বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে কার্গোর সঙ্গে এম. ভি. গ্রীন লাইন ওয়াটার বাস বা লঞ্চটির সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে একাধিক বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে ওই লঞ্চটিতে থাকা যাত্রীদের বেশিরভাগই দুষছেন লঞ্চটির চালককে। তাদের বক্তব্য, অতিরিক্ত দ্রুতগতির কারণে প্রকাশ্য দিনের আলোয় কয়লা বোঝাই কার্গোটিকে দেখার পরেও গ্রীন লাইন লঞ্চটির চালক সংঘর্ষ এড়াতে পারেননি। এঘটনার পরেই কার্গোটি নদীতে ডুবে যায় এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে নাক ঘুরিয়ে আবার তীরে এসে ভেড়ে এম. ভি. গ্রীন লাইন।
জানা গেছে, আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এম. ভি. গ্রীন লাইন নামের লঞ্চটি। এটি জেলার সদর উপজেলার লামছড়ি এলাকা সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া পয়েন্টে পৌঁছার পর বিকাল সাড়ে তিনটায় একটি কয়লা বোঝাই একটি কার্গো ট্রলারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। লঞ্চটির প্রচণ্ড গতি থাকায় সংঘর্ষের পরপরই কার্গোটি উল্টে নদীতে ডুবে যায়।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ইউটিউবে এক যাত্রীর আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গ্রীন লাইনের ধাক্কায় কার্গোটি ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি এর যাত্রীরা দেখছেন এবং করণীয় নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করছেন। কিন্তু, তখনও তারা টের পাননি তাদের লঞ্চটিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ওই ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চটির কেবিন ক্রুরা তখন ছোটাছুটি করছেন এবং লঞ্চের বড় ধরনের ক্ষতির বিষয়টি ততক্ষণে তারা আন্দাজ করতে পেরেছেন।
গ্রীন লাইন লঞ্চে থাকা যাত্রীদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, সংঘর্ষের কিছুক্ষণ পরই গ্রীন লাইনের চালক লঞ্চটিতে ঘুরিয়ে আবার বরিশাল বন্দরের পথে রওনা দেন এবং লঞ্চটি ডুবতে ডুবতে কোনোরকমে এসে তীরে ভেরে। তবে লঞ্চটির কোনও যাত্রী এ ঘটনায় হতাহত হননি। অন্যদিকে, কয়লাবাহী কার্গোটির চালকসহ যাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। তবে কোনও প্রাণহানির ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এ দিকে এমভি গ্রীন লাইন-২ এর যাত্রী আনিসুল হক এবং রোকেয়া বেগম বলেন নৌপথে নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার দাবিদার এ নৌযানটির প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটানোর বিষয়টি অকল্পনীয়। এর গতিবেগ ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
আবদুল্লাহ হোসেন নামে আরেক যাত্রীও দুর্ঘটনার জন্য এম.ভি. গ্রীন লাইন-২ এর চালককে দায়ী করেন।
লঞ্চে থাকা এক যাত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কীর্তনখোলা নদীর যে অংশটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে একটি বাঁক আছে। সাধারণত ওই জায়গায় এলে সব নৌযান গতিবেগ কমিয়ে সাবধানে পরস্পরকে অতিক্রম করে। কিন্তু, এম.ভি. গ্রীন লাইন লঞ্চটি গতিবেগ না কমানোতেই খুলনাগামী কয়লাবোঝাই কার্গোটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে কার্গোটি ডুবে যায়।
লঞ্চটিতে থাকা ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সরদার এম মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সারেং (চালক) সামনের ট্রলারটি দেখতে পায়নি। সংঘর্ষের পর ট্রলারটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। তবে আমরা ডোবার আগেই তীরে আসতে পেরেছি সবাই।’
অন্যদিকে, সুমন চক্রবর্তী এবং আরমান আহমেদ নামে এমভি গ্রীন লাইন-২ এর অপর দুই যাত্রী বলেন, দু’দিন ধরে আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকায় রাতের লঞ্চে না-গিয়ে দিনের বেলায় এমভি গ্রীন লাইন-২ এ রওয়ানা দিয়েছিলাম রবিবারের অফিস ধরার জন্য। কিন্ত তাতে যে এবারের মতো প্রাণ সংশয়ের অবস্থা হবে তা বুঝিনি। তিনি মন্তব্য করেন, ‘আসলে এ দেশে যাত্রীর জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কেউ যানবাহন চালায় না।’
এসব যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীন লাইন নামের এই লঞ্চটি বরাবরই বেপরোয়াভাবে লঞ্চ চালাতে অভ্যস্ত। নদীর নাব্যতা ও অন্য যানবাহনের পরিস্থিতি বিবেচনা না করে বরাবরই এই নৌযানটি সবসময়ে দ্রুতগতিতে চলাচল করে থাকে। এজন্য কিছু যাত্রীর কাছে এটি জনপ্রিয়তা পেলেও বেশিরভাগই দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করতেন।আজ সেই ঘটনাটিই ঘটে গেল।
এদিকে, এ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএ’র কোনও কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে মুখ খোলেননি। তবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে কয়লাবাহী কার্গো এবং যাত্রীবাহী নৌযান এম.ভি. গ্রীন লাইন-২ এর মধ্যে সংঘর্ষের কারণ, দায় প্রভৃতি বিষয় তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা এ তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
/টিএন/আপ-এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
গ্রীন লাইন লঞ্চ দুর্ঘটনার ভিডিও প্রকাশ