X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?

রায়ানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
২২ জুলাই ২০১৭, ২১:৩৪আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১০:৩৭

এই গাড়িতে ছিলেন নিহত ব্যবসায়ী জাকির হোসেন গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিযোগ করছেন তার স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় জাকিরের কাছে ২৭ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার জায়গাতে তার কাছে সেই টাকা পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, ওই ব্যবসায়ীর কাছে টাকা থাকার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। তবে দুর্ঘটনাস্থলে কে আগে উপস্থিত হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে সালনা হাইওয়ে থানা ও হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। আর পুলিশের হয়রানি এড়াতেই মামলার পথে হাঁটছে না নিহতের পরিবার।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেনের বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায়। তবে তিনি থাকতেন ঢাকার উত্তরার বাসায়। তিনি গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কয়েকটি কারখানার টাকা দিতেই তিনি শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে উত্তরার বাসা থেকে রওনা দেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা। পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজেন্দ্রপুর ন্যাশনাল পার্কের ৩নং গেটের সামনে গাড়ি উল্টে পাশের খাদে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকটি পোশাক কারখানায় দেওয়ার জন্য শুক্রবার রাতে তিনি বাসা থেকে ২৭ লাখ টাকা নিয়ে বানিয়াচালার পথে রওনা হন। দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে পাওয়া গেলেও তার সঙ্গে থাকা টাকা পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ জাকিরের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বলে জানিয়ে ১৭ হাজার পাঁচশ টাকা আমাদের দিয়েছে।’ এত বড় অঙ্কের কোনও টাকার হদিস না পাওয়া যাওয়ার কারণেই জাকিরের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এ ঘটনার পেছনে নাসির বেলায়েত নামের এক ব্যক্তির জড়িত থাকার সন্দেহের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বানিয়ারচালা এলাকার বেলায়েত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ভাইয়ের (জাকির) ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। একাধিক কারখানার ব্যবসা সে জাকিরের কাছ থেকে দখলে নিয়ে গেছে।’ জাকিরের দুর্ঘটনার সংবাদও বেলায়েত তাদের মোবাইল ফোনে জানায় বলেও জানান নাসির।
নিহত জাকিরের ভাতিজা ও নাসির উদ্দিনের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মো. সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমাদের পরিবারের সদস্যদের পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে। আমার জ্যাঠা রুহুল আমীন, চাচা সিদ্দিক ও সোলমানকে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নেওয়ার অভিযোগে আটক করেছিল পুলিশ। তাছাড়া আমার বাবার প্রাইভেটকার জোর করে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। পরে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাজমুলকে নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়।’ সাগর অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমার বাপ-চাচাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে চাচা জাকির হোসেনের ব্যবসায়িক শত্রু বেলায়েত জড়িত রয়েছে।’ বেলায়েত হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সোর্স হিসেবে কাজ করেন বলেও জানান তিনি।
জাকিরের পরিবারের সদস্যদের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজেন্দ্রপুরের রাশিদুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তা জাকিরের পরিবারকে জানাই। তবে গত ৮/৯ বছর হলো জাকির হোসেনের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই। জাকিরের পরিবারের অভিযোগগুলোরও কোনও সত্যতা নেই।’
সালনা হাইওয়ে থানাতে রাখা আছে গাড়িটি এদিকে, স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারটি উল্টে সড়কের পাশে পড়ে যায়। এসময় শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসকে উদ্ধারের জন্য ডাকা হয়। পরে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ নিহত ব্যবসায়ী জাকির মাদক সেবন করতেন দাবি করে ওসি জানান, সালনা হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই জয়দেবপুর থানার হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।
এদিকে, জয়দেবপুর থানার হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান বলছেন, তাদের আগে সালনা হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। আর নিহত জাকিরের সঙ্গে টাকা-পয়সা থাকার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। জাকিরের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময় হয়রানি ও টাকা নিয়ে মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাকিরের পরিবারের সাথে আমার এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগগুলো মিথ্যা। এসবের কিছুই আমি জানিনা।’
সরেজমিনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মহাসড়কের দু’পাশে গভীর শালবন। ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনও বাড়িঘর নেই। দুর্ঘটনার কবলে পড়া প্রাইভেটকারটি এখন সালনা হাইওয়ে থানায় রাখা আছে। গাড়িটির সামনের অংশ থেঁতলে গেছে ও ছাদ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।
জাকির হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তার মরদেহের ময়নাতদন্ত না করা ও এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের না করার কারণ জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভাইকে হারিয়েছি। মামলা করে আবার পুলিশের হয়রানির শিকার হতে চাই না, পরিবারের আর কোনও সদ্স্যকে হারাতে চাই না। আল্লাহ-ই বিচার করবে।’

আরও পড়ুন-

ম্যালেরিয়ার সংক্রমণে শীর্ষ তিন পার্বত্য জেলা

ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা: পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি


/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ