নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের দোতলার ছাদ থেকে খুঁটির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ছাদের ওপর আলাদা স্থানে খুঁটি স্থাপন করে আরও দুইতলা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের সালনা বিআরটিসি কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বিপরীতে নির্মাণ করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনা এড়াতে অননুমোদিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেবেকা সুলতানা। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তিনি ভবনটি পরিদর্শন করে এর নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
সালনা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী ফজলুল হক ওই ভবনের মালিক। গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুরে ‘আহাম্মদীয়া’ নামে তার একটি খাবার হোটেল রয়েছে।
শারজিল হোসেন শান্ত নামে এক ব্যক্তি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকের একটি আইডিতে ‘আরেকটি রানা প্লাজার অপেক্ষায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ভবনটির ছবিসহ স্ট্যাটাস দেয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে এ স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়। পরে স্ট্যাটাসটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে উঠে।
গাজীপুর সদর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেবেকা সুলতানা জানান, ফেইসবুকের কল্যাণে তিনি ভবনটির ব্যাপারে সংবাদ পান। পরে তা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ভবন মালিককে তখন পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে তাকে নোটিশ পাঠানো হবে। এসময় গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেবুবুর রহমান ও স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিল।
প্রায় দুই বছর ধরে গাজীপুর বিআরটিসি কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বিপরীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই এ ভবনটি নির্মাণাধীন রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলার ছাদ থেকে মূল খুঁটি স্থান থেকে সরিয়ে অন্য স্থানে খুঁটি দিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নির্মাণ করা হয়।
গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেবুবুর রহমান বলেন,‘নিয়মানুযায়ী বহুতল ভবনে বেইজমেন্ট থেকে একটি খুঁটির ওপর আরেকটি খুঁটি স্থাপন করতে হবে। ছাদে আলাদা করে খুঁটি স্থাপনের কোনও সুযোগ নেই। ছাদের পুরুত্ব থাকতে হবে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি। কিন্তু এ ভবনটিতে কোনও নিয়মই মানা হয়নি। কোনও প্রকৌশলি এমন ডিজাইন করতে পারেন না। দেখে মনে হচ্ছে, নিজেই এমন ডিজাইন করে ভবনটি নির্মাণ করেছে। ভবনের একপাশে ডোবা রয়েছে। সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। তাছাড়া ভবনটির খুব কাছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইনও রয়েছে। ওই লাইনের কোনও কভার নেই। ফলে ভবনটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
ভবনের পাশের চা বিক্রেতা এনামুল হক বলেন,‘প্রায় দুই বছর ধরে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো অনুমোদন রয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।’
অপর চা বিক্রেতা সোলায়মান বলেন,‘অনেকে মালিক ফজলুল হককে এ ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন।কিন্তু তিনি শুনেননি।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরের প্রকৌশলি হাসিবুল ইসলাম ও চিফ এসিস্ট্যান্ট অফিসার মো. শাহাদাত খন্দকার ভবন পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে শাহাদাত খন্দকার জানান, গাজীপুর মহানগর থেকে ভবনটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সড়ক ও জনপথের কিছু জায়গা দখল নিয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এসে কয়েকজনকে কাজ করতে দেখা গেছে। তারা আমাদের দেখে পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ভবন মালিক ফজলুল হক কোনও মন্তব্য করতে রাজী হননি।