X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের বুঝি কোনও দেশ নেই?

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ জুন ২০১৬, ১১:০৮আপডেট : ১৯ জুন ২০১৬, ১১:২১

তুষার আবদুল্লাহ আমরা কি ধীরে ধীরে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছি, হয়ে পড়ছি দেশহীন? যে জমিনটিতে অঙ্কুরোদগম হয়েছে আমাদের, তার প্রকৃতি, আলো-বায়ুকে আমরা নিজস্ব ভাবতে পারছি না। কিংবা সেই জমিনের উর্বরতা, প্রকৃতির উচ্ছ্বলতা তুষ্ট করতে পারছে না আমাদের। এই বোধ নিয়ে অনেকেইতো প্রবাসী হয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা জমিনে পড়ে আছি তাদের ভাবনায়, যাপিত জীবনে বাংলাদেশ কোথায়? মানুষের জীবনকে যাপন করার রীতি বা চর্চাই সংস্কৃতি, সেখানে আমরা কতোটুকু পাচ্ছি বাংলাদেশকে? আমরা গান, নাটক, চলচ্চিত্র, সাহিত্য সব কিছুর জন্যইতো ভিন্ন দেশের কাছে সমর্পিত হয়ে আছি। আমাদের বিনোদন দিতে দেশের কুড়ি খানেক চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেলগুলোতে ভালো গল্পের, ভালো নির্মাণের নাটক, টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক প্রচার হয়। কিন্তু বছর জুড়ে আমাদের রিমোট সেই অনুষ্ঠানগুলো খুঁজে পায় না। ঈদে শ’তিনেক নাটক তৈরি হয়, উৎসবের দিনগুলোতেও আমরা নিজেদের চ্যানেলের কাছে ফিরে আসি না।
প্রতিবেশি দেশের চ্যানেলে আমরা যে বুঁদ হয়ে থাকি, তার ক্ষতি কেবল টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেই পোহাতে হচ্ছে তা নয়। সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের কাঠামো ভেঙে পড়ছে। তৈরি হচ্ছে বিদেশমুখিতা বা নির্ভরতা। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাজার দখলের একটি কৌশল রয়েছে। যে কৌশলে প্রতিবেশি দেশ পেয়েছে ষোলআনা সাফল্য। তাদের সিরিয়ালগুলোকে তারা বাংলাদেশের ক্রেতাদের পণ্য ভোগে প্রলুব্ধ করেছে। বাংলাদেশের ক্রেতারা সেই প্রলোভনের ফাঁদে ধরা দিয়েছে স্বেচ্ছায়। ফলে এখন ঢাকার ঈদ বাজার দিলওয়ালে, বাজিরাও মাস্তানি, বজরঙ্গি ভাইজান, শিবা, ভুতি বা কার্টুন চরিত্রের নামের পোশাকে সয়লাব হয়ে গেছে। সঙ্গে আছে সিরিয়ালের নায়িকা বা চরিত্রগুলোর পরিধানের শাড়ি, পাঞ্জাবি। বাদ যাচ্ছে না অলঙ্কার। শাড়ি ও অন্যান্য কাপড়ের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত ভারতীয় ও পাকিস্তানির বাইরে খুব একটা যেতে চাচ্ছে না। নিম্নমধ্যবিত্ত ওই দেশের নামীয় পোশাক পেলেই খুশি। সেই পোশাকের অনেকটা দেশে তৈরি হচ্ছে। দেশিয় বুটিক হাউজগুলো প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে সেই সিরিয়ালের নকশা ও কাপড় ব্যবহার করছে। আমাদের নিজেদের রাজশাহী, টাঙ্গাইল, রূপগঞ্জ, মনিপুরী ঐতিহ্য হেরে যাচ্ছে টিভি সিরিয়ালের পোশাকের কাছে। অনলাইনে পোশাকের ব্যবসাটাও জমজমাট। সেখানেও দেখতে পাই পাক-ভারত থেকে আমদানি করা পোশাকের ভিড়।
শুধু পোশাক ব্যবসায়ীদেরকে বলছি কেন? খবর পাচ্ছি এবং গত কয়েকটি ঈদেও দেখতে পেয়েছি ঈদ উৎসবে দর্শক ধরে রাখতে ভারতীয় সিরিয়াল অনুকরণে এখানে তৈরি হচ্ছে নাটক বা সাতদিনের ঈদ ধারাবাহিক। ঈদের লাইভ মিউজিকের নামে বাংলাদেশি সংগীত শিল্পীদের বদলে আনা হচ্ছে ভারতীয় শিল্পী। তার মানে আমাদের চিন্তা ও অস্তীত্বের জায়গায় বাংলাদেশ কি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে আসছে?

প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ কি এখন কেবলই ক্রিকেটীয় আবেগ প্রকাশের উচ্চারণ? বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে লাল-সবুজ পোশাক পরাতেই বাংলাদেশ, মাতৃভূমিকে নিয়ে ভাববার দিগন্ত? সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো কেবলই পোশাকি হয়ে যাচ্ছে। জীবন চর্চায়, চিন্তায় তার কোনও উপস্থিতি নেই। এই অনুপস্থিতিগুলোই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের জমিন থেকে আমাদের আলগা করে দিচ্ছে। আমরা দেশহীনতায় ভুগছি। নিজের দেশ নিয়ে গর্ব করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। পরদেশ, পরসংস্কৃতিকে ভাবছি শ্রেষ্ঠত্বের, উন্নত শ্রেণিতে উত্তরণের উপায়। কিন্তু যার নিজ বলে কিছু নেই। যার চোখের জমিনে নিজের দেশের ছায়া পড়ে না। সে দেশহীনতায় ভোগে। তার পরিচয় গিয়ে ‘উদ্বাস্তু’। আমরা কি সেই উদ্বাস্তু  জীবনের কাছে নিজেদের সঁপে দেব? এখনও বুঝি ভাববার অবসর আছে... আসুন ভাবি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আরও পড়তে পারেন: বাবা দিবসের বিশেষ ফিচার: বনস্পতির ছায়ায় এক জীবন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ