X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন শাহীদা, পূরণ হয়নি যে আশা

জামালপুর প্রতিনিধি
১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২

লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে মাত্র আট বছর বয়সে ঢাকায় হারিয়ে যান শাহীদা আক্তার। অনেক খুঁজেও মেয়ের সন্ধান পাননি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দিকপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতি। দীর্ঘ ২৭ বছর পর শাহীদা ঠিকই ফিরে এসেছেন জন্মভিটায়। কিন্তু তত দিনে সন্তানশোকে কেঁদে কেঁদে বিদায় নিয়েছেন দরিদ্র মা-বাবা। তাই বড় বোনকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদলেন অঝোরে।

রবিবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যখন বাড়িতে আসেন শাহীদা, তখন বড় বোন খালেদা বেগমের চোখ দিয়ে পড়তে শুরু করে পানি। একে অপরকে দেখে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে কাঁদেন গননবিদারী কান্না। মুহূর্তেই পরিবেশ হয়ে ওঠে আবেগঘন। কাঁদতে থাকেন আশপাশের মানুষও।

শাহীদা আক্তারের মা-বাবা মারা গেছেন বছর চারেক আগে। বর্তমানে শাহীদা বড় বোন খালেদার বাড়িতেই উঠেছেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির অভাব-অনটনের সংসার ছিল। গ্রামে তেমন কোনও কাজকর্ম ছিল না। তাই ১৯৯৭ সালে সন্তানদের নিয়ে চলে যান রাজধানী ঢাকার উত্তরায়। সেখানে ছোট খুপরিতে বসবাস শুরু করেন। তার বাবা রিকশা চালাতেন।

কয়েক দিন পর ছোট্ট শাহীদা বাসা থেকে বের হন লাকড়ি কুড়াতে। কিন্তু দিন গড়িয়ে গেলেও শাহীদা বাসায় ফিরে আসেননি। তার মা-বাবা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তার সন্ধান পাননি। নিখোঁজ হওয়ার পর কীভাবে যেন শাহীদা চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেন। একসময় গৃহকর্তারা শাহীদাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন।

পরবর্তী ঘটনা জানতে চাইলে শাহীদা আক্তার বলেন, ‘আমি জীবনেও কল্পনা করিনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারবো। আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবো। প্রায় সময় বাবা-মা ও পরিবারের কথা মনে পড়তো। কিন্তু ছোটবেলার তেমন কিছুই মনে পড়তো না। সম্প্রতি আমার মেয়ে নানা-নানির কথা জানতে চাইল। মেয়ের নানা রকম জিজ্ঞাসায় হঠাৎ বকশীগঞ্জের দিকপাড়া নামটি মনে পড়ে গেল। তখন থেকে দিকপাড়া গ্রাম খুঁজতে থাকি। মা-বাবাকেও দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই এই গ্রামে চলে আসি।

নিজের পরিবার ও বাড়ি ঠিকই খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমার পূরণ হলো না মনের আশা। কারণ তারা মারা গেছেন। বোন ও ভাইসহ পরিবারের অন্য সবাইকে পেয়েছি কিন্তু মা-বাবা বলে ডাকতে না পারার কষ্ট থেকেই গেল বলেই কেঁদে ওঠেন শাহীদা।

হারিয়ে যাওয়া বোনকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত বড় বোন খালেদা বেগম বলেন, ‘বাবা-মার সঙ্গে আমরা সবাই ঢাকায় চলে গিয়েছিলাম। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে শাহীদা হারিয়ে যায়। তারপর তার আর কোনও সন্ধান পাইনি। তাকে ফিরে পাবো কখনও চিন্তাও করিনাই। এতগুলো বছর পর বোনকে পেয়ে আজ ঈদের আনন্দ মনে হচ্ছে।’

প্রায় ২৭ বছর পর পরিবার তাদের সদস্যকেকে ফিরে পেয়েছে, এমন ঘটনায় গ্রামের সবাইও আনন্দিত। আর এই খবর ছড়িয়ে গেছে যতদূর, তত দূর থেকে শাহীদাকে এক পলক দেখতে তাদের বাড়িতে ভিড় করেন মানুষ।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
বালুবাহী বলগেট থেকে নদীতে পড়ে শ্রমিক নিখোঁজ
আড়াই শতাধিক মানুষের তৃষ্ণা মেটালেন জবি শিক্ষার্থীরা
রাজশাহীতে পদ্মা নদী থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড