিরিজ ভালো হয়েছে। উন্নতির কারণ নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম, ভুল-ত্রুটির সমাধান করা, নিজের প্রতি সৎ থাকা ইত্যাদি বিষয়ে লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করেছি। আসলে আমি একটু খুঁতখুঁতে টাইপের। কোনও ব্যাপারে পারফেক্ট না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করে যাই।

বাংলা ট্রিবিউন: আগের মিঠুন আর বর্তমান মিঠুনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। বদলটা কীভাবে হলো?

মিঠুন:  আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতাম। ভাবতাম, খারাপ খেললেই তো আমি বাদ। এখন বাদ পড়া নিয়ে ভাবি না। মাঠে নেমে দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করি। গত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬০ রানের ইনিংসটি আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আগে তেমন সাফল্য পাইনি। তাই আত্মবিশ্বাস বেশ নড়বড়ে ছিল। তবে অতীতের হতাশা কাটিয়ে এখন আমি দারুণ আত্মবিশ্বাসী।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বদলে যাওয়ার পেছনে মাশরাফি মুর্তজার ভূমিকা কতখানি?

মিঠুন: মাশরাফি ভাই দারুণ মোটিভেট করতে পারেন। দুই বছর ধরে আমরা বিপিএল আর প্রিমিয়ার লিগে একই দলে খেলছি। এই সময়ে আমরা প্রচুর কথা বলেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে মাশরাফি ভাইয়ের বিশাল ভূমিকা।

দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাট করতে চান মিঠুন বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো একজন স্ট্রোক প্লেয়ার। বিশ্বকাপে ব্যাটিং নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

মিঠুন: ওয়ানডেতে সব দলই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রত্যাশা করে ব্যাটসম্যানদের কাছে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং সবচেয়ে জরুরি। বেশি ঝুঁকি নিয়ে ব্যাট করলে হয়তো দ্রুত আউট হয়ে যাবো। সেজন্য যথাসম্ভব কম ঝুঁকি নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখা দরকার। আসলে আমি সব সময় দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাট করতে চেষ্টা করি। দলের জন্য প্রয়োজনীয় রান করতে চাই, মিডল অর্ডার চাপের মধ্যে পড়লে দলের হাল ধরতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: ইংল্যান্ডে ভালো ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র কী?

মিঠুন: ইংলিশ কন্ডিশনে ভালো ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাহস আর আত্মবিশ্বাস। এ দুটো থাকলে যে কোনও বোলারের বিপক্ষে ভালো করা সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছেন?

মিঠুন: স্বপ্ন তো অবশ্যই দেখি। তবে চাইবো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেন বেশি রান করেন। অবশ্য বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি পেলে মন্দ হয় না! গত বিশ্বকাপে মিডল অর্ডারে নেমেও রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) সেঞ্চুরি করেছিলেন। আমিও ‍সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই সেঞ্চুরির চেষ্টা করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: এর বাইরে আর কোনও লক্ষ্য?

মিঠুন: বিশ্বকাপে ভালো খেলতে পারলে আমার ক্যারিয়ার হয়তো নতুন দিকে মোড় নেবে। ক্রিকেটের সেরা আসরে বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে চাই। দলকে জয় এনে দেওয়ার চেয়ে ভালো অনুভূতি তো আর হতে পারে না। সেটা ২০, ৩০ বা ১০০ যত রানই হোক না কেন।

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যাটিং পজিশনের কারণে আপনাকে দ্রুত রান তুলতে হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনি কতটা প্রস্তুত?

মিঠুন:  দলের প্রয়োজন পূরণ করা আমার প্রথম লক্ষ্য। দল আমার কাছে কী চায় সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাপের মধ্যে ব্যাটিং সবচেয়ে উপভোগ করি। ওভার প্রতি ১০ রান দরকার হোক বা ২০ রান, টিকে থাকলে শেষ দিকে ঝড় তোলা কঠিন কিছু নয়। 

/আরআই/এএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?