X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

সজীবের ফিশিং ট্রলার

ওয়াহিদুল হাসান
২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:২৫আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৩০

সজীব

 

সৌর বিদ্যুৎকে বলা হয় নবায়ণযৌগ্য শক্তি। সবাই জানে, এই শক্তির মূল উৎসই সূর্য। সৌর রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিণত করার কাজটা বাংলাদেশে বহু বছর ধরেই চলছে। গ্রামে-শহরে সোলার বিদ্যুৎ বা সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার।

আমাদের দেশে বিশেষ করে বিদ্যুৎ বঞ্চিত এলাকাতে সোলারের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। যখন ঘরে ঘরে সোলার পৌঁছানোর চেষ্টায় আছে সবাই ঠিক তখন সজীব চক্রবর্তী করলেন ভিন্ন চিন্তা। তিনি সোলারকে নিয়ে গেলেন সমুদ্রের বুকে।

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী হিসেবে সজীব শুরু করেছিলেন তার এই গবেষণা। তিনি চেষ্টা করা শুরু করলেন কী করে উত্তাল সমুদ্রে যারা মাছ ধরেন তাদের জন্য সোলারকে কাজে লাগানো যায়। তার মূল উদ্দেশ্যটাই ছিল ডিজেলে চলা ট্রলারগুলো সমুদ্রের পানিকে ক্রমাগত দূষিত করে চলছে। এটাকে কমানোর চেষ্টা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটা ছিল খরচও যদি কমিয়ে আনা যায়। কারণটা সবারই জানা, সোলার বিদ্যুৎকে পরিবেশবান্ধব হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। 

ট্রলারে কাজ করছেন সজীব

সজীবের সঙ্গে কথা বলেই জানা যায় তার বাড়ি চট্টগ্রামে। সমুদ্রের তীর ঘেষেই শৈশব কেটেছে তার। বহু বছর ধরে তার মনে দাগ কেটেছে জেলেদের অমানবিক জীবন সংগ্রামের চিত্র। তাদের দুঃখ-দুর্দাশা খুব কাছ থেকে দেখেছে সজীব। তার শৈশব মনে প্রায়ই নাড়া দিত যদি কিছু করতে পারতাম তাদের জন্য! তারুণ্যে এসে ঠিকই শৈশবের স্বপ্ন পূরণে নেমে পড়লেন সজীব। তিনি প্রথমেই কথা বলা শুরু করলেন জেলেদের সঙ্গে। তাদের কাছ থেকেই জানতে পারেন, মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে যে ডায়নামার মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয় তার জন্য দৈনিক ১১০-১২০ লিটার জ্বালানির দরকার হয়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর পরিবেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই। সজীব জানালো, যখনই দেখলাম খরচ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতি- দুটি বিষয়ই যুক্ত তখনই মাথায় এলো এটাকে কিভাবে মানুষের জন্য সহজ বান্ধব করা যায়।

ট্রলারে মাঝি

সজীব এরপর নেমে গেলো পুরোদমে মাঠে। সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থীও নিলেন। সার্ভের কাজে তাদের সহযোগিতা তার খুব প্রয়োজন। তার প্রকল্পটির কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজন তথ্য-উপাত্ত। তারা চট্টগ্রাম সদরঘাট সংলগ্ন এলাকায় অভয়মিত্রঘাটে গিয়ে চালায় তথ্য সংগ্রহের অভিযান। সজীব জানালো, প্রায় ২০০ ট্রলারের ওপর তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। সেই ঘাটে নাকি আনুমানিক ২ হাজারের মতো নিবন্ধিত ট্রলার আছে।

এরপর ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি’র ল্যাবে এসে তথ্য-উপাত্তগুলোকে সাজিয়ে শুরু করেন ডিজাইনের কাজ। কী করে ট্রলারে সোলার সংযোগ দেওয়া যায় কিংবা আদৌ দেওয়াটা সাশ্রয়ী হবে কিনা এসব বিষয়ে চলতে থাকে গবেষণা। সজীব পরে ঠিকই তাত্ত্বিক কাজ শেষ করে ফিরে আসেন চট্টগ্রামে। এবার পাইলট প্রজেক্ট করার পালা। একজন মালিকের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি নিয়ে সেই ট্রলারে সোলার স্থাপনের কাজ শুরু করেন। পুরো প্রকল্পটির জন্য তিনি একটি ১২০ ওয়াটের সৌর বিদ্যুতের প্যানেল, একটি চার্জ কন্ট্রোলার, একটি ব্যাটারি এবং ১৫টি এলইডি লাইট ব্যবহার করেন।

ট্রলারে জ্বলছে বাতি

তার প্রকল্পটির জন্য সজীব একটি স্বয়ংক্রিয় চার্জ নিয়ন্ত্রক বানিয়েছেন যেটা ব্যাটারিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় চার্জ করতে সহায়তা করবে।

পুরো সোলার প্যানেল বসানোর পর চলা শুরু করলো ট্রলার। ঠিকই দেখা গেল রাতের অন্ধকারে জ্বলে উঠলো আলো। জেলেদের মুখেও হাসি, তাদের জন্য নাকি বিষয়টি একদমই নতুন। সজীব জানালো তার পুরো প্রকল্পটির পেছনে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা।

তার এই প্রকল্পের পেছনে যেই মানুষটি সর্ব সময় দিয়ে প্রধান তত্ত্বাবধানের কাজ করে গেছেন তিনি আইইউবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রধান এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক। সজীব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘স্যার যদি সহযোগিতা না করতেন তবে সোলারের আলো জ্বলতো কিনা জানিনা। তার উৎসাহ উদ্দীপনা এবং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সব সহযোগিতা আমাকে উৎসাহিত করছে সামনে আরও বড় বড় কাজ করার।’ 

শেষ করতে হচ্ছে সজীব চক্রবর্তীর প্রকল্পটির সুবিধার দিকটি দিয়ে। ট্রলারে বিদ্যুৎ চালানোর জন্য যে ডায়ানামা ব্যবহার করা হয় তার ৫ বছরের মধ্যে বদলে ফেলতে হয়। আর সেখানে সোলার প্যানেল চলবে ২০ বছর। তাছাড়া চার্জ কন্ট্রোলার যেহেতু সঠিক মাত্রার বিদ্যুৎ সরবরাহ সামর্থ্য রাখে সেজন্য ব্যাটারির জীবনকালও বেশি। ডায়ানামার ক্ষেত্রে ব্যাটারি ১ বছরের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়ে। সজীব আরও জানালো, ২০ বছর খরচের হিসাব দেখলে দেখা যায় সোলার প্যানেল বসানোর ফলে খরচ বাঁচবে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা।

বিশাল অংকের এই খরচের সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি তো আছেই। সজীব আসলে নবায়ণযোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে আরও কাজ করতে চান। তার কাছে এই প্রকল্পটিকে আরও বৃহৎ আকারে করা প্রয়োজন। সরকার এগিয়ে এসে দেখতে পারেন।

 এই প্রকল্প সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ইমেইল করতে পারেনঃ [email protected]

/এফএএন/

 

 

 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত, রাজবাড়ীতে রেল যোগাযোগ বন্ধ
মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত, রাজবাড়ীতে রেল যোগাযোগ বন্ধ
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে কিনা, জানা যাবে আজ
অর্থ আত্মসাতের মামলাড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে কিনা, জানা যাবে আজ
হজ এজেন্সিগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই: ধর্মমন্ত্রী
হজ এজেন্সিগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনও মিল নেই: ধর্মমন্ত্রী
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!