আজ ১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তানি বাহিনী। তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীন হয় নড়াইল জেলা।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও ঐহিত্যের দ্বিতীয় জেলা এটি। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদসহ এ জেলায় রয়েছে বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ছয়জন বীরযোদ্ধা। দিনটি পালন উপলক্ষে নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২৪ নভেম্বর মুক্ত হওয়া কালিয়া থানা ও ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হওয়া লোহাগড়া থানার মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে ৯ ডিসেম্বর নড়াইল শহরের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থান করে আক্রমণ শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় তুমূল সংঘর্ষ। এসময় পাকিস্তানি বাহিনীর দুই সেন্ট্রি (সৈনিক) নিহত হলে অধিনায়ক বেলুচ কালা খান সারেন্ডার সারেন্ডার বলে চিৎকার শুরু করে। এরপর কালা খান ২২ জন পাকিস্তানি সেনা ও ৪৫ জন স্থানীয় রাজাকার বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাগল হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৎকালীন নড়াইল মহাকুমা ছাত্রলীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ূন কবীর এবং মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএম ফজলুর রহমান জিন্নাহ জানান, মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্ত দিবস পালন করা হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লোহাগড়া ইউনিটের কমান্ডার মফিজুল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা ও মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যায় নড়াইল বাংলাদেশের দ্বিতীয়তম অবস্থানে রয়েছে। আর উপজেলা পর্যায়ে লোহাগড়া দেশের প্রথম।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা কামান্ডার এমএম গোলাম কবির জানান, মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলে খেতাবপ্রাপ্ত ছয়জন হলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, বীর উত্তম মুজিবুর রহমান, বীর বিক্রম আফজাল হোসেন, বীর প্রতীক খোরশেদ আলম, মতিয়ার রহমান ও শাহ হাবিবুর রহমান। নাম উল্লেখ না করা অসংখ্য নেতৃত্বস্থানীয় বীরযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী হাজার হাজার মানুষের অংশ গ্রহণে নড়াইলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে ওঠে। মুক্ত হয় নড়াইল। সেসময় শুধুমাত্র নড়াইল চিত্রা নদীর পাড়ে (আদালত চত্বর) তিন সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
এছাড়া নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের তরফদার পরিবারের স্কুল শিক্ষক আতিয়ার রহমান তরফদার, আব্দুস সালাম তরফদার, রফিউদ্দিন তরফদার, মাহতাব তরফদার ও আলতাব তরফদার এবং মোকাম মোল্যা, কাইজার মোল্যা ও মকবুল হোসেন সিকদারকে ধরে এনে নড়াইল শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় গণকবর দেওয়া হয়।
/এআর/