কে ভেবেছিল, লেবাননের বিপক্ষে চার গোলে হারবে বাংলাদেশ, অসহায় আত্মসমর্পণ করবে কাতারের মাঠে? অনেক আশা নিয়ে গেলেও প্রত্যাশার বেলুন চুপসে যেতে সময় লাগেনি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের শুরু থেকে একের পর এক ভুলে গোল হজম করতে হয়েছে। এমন বাজেভাবে হারের পর খেলোয়াড়দের মুখে তালা। বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরবেন জামাল-তপুরা। তবে এই ম্যাচ নিয়ে শুরুতে পেনাল্টি দেওয়া ডিফেন্ডার শাকিল আহমেদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ম্যাচ হারের পর দুঃসহ যন্ত্রণায় আছেন, তা পরিষ্কার তার কথায়।
কাতারের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটে বাংলাদেশের ভুলে লেবাননের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়। অপেশাদার আচরণ করেন ডিফেন্ডার শাকিল। কর্নার থেকে বলের লড়াইয়ে তার জার্সি পেছন থেকে টেনে ধরেন জিহাদ আইয়ুব। তখনই ডান হাত বাড়িয়ে সামনের দিকে দাঁড়ানো এক লেবানিজের চোখে আঘাত দিয়ে বসেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার।
শাকিলকে হলুদ কার্ডের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার রেফারি লেবাননের পক্ষে পেনাল্টি দেন। পঞ্চম মিনিটে হাসান মাতুক স্পট কিক থেকে গোলকিপারের বিপরীত দিক দিয়ে জাল কাঁপান। শুরুতে এমন গোলের পর আর বাংলাদেশ গুছিয়ে উঠে খেলতে পারেনি। কার কী দায়িত্ব, তা যেন ভুলে বসেছিল! বিশেষ করে রক্ষণভাগের অবস্থা তো ছিল বেশ খারাপ। ভুল পাস, মনোসংযোগে ঘাটতিসহ লেবাননের বিপক্ষে যেভাবে খেলার কথা সেভাবে খেলতে পারেনি কেউই।
বিশ্বনাথের জায়গায় শাকিল সেন্টারব্যাক পজিশনে শুরু থেকে জায়গা পান। তবে শুরুর দিকে এমন বড় ভুল করে বসবেন তা তিনি ভাবেননি। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে শুরুতে কথা বলতে চাননি। ভীষণ মন খারাপ বলে এড়িয়ে যান। তবে পরে কিছু কথা বলেছেন, ‘আসলে আমার মন অনেক খারাপ। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আর আমি বুঝতে পারিনি হাত সামনের দিকে উঠে গিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের চোখে লাগবে। পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে হয়তো সবাই চাপে পড়ে যাই। ঘুরে দাঁড়ানো যায়নি।’
এমন ম্যাচের পর রাতেও ঘুমাতে পারেননি শাকিল। ছটফট করছেন। বলেছেন, ‘ইচ্ছে করে তো কাজটি করিনি। কীভাবে যে হাত উঠে গেলো বুঝতে পারিনি। ঘরোয়া ফুটবলে এভাবে আগে কোনও কিছু হয়নি। কোচ ম্যাচের পর কথা বলেছেন। সেটা আমি বলতে চাই না। ’
এরপরই শাকিলের আকুতি, ‘ভাই আর কিছু জানতে চাইবেন না। এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে কথা বলিনি। প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দিন। আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’
জামাল কিংবা তপুকে কল করে কিংবা বার্তা দিয়েও কিছু জানা যায়নি।
ম্যাচ হারের পর সাধারণত ফুটবলাররা অনুতপ্ত থাকেন। তবে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তা যেন অনেক সময় ভুলে যান।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এবার বাংলাদেশ নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভালো খেলেছে। তবে অ্যাওয়ে ম্যাচে যাচ্ছেতাই ফল। কোনও খেলারই সেভাবে ধারাবাহিকতা থাকছে না। গত বছর মোটামুটি ভালো কাটলেও এবার এখনও জয়ের দেখা মিলেনি। হাভিয়ের কাবরেরা একেক সময় রক্ষণে একেকজনকে খেলাচ্ছেন। খেলোয়াড়দের পজিশন বদলে দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে দেশের ফুটবলের ওঠা-নামা দেখতে হচ্ছে সবাইকে, যেন কোনও ধারাবাহিকতা নেই।