X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের অবস্থান, সম্মেলন ও জঙ্গিবাদ

নাদীম কাদির
০৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৩২আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৩৬

নাদীম কাদির ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩৬তম ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন অ্যাসেম্বলি। এখানে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশে ‘বিরুপ পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করে নাম প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান।
ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে এমন টানাপোড়েনের সময় একমাত্র দেশ হিসেবে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করে পাকিস্তান মারাত্মক ভুল করেছে। এটা বোঝা খুব কঠিন নয় যে, ইসলামাবাদের সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশ না নেওয়ার জবাবই দিয়েছে পাকিস্তান।
এছাড়া এতবড় একটি সম্মেলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই শেষ মুহূর্তে সরে এসেছে পাকিস্তান। কিন্তু বিশ্ব তাদের এই পদক্ষেপে ভ্রুক্ষেপ করেনি এবং ঠিকই বাংলাদেশে এসেছে। এটাই বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন।
এই সম্মেলনের কিছুদিন আগেই জঙ্গি হামলার সঙ্গেও পাকিস্তান সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। তাদের কোনও অনুসারী অংশগ্রহণকারীদের আতঙ্কগ্রস্ত করতে এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।
আমি খুশি যে বিশ্ব বুঝতে পেরেছে যে পাকিস্তান আসলে কী ‘বিরুপ’ পরিস্থিতি বোঝাতে চেয়েছিল। সার্ক সম্মেলনের বিষয় অন্যরকম ছিল এবং অনেক দেশই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
আমি এটা ভেবেও আনন্দিত যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা বুঝতে পেরেছে যে সন্ত্রাসবাদ কিংবা জঙ্গিবাদ কোনও নির্দিষ্ট দেশে নয় বরং বৈশ্বিক ইস্যু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছেন।  প্রকৃতপক্ষে তার সরকারই নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছে।
জাতীয় সংসদে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই মোকাবিলা করতে হবে।’
১৩১ টি দেশের ২০৯ নারী সংসদ সদস্য, ৫৩ জন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ও ৬৫০জন সংসদ সদস্য, ১৩৪৮ জন প্রতিনিধি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
ঢাকা কিছুই হারায়নি, বরং অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মনে করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যতবারই কোনও যুদ্ধাপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়, পাকিস্তান বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করে।
এটা আসলে ১৯৭১ সালে তাদের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধেরই কথা বলে। পাকিস্তানের এমন পদক্ষেপ এটাই প্রমাণিত করে যে এইসব যুদ্ধাপরাধীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তারকার মতো ছিল।

বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন হয়তো পাকিস্তানকে সরে থাকার আরেকটি ইস্যু হতে পারে। যদিও সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যাওয়াটাও তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে যেখানে ১৯৭৫ সালে সপারিবারে তাকে হত্যা করে পাকিস্তানের দোসররা।

আমি এর আগেও লিখেছি যে পাকিস্তান তাদের সাধারণ নাগরিকদের কথা শুনলে এই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব। সাধারণ নাগরিকরা ১৯৭১ সালে মানবতা বিবর্জিত অপরাধের কারণে ক্ষমা চায় এবং জামাতে ইসলামীর মতো স্বাধীনতা বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে নিষেধ করে।

তুমি আমার মানুষকে, আমার বাবাকে, আমার মাকে, ভাইকে হত্যা করবে এবং শুধু বাঙালি হওয়ার কারণে আমার বোনদের ধর্ষণ করবে। এরপর কিছু হয়নি ভাব করে অনুতপ্ত হবে না। তোমাদের এই প্রতিকূল অবস্থা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।

আমার অভিজ্ঞতা বলে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেশিরভাগ পাকিস্তানি এখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানে। ইসলামাবাদেরও তাদের নিজস্ব নাগরিকদের কথা শোনা উচিত।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৩২ কুর্দি সদস্যকে হত্যার দাবি তুরস্কের
৩২ কুর্দি সদস্যকে হত্যার দাবি তুরস্কের
পিকআপ চাপায় র‌্যাব সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় চালক গ্রেফতার
পিকআপ চাপায় র‌্যাব সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় চালক গ্রেফতার
মোটরসাইকেলে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশের এসআই নিহত
মোটরসাইকেলে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশের এসআই নিহত
যে গল্পের জন্ম ওষুধের দোকান থেকে!
যে গল্পের জন্ম ওষুধের দোকান থেকে!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ