X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণ বেড়েছে, ১১দিনে ৩টি গবাদি পশুর মৃত্যু

বাগেরহাট প্রতিনিধি
২২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১২আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১২

সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণ বেড়েছে, ১১দিনে ৩টি গবাদি পশুর মৃত্যু

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রায়ই লোকালয়ে ঢুকে গবাদিপশুসহ নানা জীবজন্তুর ওপর হামলা করছে। পূর্ব সুন্দরবন ঘেঁষা বাগেরহাটের মোংলা ও শরনখোলা উপজেলায় এই হামলার ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে। গত ১১ দিনে এ দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার হামলা চালিয়ে দুটি গরু এবং একটি মহিষ হত্যা করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে, খাদ্যের অভাবেই বাঘ লোকালয়ের ঢুকছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবার (২১ জানুয়ারি) ভোর রাতে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারাণী ও নাংলী টহল ফাঁড়ির মধ্যবর্তী এলাকায় বাঘের হামলায় একটি মহিষের মৃত্যু হয়। মহিষটি শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর মাঝেরচর গ্রামের নবী হোসেনের।

এলাকাবাসী জানান, মাঝের চর গ্রামের নবী হোসেনের ৮-১০টি মহিষ শনিবার বিকেলে ঘাস খেতে খেতে নদী সাঁতরে বনের মধ্যে ঢুকে যায়। এর মধ্যে একটি মহিষ ফিরে না আসায় মালিক নবী হোসেন পরদিন সকালে খুঁজতে গিয়ে মহিষটি মৃত অবস্থায় বনের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে মৃত মহিষটি উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। মহিষটির পেছনের বেশকিছু অংশ বাঘে খেয়ে ফেলেছে। ভোর রাতের দিকে বাঘ ওই মহিষটিকে আক্রমণ করেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

এর আগে গত মঙ্গলবার মোংলার সুন্দরবন সংলগ্ন গোড়া বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঘের আক্রমণে একটি গরু মারা যায়। ওই দিন মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশে ঘাস খাওয়ার সময় বাঘ ওই গরুটির ওপর আক্রমণ করে।এতে ঘটনাস্থলেই গরুটি মারা যায়।

পরের দিন বুধবার বিকেলে বাঘের আক্রমণে একটি মায়া হরিণ তাড়া খেয়ে বৈদ্যমারী বাজার সংলগ্ন একটি কাকড়া হ্যাচারিতে ঢুকে পড়ে। পরে হরিণটিকে উদ্ধার করে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এভাবেই প্রতিনিয়ত সুন্দরবন সংলগ্ন বৈদ্যমারী, কাটাখালী ও বুড়বুড়িয়া এলাকায় বাঘ ঢুকে গবাদি পশু মেরে খাচ্ছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় সুন্দরবন থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে বৈদ্যমারী গ্রামের আবুল বাসার জোমাদ্দের বাড়ির রান্না ঘরের পাশে ঘুরাঘুরি করে কিছুক্ষণ পর একটি কুকুর ধরে নিয়ে চলে যায়। এছাড়া প্রায় রাতেই বাঘ ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন বাড়ি ও ঘরের আঙ্গিনায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে লোকজন বিভিন্ন জায়গায় বাঘের পয়ের চিহ্ন দেখছে। বৈদ্যমারী গ্রামের মানুষের দাবি, বাঘের আতঙ্কে সন্ধ্যার পর বাজারে কোনও লোকজন থাকে না।  রাতেও কেউ ঘর থেকে বের হতে পারে না। বাথরুমের কাজ-কর্ম ঘরের মধ্যেই সারতে হচ্ছে। বন বিভাগের সদস্যদের এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেই বলে জানান এলাকাবাসী।

গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোরে চিলা ইউনিয়নের বৈদ্যমারী বাজার সংলগ্ন খড়মা নদীর পাড়ে বাঘের আক্রমণে একটি গরু মারা যায়। মমিন উদ্দিন মুন্সীর গোয়ালের এ গরুটি বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি কাছে খড়মা নদী (মৃত খাল) পার হয়ে সুন্দরবনের কাছে গেলে একটি বাঘ গরুটির ওপর আক্রমন করে। লোকজনের দৃষ্টিতে আসার আগেই গরুটি মেরে এর পেছনের দুই পায়ের মাংস খেয়ে বাঘটি বনের ভেতরে চলে যায়। এরপর মৃত গরুটিকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে।

গরুটির পেটে বাচ্চার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বাঘের আক্রমণে আমি  গরু ও বাচ্চা দুটোই হারিয়েছি।

এ বিষয়ে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বাঘের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে আগের তুলনায় বাঘের খাদ্য উৎপাদন অনেক কম গেছে। বাঘ আগে যেভাবে হাতের নাগালে খাবার পেত এখন তা পাচ্ছে না। অন্যদিকে বনের ওপর নির্ভশীলতা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনে মানুষের বিচরণও বেড়ে গেছে। অভয়ারণ্যের ভিতরও মানুষ সহজে প্রবেশ করছে। ফলে বাঘ খেই হারাচ্ছে কোনটা অভয়ারণ্য আর কোনটি লোকালয়। সরকারের উচিত অভয়ারণ্যসহ সুন্দরবনকে বাঘের নিরাপদ আবাস্থল হিসেবে তৈরি করা। এজন্য বনের প্রতি  মানুষের নির্ভরশীলতা কমানো প্রয়োজন।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বাঘের আক্রমণে গবাদীপশুর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুন্দরবনের সব এলাকাতেই কম বেশি বাঘের বিচরণ রয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী মরে যাওয়ায় গবাদিপশু সহজে সুন্দরবনের ভিতর নিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। তাছাড়া বাঘও সহজে এসব নদী পার হতে পারছে। ভবিষ্যতে যাতে কারও গবাদিপশু বনে প্রবেশ না করে সেজন্য সবাইকে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে। সুন্দরবনে গবাদিপশু ঢুকানো হলে মালিকের বিরুদ্ধে বনআইনে মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: ইজিবাইক চালক হত্যা মামলায় বাবা-ছেলেসহ সাত জনের কারাদণ্ড


/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ