X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে বাঁশ-বেতের শিল্প, ধরে রাখতে নেই উদ্যোগ

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
২৮ জুলাই ২০১৭, ১২:২৫আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৭, ১২:৪২

বাঁশের-তৈরি-জিনিসপত্র কুমিল্লায় এক সময় পাহাড়ি বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালোই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁশের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং প্লাস্টিক মার্কেট দখল করে নেওয়ায় এ শিল্প বিলুপ্তির পথে। পুঁজি, উদ্যোগ ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। তবে বাঁশ-বেতের শিল্পের দুর্দিন কাটিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে নেই কোনও সরকারি উদ্যোগ। বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুমিল্লা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক তাজুল ইসলাম।  

জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘৮০ দশকে সীমান্তের ওপার থেকে মোটা লম্বা বাঁশ আসতো বাংলাদেশে। এসব বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি, ধান রাখার গোলা,সবজি রাখার পাত্র তৈরি করা হতো। বুড়িচং উপজেলার জগতপুর, সাদকপুর, কংশনগর, ময়নামতি, গোবিন্দপুর, ভরাসার, ছয়গ্রাম, গাজীপুর, রসুলপুর, পূর্ণমতি, শংকুচাইল, রাজাপুরসহ একাধিক গ্রামে বাঁশ ও বেতের কাজ হতো। 

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড় ও পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় বিভিন্ন জাতের বাঁশ জন্মাতো এ এলাকায়। এ বাঁশ দিয়েই বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো স্থানীয়রা। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে উজাড় হয়ে গেছে বাঁশ ঝাড়ের।

সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গোলাবাড়ী এলাকার ৯০ বছরের  আফছার মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে  সময় আষাঢ় মাসে পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদী প্রমত্তা হয়ে উঠতো। তখন ভারত থেকে বাঁশ কেটে রশি দিয়ে বেঁধে ছেড়ে দিতেন ওপারের ব্যবসায়ীরা। এপারের ব্যবসায়ীরা তা তুলে নিতেন। তবে ওপারের বাঁশ জন্মানো টিলাগুলো কেটে ধানি জমি, বসত-বাড়ি গড়ে তোলার কারণে উজাড় হয়ে গেছে বাঁশ ঝাড়।’

বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন এক নারী

বাঁশের কম উৎপাদনই এ শিল্প হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে মানতে নারাজ এ শিল্পের কারিগররা। বাঁশের তৈজসপত্র তৈরি কারিগর মফিজ বলেন,‘ঋণ,পুঁজি,বাঁশ ও বেতের স্বল্পতার মাঝেও পেশা ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এক সময় আমি কুলা,খাঁচা,চালনি,চাটাই,ঢোল,ওড়া,ঝুঁড়ি,ডুলা,মোড়া প্রভৃতি বাঁশজাত পণ্যে তৈরি করতাম। বড় ও মাঝারি সাইজের বাঁশ আগে ১০০-১৫০ টাকায় কেনা যেতো। আর এখন সেই বাঁশ সাড়ে ৩০০-৪০০ টাকা দামে কিনতে হয়। একটি বড় বাঁশ দিয়ে ৬টি খাঁচা তৈরি করা যায়। তবে এতে করে কারিগরদের বেতন-ভাতা দিয়ে মুনাফা অর্জন একেবারেই সম্ভবপর হয় না।’ 

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁশ ও বেত শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সরকারিভাবে কোনও উদ্যোগ এবং বাজেট না থাকায় শিল্পের কারিগর ও উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারছি না। তবে আমাদের কাছে কোনও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঋণের জন্য আসলে আমরা ঋণ সহযোগিতা করে থাকি। যদি সরকারিভাবে বাঁশ বেতসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য বাজেটের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আমরা ঋণ সহযোগিতাসহ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হারানো শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম।’

/এসটি/     

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত