বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার বেশ আগে থেকেই তার পেছনে দাঁড়িয়েছিল হামলাকারী তরুণ। ঘটনার পরপরই তাকে আটক করা হয়। পরে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর তোলা ও ফেসবুকে আপলোড করা ছবির সঙ্গে হামলাকারীর ছবি মিলিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
রুহুল আমিন ও খলিলুর রহমান নামের দুই তরুণ ড. জাফর ইকবালকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এই দুই প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, বৃষ্টির আশঙ্কায় শাবিপ্রবিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে আজ শনিবার (৩ মার্চ) পাঁচ মিনিটের জন্য বিরতি দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠান বিরতির ওই সময়েই অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়।
রুহুল আমিন ও খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, বৃষ্টি হতে পারে– এমন আশঙ্কায় পাঁচ মিনিটের জন্য অনুষ্ঠান বিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ৮-১০ জন পুলিশের পাহারায় ছিলেন। ওই অবস্থায়ই পেছন থেকে তার ওপর হামলা হয়।
এই দুই তরুণের দাবি, হামলাকারীরা ছিল দুই থেকে তিন জন। তারা সবাই বয়সে তরুণ। এদের একজনকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে অন্যদের ব্যাপারে আর কোনও তথ্য দিতে পারেননি তারা।
রুহুল আমিন শাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও খলিলুর রহমান শাবি ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। কিন্তু তাদের কেউ হামলাকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে চিনতে পারেননি।
তবে হামলাকারী একাধিক ছিল না কি একজনই ড. ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে— তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই বিরতির সময় ড. জাফর ইকবালের পেছনে একটি হট্টগোল হয়েছিল। এরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি এখনও।
রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের বিরতির সময় স্যার ৮-১০ জন পুলিশের পাহারায় ছিলেন। তখন হুট করে দুই থেকে তিন জন স্যারকে হামলা করে। হামলাকারীদের কাউকে এর আগে ক্যাম্পাসে দেখিনি।’
একই কথা জানান খলিলুর রহমান। তিনিও বলেন, ‘হামলাকারীরা দুই/তিন জন ছিল। এদের কাউকে এর আগে কখনও ক্যাম্পাসে দেখিনি। এর মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘স্যারকে যখন ওটিতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তিনি বলেন, হামলাকারী কেমন আছে। তাকে কেউ যেন মারধর না করে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল ওয়াহাব বাংলা ট্রিবিউনকে ঘটনার পরপরই জানান, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা ও এ ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীদের হাতে আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তারা। পরে সিলেট জালালাবাদ থানার ওসি নিশ্চিত করেন, হামলাকারীকে আটকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণধোলাই দিয়েছে। জ্ঞান হারানোয় তাকে প্রাথমিকভাবে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম সিলেট রওনা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার (৩ মার্চ) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান চলাকালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ২৪-২৫ বছরের এক তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানকার সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রাশেদুন্নবীর অধীনে চিকিৎসা শুরু হয় তার। অস্ত্রোপচারও করা হয়। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় চার সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড। হাসপাতালের উপপরিচালক দেবপদ রায় জানান, ড. জাফর ইকবালের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় গতকাল শুক্রবার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলছিল। গতকাল বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে এর উদ্বোধন করেছিলেন ড. জাফর ইকবাল। আজ শনিবার বিকালে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘এ’-এর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর শাহবাগেও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকে গণজাগরণ মঞ্চ। একইসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিকল্প ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।
আরও পড়ুন:
জাফর ইকবালের চিকিৎসায় বোর্ড গঠন
শাবিতে ড. জাফর ইকবালের মাথায় ছুরিকাঘাত
জাফর ইকবালকে দেখতে শিক্ষামন্ত্রী হাসপাতালে
জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীকে র্যাবে হস্তান্তর
হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সিলেট যাচ্ছে সিটিটিসি
অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত বলছে আ. লীগ, বিএনপি’র দাবি চক্রান্ত
জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ
জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
জাফর ইকবালকে হত্যার টার্গেটে রাখা হয়েছিল সবসময়: গণজাগরণ মঞ্চ
‘নিরাপত্তার মধ্যে তাৎক্ষণিক সুযোগ পেয়ে জাফর ইকবালের ওপর হামলা করা হয়’