X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগে নিরাপত্তা

তুষার আবদুল্লাহ
১১ জুন ২০১৬, ১২:৩৯আপডেট : ১১ জুন ২০১৬, ১২:৪৩

তুষার আবদুল্লাহ শুক্রবার সকালে রামকিঙ্করে বুঁদ হয়েছিলাম। উষ্ণ আবহাওয়ার মাঝেও প্রশান্তির সামিয়ানা ছিল শান্তি নিকেতনে। সিদ্ধার্থ ও সুজাতার রসায়ন নিয়ে ঈর্ষায় পুড়তে পুড়তেই পৌঁছে যাই শ্রীমতি সবুজ কলির দফতরে। বিশ্বভারতীর অন্যতম পরিচালক তিনি। রবীন্দ্রনাথের নানা গানের দর্শনরূপ নিয়ে আড্ডা জমে ওঠে। হঠাৎ তিনি জিজ্ঞেস করে ওঠেন- ঢাকার কী অবস্থা এখন বলুন তো? যখনই ঢাকায় যেতে চাই, তখনই নিরাপত্তা নিয়ে একটা গোলমাল বাঁধে। আমি শ্রীমতি সবুজ কলির দিকে একবার তাকাই, আরেকবার চোখ রাখি সময় সংবাদের অ্যাপসে। সেখানে তখন ব্র্যাকিং যাচ্ছে, পাবনায় ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সেবক নিত্যনদ্য পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতক্ষণে আমি জেনে গেছি দর্শনের এই অধ্যাপক রামকৃষ্ণের ভক্ত এবং সেবক। তাকে আতঙ্কিত না করে শুধু বললাম- দিদি একটু সবুর করেই ঢাকায় আসুন।
ঢাকা ছাড়ার পর ভিন দেশে বসে এ পর্যন্ত চারটি হত্যার খবর পেলাম। যার মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু হত্যাও রয়েছে। খবরের মাঝে এও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী সকল তথ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে জঙ্গি নির্মূলে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু চারটি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের আটক বা গ্রেফতারের কোনও খবর পাইনি। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা ঘটনার পর ভেবেছিলাম বিচ্ছিন্নতার গল্প থেকে বুঝি মুক্ত পেলাম। কিন্তু না, দেখছি বিচ্ছিন্নতার মালা বেশ পক্ত করেই গাঁথা হয়েছে। ছিড়ছে না কিছুতেই।
কুয়ালালামপুরের জালান বুলানে যে তরুণ টুস্যু রুটি পরিবেশন করলো, তার প্রশ্ন ছিল- বিচ্ছিন্নতার মানে কী? সব মানুষরে তো একভাবেই জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে। তবু সরকার কেন হত্যাকারীদের খুঁজে পায় না। সঙ্গের আরেক তরুণ বলল- বায়োমেট্রিক করে তো লাভ হলো না- হত্যা, হুমকির এসএমএস তো চলছেই। তাহলে বায়োমেট্রিক করে লাভ হলো কি? রহমত নামের আরেক তরুণ এসে জানতে চাইলো- এবার ঈদ করতে দেশে আসা ঠিক হবে কিনা?
এখন কী উত্তর দেবো? কোনও উত্তরের যে আজকাল কী মানে হয় জানি না। সিঙ্গাপুর, পেনাঙ, কুয়ালালামপুর যেখানেই কাজ করছে বাংলাদেশিরা, সেখানেই একই কথা- বাংলাদেশ সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। কাজের দক্ষতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ সবার ওপরে। কিন্তু দেশে এবং দেশের বাইরে যেভাবে বাংলাদেশিরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বা করা হচ্ছে, এতে চাকরিদাতারা আর বাংলাদেশিদের প্রতি আস্থায় রাখছেন না। কেবল বেসরকারি চাকরিদাতারাই নন, ওই রাষ্ট্রগুলোর ভাবনাতেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে নেই। ফলে চাকরির বাজারে শঙ্কা বাড়ছে।
মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো বাজার ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশিদের জন্য। যে অভিযোগ বা কারণে বাজার শঙ্কায় পড়েছে, তার প্রভাব বিশ্বের অন্য শ্রম বাজারগুলোতেও পড়ছে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব সুখকর হবে না।

বাংলাদেশ এখন যে অবস্থাতে আছে, তাতে কেবল প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হবে না, ওষুধও সেবন করতে হবে। তাই শুধু দায় এড়ানোর বক্তৃতা নয়, বিচ্ছিন্নতার মন্ত্র নয়, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সাঁড়াশি অভিযান নয়, সমস্যাকে স্বীকার করে নিয়ে প্রকৃত হুকুমদাতা ও জড়িতকে ধরতে হবে।

বিচার প্রক্রিয়ায় আনতে হবে অপরাধীদের। একইসঙ্গে কূটনীতিতে সক্রিয় থাকতে হবে।

কোনও এক বা একাধিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকা নয়। সকল শ্রমবাজারের রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ রাখতে হবে।

কুয়ালালামপুরের পুত্রাজায়াতে আকাশছোঁয়া ভবন তৈরি হচ্ছে। সেখানে শত বাংলাদেশি কাজ করছে। সময়টা ছিল ইফতারের। বাংলাদেশি শ্রমিকরা নেমে আসছেন। কারও কারও সঙ্গে কুশল বিনিময় হলো। আমার চোখ তাদেরকে ডিঙিয়ে একটা সাইনবোর্ডে আটকে গেলো। সেখানে লেখা- নিরাপত্তাই প্রথম। সেই সময় আমার খুব করে যেন মনে হলো- কথাটা আমাদের সরকারের জন্য, জনগণের জন্য ভীষণ প্রযোজ্য এখন। ঠিক বললাম তো?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি
আরও পড়তে পারেন: ক্রসফায়ারের মুখেও বেপরোয়া জঙ্গিরা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ