X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

‘জিমি থাকলেও ওমানকে হারানো যেতো না, ট্যাকটিক্যালি আমরা পিছিয়ে পড়েছি’

তানজীম আহমেদ
০২ মে ২০২৫, ১৬:৪৯আপডেট : ০২ মে ২০২৫, ১৯:৪১

বাংলাদেশের হকির ইতিহাসে আগে যা হয়নি এবার তাই হয়েছে। এএইচএফ কাপ হকিতে টানা চারবার শিরোপা জিতে জাকার্তায় তা হারাতে হয়েছে। প্রথমবার ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে লাল-সবুজ দলের সেনানিরা। এরই সঙ্গে এশিয়া কাপে খেলার সুযোগও হারিয়েছে। ৪৩ বছরের ইতিহাসে এমন ব্যর্থতায় হকি অঙ্গনে তোলপাড় কম হচ্ছে না। কেন সেমিফাইনাল থেকে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ? কেনই বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি পুস্কর খীসা মিমোর দল? দুদিন আগে তৃতীয় হয়ে দেশে ফিরেছে দল। এমন ব্যর্থতা নিয়ে দলের হেড কোচ মামুনুর রশীদের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলা ট্রিবিউন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের হকির ইতিহাসে এমন ব্যর্থতা আগে হয়নি। এবারই প্রথম হলো। তৃতীয় হতে হয়েছে। হেড কোচ হিসেবে আপনি কী বলবেন?

মামুনুর রশীদ: আমি নিজেও অন্যদের সঙ্গে ব্যথিত। আমি নিজেও প্রত্যাশা করিনি এমন ফল হবে। লক্ষ্য ছিল পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জিতে দেশে ফিরবো। কিন্তু তা হলো কই!

যদি সরাসরি জানতে চাই, কেন দলকে এমন ব্যর্থ হতে হলো?

মামুনুর রশীদ: সত্যি বলতে অন্য দেশগুলো হকিতে অনেক বিনিয়োগ করেছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছে। সেই জায়গায় আমাদের সেভাবে উন্নতি হয়নি। এক ওমানের কথাই ধরুন। তারা সারা বছর নিজেদের হকি চর্চার মধ্যে রাখে। প্রস্তুতি পাশাপাশি দেশের বাইরে খেলতে চায়। তাদের খেলোয়াড়রা জাকার্তায় ১০০ ডলার করে ফি পেয়েছে। আর আমার খেলোয়াড়রা পেয়েছে ১২ ডলার! শুধু এটা চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন কেন আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। 

কিন্তু বাংলাদেশের হকির তো ঐতিহ্য আছে। বিকেএসপিতে নিয়মিত চর্চা হয়। সারা বছর অনুশীলনের মধ্যে থাকে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বড় অংশ সার্ভিসেস বাহিনীতে চাকরি করেন। যদিও লিগ অনিয়মিত। তারপরও আমরা তো টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি এগিয়ে ছিলাম। আর আপনি বলছেন ওমান সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি পায়। এটা তো আগেও পেয়েছে ওরা। তারপরও তো আমাদের আগে ওমানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আছে।

মামুনুর রশীদ: আমাদের হকির চর্চাটা সীমিত পর্যায়ে। এখন আর টুর্নামেন্টের আগে মাসখানেক কিংবা মাসদুয়েক প্রস্তুতি নিলে হবে না। দেশের বাইরে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে। অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। ওমান যদি সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ না থাকতো তাহলে ভালো হতো। আসলে আগে আমরা টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি ভালো ছিলাম। এখন ট্যাকটিক্যালি পিছিয়ে পড়েছি। দেখা গেছে ওমান ম্যাচে যে কৌশলে খেলতে বলেছিলাম, তা ছেলেরা খেলতে পারেনি। আগের মতো দলে মেধাবী খেলোয়াড়দের কিছুটা সংকটও বলা যায়।

মামুনুর রশীদ

কোচ হিসেবে ছেলেদের শেখানোর দায়িত্ব তো আপনার।

মামুনুর রশীদ: আমি আমার মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু না হলে কী করার আছে।

এখন তো হারের পর অনেকেই বলছেন রাসেল মাহমুদ জিমি থাকলে হয়তো ওমানের সঙ্গে হারতে হতো না। এছাড়া দলে খেলোয়াড় বাছাইটাও ঠিকমতো হয়নি বলে সমালোচকরা বলছেন।

মামুনুর রশীদ: জিমি থাকলেও ওমানকে হারানো যেতো না। আগেই বলেছি ট্যাকটিক্যালি আমরা পিছিয়ে পড়েছি। যে কারণে একজন খেলোয়াড় দলে থাকলেই জিততে পারতাম এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। হকি এখন ব্যক্তিগত খেলা নেই। দলীয় পারফরম্যান্সের ওপর সাফল্য নির্ভর করে। যারা বলছে তারা না বুঝে সমালোচনা করছে।

খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলতে পারবেন কোন যোগ্য খেলোয়াড়কে আমি দলে নেইনি। যারা সবদিক দিয়ে ভালো তাদেরই দলে নেওয়া হয়েছে। দল তো আমি একা করিনি। সহকারী কোচ, ফিজিওসহ নির্বাচকরা আছেন। সবাই মিলে দল গঠন হয়েছে। এখন দল সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে, তাই এসব কথা তো বলবেই।

যেভাবে জিমিসহ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বয়সের দোহাই দিয়ে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে তা কী দেশের হকির জন্য ইতিবাচক কোনও বার্তা দিচ্ছে?

মামুনুর রশীদ: দেখুন যাদের দলে দরকার তাদের তো ডাকা হচ্ছে। সব দিক দেখে দলে সবাইকে নেওয়া হচ্ছে। নামের ওপর ভিত্তি করে কাউকে ডাক দেওয়া হয়নি। বাকিটা ফেডারেশন বলতে পারবে।

জাকার্তায় শুধু ওমান কেন, বাংলাদেশ তো ইন্দোনেশিয়া-থাইল্যান্ডকে হারাতে গলদঘর্ম হয়েছিল। এটা কেন হয়েছে?

মামুনুর রশীদ: ওই যে বললাম বাংলাদেশ ছাড়া অন্যরা হকিতে বিনিয়োগ করেছে। এশিয়ার হকির দৃষ্টিও এখন ওমানে। তাদের ঘিরেই সবকিছু হচ্ছে। চাইনিজ তাইপে ফাইনালে হেরেছে ওমানের কাছে। ওরা কিন্তু আগে অনেকটা সৌখিন হকি খেললেও এবার দেখলাম বেশ সিরিয়াস। পরে জানতে পারলাম ওরা চার বছর ধরে এই টুর্নামেন্টের জন্য তৈরি হচ্ছিল। দেশে ও দেশের বাইরে নিয়মিত খেলছে। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াও কম যাচ্ছে না।

একজন সংগঠক তো বলেছেন সেমিফাইনালের আগে দলের খেলোয়াড়রা শপিংয়ে বেরিয়েছিল। তা খেলাতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে।

মামুনুর রশীদ: এমন অভিযোগ ঠিক নয়। মিথ্যা। খেলোয়াড়রা রুমে কতক্ষণ বসে থাকবে। ওদের তাই হোটেলের নিচে হাঁটাহাঁটি করে মানসিক দিক দিয়ে একটু ফুরফুরে থাকতে বলা হয়েছিল। শপিংয়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

জাকার্তায় বাংলাদেশের অন্তত চারটি ম্যাচে এক আম্পায়ার ছিল। যা ম্যাচে পরবর্তীতে প্রভাব ফেলেছিল বলে শোনা গেছে।

মামুনুর রশীদ: দেখুন হকি এখন আগের মতো নেই। এখন মাঠের খেলার পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এই যেমন বাংলাদেশ ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তাহলে বাংলাদেশ তো এ গ্রুপে পড়ার কথা ছিল। ওমান রানার্সআপ হয়ে পরের গ্রুপে থাকতো। কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে হকি ফেডারেশন কী করেছে তা জানা নেই। তার ওপর হংকংয়ের আম্পায়ার চারটি ম্যাচে কেন থাকবে। আসলে এসবও দেখার আছে।

জাকার্তায় তো দুজন ম্যানেজার ছিল। তারা কী করেছেন?

মামুনুর রশীদ: তা আমি বলতে পারবো না। আমি দল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

রাসেল মাহমুদু জিমি

জাকার্তায় এমন ধাক্কার পর নিজের উপলব্ধি কী?

মামুনুর রশীদ: আগের মতো চললে সামনের দিকে উন্নতি করা কঠিন হবে। জাকার্তায় সেই বার্তা পেয়েছি। পেশাদার ভিত্তিতে সব চলতে হবে। হকির চর্চা নিয়মিত থাকতে হবে। লিগ হতে হবে। প্রস্তুতিও সেভাবে নিতে পারলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

তাহলে আপনি নিজেকে ব্যর্থ কোচ মানছেন না?

মামুনুর রশীদ: এখানে কোচ হিসেবে হয়তো বলতে পারেন দলকে ফাইনালে নিতে পারিনি। কিন্তু আমরা ওমানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছি। অন্য ম্যাচও জিতেছিলাম। এখানে আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নেই বললেই চলে। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দলের ফল খারাপ হয়েছে। টুর্নামেন্টের আগে দেশের বাইরে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে হয়তো এমন ব্যর্থতা হতো না। 

আমি আবারও বলছি আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা কেন বলা হচ্ছে। এখানে আমার একার ব্যর্থতা নেই। সবাই ছিলাম দলে। এটা টিম ওয়ার্ক। সুতরাং ব্যক্তিগত দায় বা ব্যর্থতা কেন থাকবে। ব্যর্থতা সবার ওপরই গিয়ে পড়ে। কারণ এমন ফল হবে আমি বা আমরা আশা করিনি। সবাই মিলে চেষ্টা করেছি। হয়নি। অন্যদের মতো আমারও খারাপ লাগছে।

এখন  কর্মকর্তা, খেলোয়াড় ও কোচদের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সবাইকে হকির জন্য এক হয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে যদি সামনের দিকে আমরা ভালো করতে পারি। এছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই।

/এফএইচএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডি ব্রুইনার গোলে তিনে ম্যানসিটি
ডি ব্রুইনার গোলে তিনে ম্যানসিটি
‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ধাক্কায় পথচারী নিহত, আহত স্বামী-স্ত্রী
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ধাক্কায় পথচারী নিহত, আহত স্বামী-স্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি