X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১
৬ দিনে ৪ খুন

ক্রসফায়ারের মুখেও বেপরোয়া জঙ্গিরা

জামাল উদ্দিন
১১ জুন ২০১৬, ০০:৫৫আপডেট : ১১ জুন ২০১৬, ২২:০৫

ক্রসফায়ার জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযান ও ক্রসফায়ার। এরপরও জঙ্গিরা থেমে নেই। তারাও একের পর এক হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গত ছয়দিনে চট্টগামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গিদের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন ৪ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রসফায়ার কিংবা বলপ্রয়োগ করে টার্গেট কিলিং কিংবা জঙ্গি হামলা ঠেকানো যাবে না। এ জন্য  আগে দরকার জাতীয় ঐক্য ও ধর্মীয় উগ্রবাদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা। 

গত রবিবার চট্টগ্রামে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ওইদিনই একই কায়দায় নাটোরে খুন হন খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ। এর একদিন পর মঙ্গলবার ঝিনাইদহে খুন হন হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী। সর্বশেষ শুক্রবার (১০ জুন) সকালে একই পদ্ধতির সিরিয়াল কিলিংয়ের শিকার হন পাবনার হেমায়েতপুরের শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডে। এ সব হত্যাকাণ্ড পূর্ব-পরিকল্পিত ও টার্গেট কিলিং। তবে, পান্ডে হত্যাকাণ্ডকে বিশেষ অভিযানের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন না পুলিশ কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার থেকেই পুলিশ রাজধানীসহ সারাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পুলিশের এই বিশেষ অভিযানে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক ও গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জেএমবি’র জঙ্গিসহ নিহত হয়েছেন ৯ জন।  কিন্তু তাতেও থেমে নেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা। আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। বিশেষ অভিযানের মধ্যেই পাবনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পান্ডে হত্যাকাণ্ড সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর ধারাবাহিক ঘটনা বলেই মনে করছে পুলিশ।

টার্গেট কিলিংয়ের শিকার মাহমুদা খানম মিতু, সুনীল গোমেজ, আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যাকাণ্ডের কোনও কূল-কিনারা হওয়ার আগেই খুন হন নিত্যরঞ্জন পান্ডে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল খুনিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি মাজারের সেবক আবু নসর গুন্নু, মাইক্রোবাস চালক জানে আলম ও মনির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে গ্রেফতারকৃত তিনজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

ঝিনাইদহের হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত ও কারণ জানা গেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজহার আলী শেখ জানান, পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। কারণও জানা গেছে। গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য,গত মঙ্গলবার সকালে গাঙ্গুলীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের পর আইএস দায় স্বীকার করলেও পুলিশ বলছে, আইএস নয়, স্থানীয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

অন্যদিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ার খ্রিস্টানপাড়ার মুদি ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যা মামলায় আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে সবুজ আলী নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি সুনীলের বাড়ির ভাড়াটিয়া। সবুজ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে।

পুলিশের বিশেষ অভিযানের মধ্যেও জঙ্গি হামলায় মানুষ খুন হওয়ার বিষয়ে পুলিশের শীর্ষ কোনও কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পান্ডে হত্যাকাণ্ড পুলিশের বিশেষ অভিযানের জন্য চ্যালেঞ্জ কিনা—জানতে চাইলে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এমনটা মনে করি না। তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তেই জানা যাবে কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। উদ্ঘাটিত হবে এ ঘটনার রহস্যও। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা যায়নি।

ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (আইক্ল্যাডস)-এর নির্বাহী পরিচালক স্ট্র্যাটেজি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যতক্ষণ শক্তি আছে, ততক্ষণ তারা সরকারি বাহিনীর আক্রমণের মুখে পাল্টা হামলা চালাবেই। এটি জঙ্গিদের একটি স্বাভাবিক চরিত্র। এছাড়া বিশেষ অভিযানের মধ্যে গুপ্ত হত্যা হবে না এটি মনে করারও কোনও কারণ নেই।

মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ আরও বলেন, সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী কারা টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত সেটা সরকারি বাহিনীতো জানছেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গি ও ইসলামি রাজনৈতিক দল এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মধ্যে আঁতাতের ফসলই হচ্ছে আমাদের জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদকে আলাদাভাবে দেখা যাবে না। এটি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। কারণ, তাদের হাতেই জঙ্গিবাদের চাবিকাঠি রয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিশেষ অভিযান চালিয়েও ধর্মীয় জঙ্গিদের থামানো যাচ্ছে না। শুক্রবারও একটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি মূলোৎপাটন করতে হলে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। তার ওপরই নির্ভর করবে সফলতা। ক্রসফায়ার বা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালিয়ে এ সংকটের সমাধান হবে না। বিষয়টি রাজনৈতিক। এ সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য দরকার। এজন্য জনগণকে  সচেতন করতে হবে।

/এমএনএইচ/আপ-এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সব হজযাত্রী ভিসা নিয়ে সঠিক সময়েই হজে যাবেন: ধর্মমন্ত্রী
সব হজযাত্রী ভিসা নিয়ে সঠিক সময়েই হজে যাবেন: ধর্মমন্ত্রী
শোরুম উদ্বোধন করতে যাওয়া সাকিবকে দেখতে গিয়ে স্কুলছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট
শোরুম উদ্বোধন করতে যাওয়া সাকিবকে দেখতে গিয়ে স্কুলছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট
সাবেক এসপি সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
সাবেক এসপি সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্র, ২ ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা আটক
জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্র, ২ ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা আটক
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল