X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর রিটার্নে সতর্ক থাকা জরুরি

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন
৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:২৬আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:২৬

আয়কর আইন ২০২৩-এ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট ধারা, তফসিল, পরিপত্র এবং এসআরও ইত্যাদিতে স্পষ্ট করা হলেও রিটার্ন প্রস্তুতের সময় অনেক করদাতার জন্য কিছুটা অসুবিধার কারণ হতে পারে। সতর্ক না থাকলে রিটার্নে ভুল তথ্য উপস্থাপিত হতে পারে এবং করদাতা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আয়কর আইন ২০২৩ (২০২৩ সালের ১২নং আইন) পাস হওয়ার পর বেশ কিছু এসআরও জারি করা হয়েছে।

সর্বশেষ আয়কর পরিপত্রও এসেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে করদাতাগণ নানান  বিষয়ে জানতে চান। সে আলোকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করা হলো।

স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোতে বিনিয়োগ:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদিত খাতের মধ্যে অন্যতম খাত হলো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলোতে বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার কর রেয়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতে যেকোনও করদাতা শেয়ার বা স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ-ট্রেজারি বন্ড, করপোরেট বন্ড, সুকুক, ইটিএফ, ডিবেঞ্চার এবং অ-তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। এই বিনিয়োগ থেকে করদাতা কর ছাড় যেমন আছে, তেমনি মূলধনী আয়ের ও নগদ লভ্যাংশ বা মুনাফা পেয়ে থাকেন।

শেয়ার বাজারে করদাতার বিনিয়োগ ও আয় যথাযথভাবে আয়কর রিটার্নে উপস্থাপন জরুরি। করদাতাকে তার নিজ নিজ বিনিয়োগ সহায়ক ব্রোকার হাউজ থেকে আয় বছরের জন্য আয়কর সনদপত্র বা লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিবরণী বা হিসাববিবরণী বা লেজার সংগ্রহ করতে হবে এবং তা রিটার্নের সাথে সংযুক্তি হিসেবে দিতে হবে। আয়কর রিটার্ন “আইটি-১১গ (২০২৩)”-এর তফসিল ৫-এ আয়-বছরে করদাতার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রদর্শন করবেন।  

কর অব্যাহতি: আয়কর আইন ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিল শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয়কে করমুক্ত রাখা হয়েছে। পূর্বে “এসআরও নং ১৯৬-আইন/আয়কর/২০১৫”-এর মাধ্যমেও সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্যান্য যেকোনও সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেন বা হস্তান্তর থেকে অর্জিত মূলধনী আয় সাধারণ করদাতাদের জন্য সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি দেওয়া ছিল।

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাগণ শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগ বিশেষ করে শেয়ার বা স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি সিকিউরিটিজ থেকে অর্জিত বিনিয়োগ আয় আগের মতো করমুক্ত সুবিধা পাবেন। বর্তমানে আয়কর রিটার্ন “আইটি-১১গ-২০২৩” কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের সাথে যুক্ত করে প্রদর্শন করবেন।

মূলধনী ক্ষতির সমন্বয় করার বিধান: আয়কর আইন ২০২৩-এর ৭০ ধারা মোতাবেক যেকোনও মূলধনী ক্ষতি মোট আয়ের সাথে সমন্বয় করা যায় না। এ জাতীয় ক্ষতি সংশ্লিষ্ট মূলধনী আয়ের বিপরীতে সমন্বয় করতে হয়। এক্ষেত্রে করদাতাগণ আয়কর রিটার্ন “আইটি ১০বি-২০২৩”-এর পরিসম্পদ দায় ও ব্যয় বিবরণীর ৪(খ)-এ প্রদর্শন করবেন।

বিনিয়োগের মুনাফার ওপর কর প্রয়োগ ও রিটার্নে প্রদর্শন: আয়কর আইনের ১৬ ধারা মোতাবেক সিকিউরিটিজের সুদ বা মুনাফা থেকে ৫ শতাংশ ও ১১৭ ধারা মোতাবেক লভ্যাংশের ওপর ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বা টিন না থাকলে ১৫ শতাংশ এবং কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান আছে। সাধারণ করদাতার এই ধরনের আয় থাকলে করযোগ্য আয়ের সাথে পৃথক রো’তে যোগ করে দেখাবেন এবং নিয়মিত হারে করদায় হিসাব করবেন।

তবে আবশ্যিকভাবে মোট করদায় থেকে উৎসে কর্তনকৃত কর সমন্বয় করবেন। আয়কর রিটার্ন “আইটি-১১গ-২০২৩”-এ মোট আয়ের বিবরণীতে ‘আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয়’ অংশে প্রদর্শন করতে হবে।

সঞ্চয়ী হিসাবের সুদের আয় ও কর প্রদর্শন:  যেকোনও তফসিলি ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব বা এসএনডি হিসাব বা শেয়ার বাজারের জন্য বিও হিসাব বা সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত হিসাব থাকলে এবং এই সকল হিসাবের স্থিতির ওপর নির্দিষ্ট মেয়াদে আয়কর আইনের ১০২ ধারা মোতাবেক অনুযায়ী সুদ বা মুনাফা প্রদানের ওপর উৎসে ১০ শতাংশ, তবে কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করে থাকে। করদাতার এই জাতীয় আয় থাকলে আয়কর রিটার্নে করদাতার ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত সুদ আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয় অংশে প্রদর্শন করতে হবে। এবং ব্যাংক হিসাব বিবরণী বা ব্যাংক থেকে সংগ্রহকৃত আয়কর সনদ রিটার্নের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।  

বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে, এসআরও নং ২৫৩-আয়কর/আইন-২০২৩-এর মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে অর্জিত সুদের ওপর উৎসে কর্তনকৃত করই চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা হবে। অন্য সকল খাতের সুদ নিয়মিত আয়ের সাথে যোগ করে মোট করযোগ্য আয় নির্ধারণ করতে হবে এবং উৎসে কর্তনকৃত আয় সমন্বয় হবে। পূর্বে এসব খাতে প্রাপ্ত সুদের ওপর কর্তনকৃত করই ছিল চূড়ান্ত করদায়। আয়কর আইন ২০২৩-এ তা বাতিল করা হয়েছে।

সম্পত্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্জিত মূলধনী আয়ের ওপর করদায়: আয়কর আইন ২০২৩-এর সপ্তম তফসিল মোতাবেক মূলধনী আয়ের ওপর করহার ১৫%-ই হবে চূড়ান্ত করদায়। কোম্পানি ছাড়া অন্যান্য করদাতার ক্ষেত্রে হস্তান্তরিত মূলধনী পরিসম্পদ প্রাপ্তি বা অর্জনের পর থেকে অনধিক ৫ বছর হলে মোট আয়ের সাথে যোগ হবে এবং নিয়মিত হারে কর প্রদান করতে হবে।

আয়কর আইনের ১২৫ ধারায় জমি, ফ্ল্যাট, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর ও কোনও স্থাপনা নিবন্ধনে উৎসে পরিশোধিত কর চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা হবে, যা জমি হস্তান্তর থেকে মূলধনী আয় এসআরও নম্বর ২৮৬-আইন/আয়কর-১৬/২০২৩, তারিখ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ দ্বারা চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিধান চলমান আছে। এই ধরনের সম্পত্তি বিক্রি জনিত মূলধনী আয়ের ওপর বিক্রেতাকে অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হবে না। আয়কর রিটার্ন “আইটি-১১গ-২০২৩” মোট আয়ের বিবরণী এর ৫নং কলামে মূলধনী আয় হিসাবে প্রদর্শন করতে হবে।

সঠিক আয়কর নথি উপস্থাপনে এই বিষয়গুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে লক্ষ রাখতে হবে।

লেখক: কর আইনজীবী, ঢাকা
[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ, কারখানার মালিকের কারাদণ্ড
বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ, কারখানার মালিকের কারাদণ্ড
লিগের মাঝপথে গোপনে কানাডায় কেন বাংলাদেশি ফুটবলার!
লিগের মাঝপথে গোপনে কানাডায় কেন বাংলাদেশি ফুটবলার!
বাঁচতে হলে জানতে হবে
বাঁচতে হলে জানতে হবে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ