X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিতে মানুষের শ্রম কমে গেছে’

হিটলার এ. হালিম
১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:১৭আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৫৭

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাকসহ ৬০টি দেশের ৫০০টির বেশি ব্যাংক কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেডের সেবা নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনাওয়ার হোসেন তানজিল। তিনি বলেন, আমাদের স্মার্ট কার্ড ই্এমভি প্ল্যাটফর্ম চিপ বা সিম যুক্ত। এই প্ল্যাটফর্মটি অনেক বেশি নিরাপদ। বিশ্বের বিখ্যাত অনেক ব্যাংকের পাশাপাশি দেশীয় কয়েকটি ব্যাংক কনা ল্যাবের সেবা নিচ্ছে।  তিনি ডিএফএস (ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস) নিয়েও কথা বলেছেন।  

জানা গেছে, এ দেশেরই একটা ব্যাংক ২০ লাখের বেশি ইএমভি চিপ যুক্ত এটিএম কার্ড ব্যবহার করে।   

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল

বাংলা ট্রিবিউন: দেশে মোবাইল আর্থিক সেবা এতো জনপ্রিয় কেন হলো? হওয়ার কথা ছিল তো ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের?

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: সূত্রমতে প্রায় ছয় কোটি মানুষ মোবাইল আর্থিক সেবা ব্যবহার করছে। এটা একটা বড় কারণ আর অবশ্যই এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। যে কোনও শ্রেণির মানুষ, যাদের প্রচলিত শিক্ষা খুব একটা নেইও, যারা ব্যাংকের সেবা নেয় না, তারাও এই সেবাটি খুব সহজে ব্যবহার করতে পারে। আমরা শুরু থেকে এটাই চেষ্টা করেছি যে, কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন আরও সহজ করা যায় যাতে এই শ্রেণির মানুষদের এ সেবার আওতায় আনা যায়। আমাদের দেশে মূল ধারার ব্যাংকিং সেবার বাইরে একটি বড় জনগোষ্ঠী আছেন যারা এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কেবল এর সহজ ব্যবহারযোগ্যতার কারণে, যা মূলধারার ব্যাংকিংয়ের সার্বজনীনতায় একটি বড় প্রশ্ন রেখে যায়।  

বাংলা ট্রিবিউন: এর কারণে কি মূলধারার ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটু আড়ালে চলে যাচ্ছে?
মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: এক অর্থে বলতে পারেন যাচ্ছে। মূলধারার ব্যংকিং খাত অনেক বড়। আমাদের শিডিউলড ব্যাংকের সংখ্যা ৫৬টির মতো। হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিদিন। বাংলাদেশের বড় বড় সব লেনদেন মূলধারার ব্যাংকের মাধ্যমেই হয়। এই ধারার ব্যাংকিংকে গ্রাহকদের জন্য আরও সহজ করার জন্য আমাদের আরও পরিশ্রম ও মেধার বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। সেগুলো আমরা করছিও, তবে একটু ধীরে করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের মূলধারার ব্যাংকিংয়ের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস গ্রাহকদের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের জানা আছে যে, এমএফএস হলো ডিএফএস-এর একটি অংশ। কিন্তু সব ছাপিয়ে এমএফএসটাই সামনে চলে আসছে।

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান যখন আমরা দিতে চাই তখন আমরা কী বুঝাতে চাই? আমরা বুঝাতে চাই যে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনকে আরও সহজ করবো। সেখানে মোবাইল অবশ্যই ভালো একটি ডিজিটাল ডিভাইস। যা মানুষের জীবনকে অনেক দিক থেকে সহজ করেছে। তবে তাই বলে মোবাইলই যে একমাত্র ডিজিটাল ডিভাইস তা নয়। আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যাংকিং আছে, কিছু সেবার জন্য অ্যাপ আছে, ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ এবং অটোমেটিক ক্লিয়ারিং হাউসও আছে। এই সবকিছুই ডিজিটাল ফাইন্যান্সিল সার্ভিসের পার্ট। কয়েক বছর আগেও আমরা এক ব্যাংকের চেক আরেক ব্যাংকে দিতাম না। কারণ সেটা প্রসেস হতে দুই তিন দিন লেগে যেত। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের উন্নতি হয়েছে। একদিনের মাথায় এটা হয়ে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে আমাদের অটোমেটিক ক্লিয়ারিং হাউসের জন্য। আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক ব্যাংকের টাকা আরেক ব্যাংকে ট্রান্সফার করাও শুরু করেছি। এগুলো হচ্ছে আমাদের মূল আর্থিক সেবার মৌলিক ডিজিটাল অবকাঠামো। এই কারণে আমাদের এদিকে নজর দেওয়া উচিত আরও বেশি। ডিএফএস-এর আর্থিক ভলিউমও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ভলিউমের চেয়ে অনেক অনেক বড়। ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার উন্নয়নের জন্য আমাদের আরও অনেক সময় দেওয়া দরকার। দুর্বল জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করারও দরকার।

বাংলা ট্রিবিউন: ডিজিটাল সেবা বাড়লে কি মানুষের অংশগ্রহণ কমে যাবে বা মানুষ কি বেকারত্বের দিকে ধাবিত হবে?

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: ডিজিটাল সেবায় মানুষের অংশগ্রহণ থাকলেই যে তা ডিজিটাল হবে না তা নয়। ধরুন, একটি ব্যাংকে কোনও কম্পিউটার নেই। সেখানে দৈনন্দিন সেবা দিতে কর্মী লাগে ১০০ জন। তবে, যদি সেখানে ২০টি কম্পিউটার যোগ করেন তাহলে মানুষ লাগবে ২০ জন। অর্থাৎ প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিতে মানুষের শ্রম কমে গেছে। মানুষের যেখানে প্রয়োজন সেখানে মানুষ কাজ করবে। ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কম খরচে গ্রাহক সেবাকে আরও দ্রুত করা।

ডিএফএস-এর আর্থিক ভলিউমও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ভলিউমের চেয়ে অনেক অনেক বড়। ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার উন্নয়নের জন্য আমাদের আরও অনেক সময় দেওয়া দরকার। দুর্বল জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করারও দরকার।

বাংলা ট্রিবিউন:  বিষয়টি যদি বিস্তারিতভাবে বলতেন।

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: এমএফএস- বা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস কেবল আর্থিক লেনদেনের কাজটি করে। সেখানে মূলধারার ব্যাংকের অনেক সুবিধাই নেই। যেমন বিল পেমেন্ট বা লোন ইত্যাদি। এসবের কিছুই এখান থেকে করা যায় না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এখানে অনেক লেনদেন হয় ওভার দ্য কাউন্টার। এর মাধ্যমে যারা টাকা লেনদেন করেন তাদের অনেকেরই আবার অ্যাকাউন্ট নেই। তারা একটি দোকান থেকে আরেকটি দোকানে টাকা পাঠায়। তবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে যাদের মূলধারার ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট আছে তারা খুব প্রয়োজন না হলে এমএফএসে যান না।  

আমাদের সরকারি খাতের কথাই ধরুন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন কিন্তু সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। Better Than Cash Alliance –এর ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি বেতনের মাত্র ৭ ভাগ ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যবহার করে প্রদান করা হচ্ছে। বাকি ৯৩ ভাগের জন্য সরকারি ব্যাংকে মাসের শুরুর দিকে বিশাল লম্বা লাইন পড়ে। অপরদিকে ঢাকার একটি স্মার্ট ব্যাংকের কথা ধরুন, টাকা তুলতে হলে বলবে স্যার আপনি এটিএম থেকে টাকা তুলুন। জমা দিতে হলে আপনাকে বলবে, ‘ডিপোজিট মেশিনে দিন।’ সেখানে কিন্তু চেক জমা দেওয়ার জন্য বিশাল লম্বা লাইন নেই। কারণ অনেক কোম্পানির বেতন সরাসরি অ্যাকাউন্টে যোগ হয়ে যায়। অপরদিকে সরকারি ব্যাংকে চেক জমা দিতে ও টাকা তুলতে একটি বিশাল দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে যেতে হয়, যার ফলে ক্ষতি হচ্ছে শ্রম ঘণ্টা ও কর্ম ঘণ্টার।

বাংলা ট্রিবিউন: ডিএফএস সেবা সম্প্রসারণে আপনাদের প্রতিষ্ঠান কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেড কি ভূমিকা রাখছে?

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: ডিএফএস অনেক বড় একটি ইকোসিস্টেম। সেখানে অনেক প্লেয়ার আছে। কনা কাজ করে সিকিউর ট্রান্সেকশনের অংশটিতে। ব্যাংকে লেনদেন যেন নিরাপদ ও সহজ হয় সেই কাজটিই করে কনা। কনা কার্ড তৈরি করে। যেগুলো গ্লোবাল্লি ভিসা ও মাস্টারকার্ড স্বীকৃত। আমাদের কার্ডের কোয়ালিটিও অনেক ভালো। আমাদের কার্ড দীর্ঘস্থায়ীও। সেই সঙ্গে আমরা কাজ করছি যাতে একজন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে কিভাবে অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে কার্ড দেওয়া যায়। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা যদি করেন তাহলে দেখবেন বাংলাদেশে স্মার্টফোনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একদিন লেনদেন মোবাইল ফোনভিত্তিক হয়ে যাবে। সেখানে থাকবে নিরাপত্তা ইস্যু। ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে মোবাইল অ্যাপ বানাতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সারাবিশ্বে অনেক কম। যার মধ্যে কনা একটি।  

এমন একদিন আসবে যেদিন আমাদের সব লেনদেন অবশ্যই চিপভিত্তিক হতে হবে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য পিন বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। সেখানেও অনেক ফ্যাক্টর থেকে যায়। সব দিক থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল আমরা এটিএম জালিয়াতিগুলো রোধ করতে পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: এটিএম কার্ডের ম্যাধ্যমে লেনদেন সুরক্ষিত করতেও কাজ করছে কনা। বিস্তারিত জানতে চাই।

মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: সারা পৃথিবীই চিপভিত্তিক কার্ডের দিকে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশও সেদিকে হাঁটা শুরু করেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছরের চিপভিত্তিক কার্ডের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বেশি। প্রতি বছর এটি বাড়তে থাকবে। এমন একদিন আসবে যেদিন আমাদের সব লেনদেন অবশ্যই চিপভিত্তিক হতে হবে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য পিন বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। সেখানেও অনেক ফ্যাক্টর থেকে যায়। সব দিক থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল আমরা এটিএম জালিয়াতিগুলো রোধ করতে পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মিনাওয়ার হোসেন তানজিল: বাংলা ট্রিবিউনকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ।
শ্রতি লিখন: এম এম রহমান

 

/এইচএএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী