দেশে তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের সংকট চলছে। আইআইজিগুলোকে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) মোট চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ দিতে পারছে না বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। ফলে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট সেবাদানে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটেও।
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ব্যান্ডউইথ সংকট শুরু হয়। বিএসসিসিএলের কাছে ‘চাহিদা’ জানিয়েও সেই অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে না আইআইজিগুলো। একইভাবে তাদের কাছ থেকে পাচ্ছে না আইএসপিগুলো। ফলে আইটিসিগুলোর (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) ওপর ইন্টারনেট সেবাদাতা পক্ষগুলোর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আইএসপিগুলো নিরবছিন্ন সেবাদানে আইটিসিগুলোকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়ায় তাদের ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেড়ে গেছে।
দেশে আইটিসি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছয়টি। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে ব্যাকআপ সেবা দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৫) বর্তমান সক্ষমতার (অ্যাক্টিভেট ক্যাপাসিটি) পুরোটা ১৩০০ জিবিপিএস প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল।
অপরদিকে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৪-এর সক্ষমতার ৬০০ জিবিপিএসেরও একই অবস্থা। দুটি মিলিয়ে দেশের মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের মধ্যে দুই সাবমেরিন ক্যাবল থেকে আসে ১৮৫০ জিবিপিএস। বাকি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে আইটিসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিএসসিসিএল ৯০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ (সি-মি-উই-৫) সার্কিট আপ (সক্রিয়) হয়েছে। শিগগিরই ৬০০ জিবিপিএস যুক্ত হবে। তখন সি-মি-উই-৫-এর ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা হবে ১৯০০ জিবিপিএস। আগামী মার্চে অবশিষ্ট ৩০০ জিবিপিএস একই ক্যাবলে যুক্ত হবে। ফলে সি-মি-উই-৫-এর ব্যান্ডউইথ দাঁড়াবে ২২০০ জিবিপিএস।
কবে নাগাদ চলমান ব্যান্ডউইথ সংকট দূর হবে জানতে চাইলে বিএসসিসিএলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যান্ডউইথের সংকট নয়, অ্যাক্টিভ ক্যাপাসিটি শেষের দিকে ছিল। আপ করা ব্যান্ডউইথ যুক্ত হলে নতুন চাহিদার ব্যান্ডউইথ দেওয়া সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত অক্টোবর থেকে সাবমেরিন ক্যাবলে কোনও স্পেয়ার ক্যাপাসিটি ছিল না। আমরা চাহিদা জানিয়েও অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ পাইনি। শুনেছি ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনও আমরা পাইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইএসপি ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, ‘আমরা এমনও জানতে পেরেছি বিএসসিসিএল রেশনিং করে চাহিদার বিপরীতে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে। যাদের বিল বকেয়া রয়েছে তাদের না দিয়ে অন্যদের দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে এমনও হয়েছে।’
আইএসপি ব্যবসায়ীর আশঙ্কা, ৯০০ জিবিপিএস মার্চ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের অতিরিক্ত চাহিদা আরও আগেই ছিল। এখন তা বেড়েছে। মার্চ আসতে আমাদের ধারণা ৯০০ ছাড়িয়ে যাবে। তার আগেই বিএসসিসিএলকে নতুন সার্কিট আপ করতে হবে। বিএসসিসিএলের কি সেই সক্ষমতা বা প্রস্তুতি আছে?’
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে এখন যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে তার চেয়েও বেশি চাহিদা রয়েছে। আমরা মাসতিনেক ধরে কম ব্যান্ডউইথ পাচ্ছি। দীর্ঘ সময়েও এর সমাধান হয়নি। শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই ব্যান্ডউইথের সংকট সমস্যার সমাধান হবে।’