X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিপর্যয়ের মুখে দুবলার শুঁটকিপল্লি

আবুল হাসান, মোংলা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:১৯আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৫২

বিপর্যয়ের মুখে দুবলার শুঁটকিপল্লি ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ না পাওয়ায় প্রাণচাঞ্চল্য কমে গেছে দুবলারচরের শুঁটকিপল্লিতে। বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত পূর্ব সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী এই শুঁটকিপল্লির মহাজন ও বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে মাছ থাকলেও অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় জেলেরা সাগরের বাংলাদেশ অংশে অবাধে মাছ শিকার ও স্থানীয় জেলেদের মারধর করায় কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না স্থানীয় জেলেরা। এ কারণে দুবলায় মাছ আসছে কম, শুঁটকির পরিমাণও কমে গেছে সে কারণেই।


সরেজমিন ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি দুবলার মৎস্যপল্লিতে গিয়ে বনবিভাগ ও বহদ্দারদের (মহাজন) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর সরকার এ শুঁটকিপল্লি থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। এটিই সুন্দরবনের সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়ের উৎস। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অংশে মাছের আধিক্য ভারতের অংশের চেয়ে বেশি থাকায় ভারতীয় জেলেরা অবৈধভাবে প্রবেশ করে ট্রলিং জাহাজ দিয়ে মাছ ছেঁকে (ছোট-বড় সব মাছ ধরে নিয়ে যায়) নিয়ে যাওয়ায় দেশি জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না। তাছাড়া, মৌসুমের শুরুতে কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং প্রচণ্ড শীতে শুঁটকিপল্লি মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। খালি পড়ে রয়েছে মাছ শুকানোর কাজে ব্যবহৃত মাচান ও বাঁশের আলনাগুলো।
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের ম্যানেজার মো. ফরিদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে তিনি দুবলারচরে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তার ভাষ্য, এ বছরই শুঁটকি খাতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটেছে। গত নভেম্বর মাসে ২-৩ দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মাছ পচে গেছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলিং জাহাজ নিয়ে মাছ ধরার কারণে তাদের জেলেরা জাল ফেলতে পারছে না। সাগরে জাল ফেললেই ভারতীয় ট্রলিং জাহাজের জেলেরা মারধর করে জাল-মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
মাঝেরকিল্লার লেদু বহদ্দার জানান, ১ ফেব্রুয়ারি তার ও মুজাহার বহদ্দারের জেলেরা সাগরে মাছ ধরে ফেরার পথে ভারতীয় জেলেরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয়রা দুই ট্রলারের ১১ জেলেকে মারধর করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ ও জাল লুট করে নিয়ে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটলেও সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
মাঝেরকিল্লা শুঁটকিপল্লির সুকুমার বহদ্দার, মুজাহার বহদ্দার, সুধীর বহদ্দার ও আলোরকোল শুঁটকিপল্লির শিব বিশ্বাস বলেন, ভারতীয় জেলেরা অবৈধভাবে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের ব্যবসায়ীরা শুঁটকি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ প্রবেশ বন্ধ না করলে অদূর ভবিষ্যতে শুঁটকি ব্যবসা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেস্ট রেঞ্জার) মো. মোকাম্মেল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর শুঁটকিপল্লি থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮২৭ টাকা। তবে, মাছ সংকটের কারণে এ বছর রাজস্ব অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে জলসীমা ও জেলেদের সব নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনী। আমাদের কিছু করার নেই। কোস্টগার্ডকে অলরেডি বিষয়টি জানানো হয়েছে।’ 
কোস্টগার্ড মোংলা পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম মিনারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ল্যান্ডে যেভাবে অভিযান চালাতে পারি, সমুদ্রে অভিযান একটু ডিফিকাল্ট। সমুদ্র একটা বড় জায়গা এবং ভিনদেশি জেলেদের চিহ্নিত করাও একটা কঠিন কাজ। ভারতীয় ট্রলার এবং বাংলাদেশি ট্রলার দেখতে একই রকম, সেক্ষেত্রে খুঁজে বের করাও মুশকিল। তারপরও আমরা নৌবাহিনীর সহযোগিতায় প্রতিবছর ভিনদেশি জেলে এবং তাদের ট্রলার আটক করি।’
ক্যাপ্টেন এম মিনারুল হক আরও বলেন, ‘‘এত বড় এলাকায় টহলের ক্ষেত্রে লোকবল এবং জলযানের অভাবও রয়েছে। বর্তমানে চার থেকে পাঁচটি জলযান দিয়ে সমুদ্রে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জেলেদের কাছ থেকে খবর পেয়ে দুবলার কাছে ফেয়ারওয়েতে আমাদের টহল জাহাজ ‘সিজিএস তানজিভ’কে পাঠানো হয়েছে।’’
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির অধীনে মেহেরআলীরচর, মাঝেরকিল্লা, আলোরকোল, শ্যালারচর ও নারকেলবাড়িয়াসহ পাঁচটি চরে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, মোংলা, রামপাল ও শরণখোলার সহস্রাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী এসব চরে এসে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাচান ও বাসা তৈরির কাজ শুরু করেন। নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হয় শুঁটকি আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুবলারচরে শুঁটকি উৎপাদন হয়ে আসছে। সামুদ্রিক লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা, পারসে, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন হয় এসব চরে। বঙ্গোপসাগরের নোনা (লবণ) পানির এ শুঁটকি সুস্বাদু এবং দেশে-বিদেশে এর ব্যাপক সুনাম ও চাহিদা রয়েছে।

/এনআই/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ