X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষকে টেকসই হতে হবে

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪২আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪৬

তুষার আবদুল্লাহ রোবটও নাকি মানুষের চেয়ে মানবিক। নিজেকে মানবিকতার খাদের কিনারে দেখতে পেয়ে, মানুষই অ্যানিমেশন ছবিগুলোতে দেখাচ্ছে মানুষের চেয়েও রোবট সৃজনশীল হয়ে উঠেছে। মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতির ঘাটতি মেটাচ্ছে রোবট। এখানেই প্রশ্ন, তাহলে মানুষের কি মৃত্যু হলো? মানব সভ্যতাকে বিলীন করে দিয়ে আসছে রোবট সভ্যতা। মানুষ আর মানুষের মতো নেই। একথাটি যখন বলা হয়- তখন তার ভেতরের কথা হলো, মানুষের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে মানবিকগুণাবলী। কিছুদিন আগেও বলা হতো মানুষ রোবটের মতো হয়ে গেছে। এখন বলা হচ্ছে রোবটের চেয়েও অবনতি ঘটছে মানুষের। মানুষ এখন বিক্রেতা। মানুষ এখন পণ্য। সে বিক্রি হতে চায়। বিক্রি হওয়ার জন্য সে উন্মুখ। মানুষ নামে যার পরিচয়, সেই প্রাণীটি কখনও একলা থাকার কথা নয় সেতো সামাজিক জীব ছিল। নিজেকে নিয়ে তার ভাবনা ছিল না। মানুষ ছিল স্পর্শকাতর। প্রেম, ভালোবাসা, দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় মানুষ পীড়িত হতো, উদ্ভাসিত হতো। এখনকার মানুষ যেন জড় পদার্থ। কোনও রীপু তাকে আদ্র করে না। তার ভাবনায় ঘুরপাক খায় কতোটা ভালো ক্রেতা সে, কতোটা ভালো বিক্রেতা সে, এবং অবশ্যই যুৎসই পণ্য হিসেবে বাজারে তার চাহিদা কতোটুকু?
মানুষ যখন পণ্য হলো, তারপর থেকেই সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। আসলে হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। দৃষ্টি বলতে আমরা যা বুঝি, সেই চোখ থাকলে মানুষ সুন্দর দেখলে আন্দোলিত হয়ে উঠতো, প্রেমে ভেসে যেতো। কারো দুঃখ দেখলে, কোনও অনিয়ম দেখলে মানুষ বেদনার্ত এবং লজ্জিত হতো। কিন্তু পণ্যের সেই চোখ থাকলে চলে না। তার চোখ আছে, সেই চোখে ঈর্ষার কর্ণিয়া লাগানো। এই কর্ণিয়া এক পণ্যের সঙ্গে অন্য পণ্যের তফাৎটা দেখায় শুধু। আমরা চলার পথে, কাজের ভিড়ে অসংখ্য মানুষের মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিদিন। হয়তো দেখি আমাকে কেউ দেখছে ফ্যালফ্যাল করে। একজন নয় অসংখ্য মানুষই তাকিয়ে দেখছে আমাকে। আমি দেখছি তাদের। আসলে কিন্তু আমরা কেউ কাউকে দেখছিনা। শুধু তাকিয়ে আছি। এই তাকিয়ে থাকাটি দেখা নয় এইজন্য যে, আমরা ওই মানুষগুলোর কষ্ট, আনন্দ, নিঃসঙ্গতা, বিপন্নতাকে দেখতে পাচ্ছি না। চাইছিনা বলেই দেখতে পাচ্ছি না। এবং একে অপরের কাছে পৌঁছতে পারছি না । এই সংযোগ বিচ্ছিন্নতাই মানবসভ্যতার বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠেছে।
মানুষ মানুষকে ব্লক করে দিয়ে প্রযুক্তি এবং পণ্যের সঙ্গে ‘বন্ধু এবং পারিবারিক’ সম্পর্ক বেঁধেছে। এখানে হৃদয়ের কোনও রসায়ন তৈরি হচ্ছে না। মানুষ পণ্য ও প্রযুক্তিতেও বিস্মিত হচ্ছে বটে, সেই বিস্ময় তার হৃদয় ও মস্তিস্কে শেকড় গাড়ছে না। কারণ মুহূর্তে মুহূর্তে প্রযুক্তি নতুন নতুন পণ্য দিয়ে  মানুষকে চমকে দিচ্ছে। একজন মানুষের সরল হাসিমাখা মুখের সঙ্গে কোনও পণ্যের বিষয়ের তুলনা চলে? কিন্তু মানুষ পণ্যের অবিরাম বিস্ময়ের চক্রে পড়ে বিস্মিত হতেই ভুলে গেছে। মানুষ ভুলেই গেলো পাতার ওপর রোদের লুকোচুরি দেখে মুগ্ধ হতে। মানুষের মুগ্ধতা এখন প্রযুক্তি মুঠো বাক্সে। এই মুগ্ধতায় হৃদয়ের স্পর্শসুখ নেই। একপাক্ষিক মুগ্ধতা। এধরনের মুগ্ধতার পরিণতি বিভৎসতায়। মানুষকে আত্মপ্রেমিক করে তোলে। মানুষতো তাই হয়েই গেছে। নিজেই নিজের প্রেমে হাবুডুবু। অন্যের কাজ, সৃষ্টি, সুন্দর তার কাছে অন্ধকার হয়ে ধরা দেয়। ঈর্ষার কর্নিয়া নিয়ে ছুটে চলা মানুষ আসলে অন্ধ। এই অন্ধত্ব নিয়েই সে প্রাপ্তির পাহাড়-পর্বত ডিঙাতে চায়। নির্মম বাস্তবতা হলো এই অভিযানে নিশ্চিত ভাবেই অভিযাত্রী করুণ মৃত্যু হবে।

আমার বিশ্বাস মানুষ ওই মৃত্যু যাত্রা থেকে ফিরে আসবে। গোলকের অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষ বিলুপ্ত হবে না। সাময়িকভাবে মানুষ হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে। হয়তো নিজের পরিচয়ও এই মুহূর্তে তার কাছে অজ্ঞাত। কিন্তু তাকে ফিরতে হবে মানুষের কাছেই। মানুষ পরিচয়ে। তার এই ফিরে আসার জন্য প্রয়োজন পরিচর্যা। মনকে মানুষ রেখে দিয়ে এসেছে যে কোন কুঠুরিতে। সেই কুঠুরিতে রাখা বাক্স থেকে মনটাকে বের করে আনতে হবে। সোনার কাঠি দিয়ে জাগিয়ে তুলে, একটু পরিচর্যা করলেই দেখা যাবে, মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠছে মানুষের জন্য। মানুষ ছাড়া মানুষের মুক্তি আর জয়গান কার কণ্ঠে উচ্চারিত হবে? মানুষ আসবে মানুষের কাছে আসুন হৃদয় পেতে রাখি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ