X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৬আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৬

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

শীতের শেষের দিকে এসে ফুলচাষিদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফাল্গুন যেনো তাদের জন্য সৌভাগ্যের কপাট খুলে দেয়। প্রতিবছর বসন্তবরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবেও লাভবান হয়ে ওঠেন তারা। এছাড়াও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে অন্তত দুই কোটি টাকা ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, প্রতিবছর বসন্তবরণ, ভালবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ জোগান দিয়ে থাকেন কালীগঞ্জের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। আর কয়েকদিন পরেই বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস। তাই এখন দেশের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের হাতে ফুল তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কালীগঞ্জের ফুলচাষিরা। এসব ফুলই দেশের প্রতিটি জেলাশহরের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান বলেও জানান তারা।

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

যশোরের গদখালীর পর ফুলের আরেকটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। আসন্ন ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই দিনে এখানকার ফুলচাষিরা ২ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় কালীগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের সফল ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী এস এম টিপু সুলতান একই ১৪ বিঘা জমির ওপর ফুলের চাষ করেছেন। তার চাষ করা ফুলের মধ্যে রয়েছে লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওয়াস ও গোলাপ। এসব ফুলের মধ্যে লিলিয়াম নেদারল্যান্ড, জারবেরা থাইল্যান্ডের জাত। আর গ্লাডিওলাস এক সময় বাইরের ফুল ছিল, তবে এখন দেশেই এই ফুলের চারা পাওয়া যায়।

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

সামনের ২টি দিবসেকে সামনে রেখে স্থানীয় ফুলচাষি এস এম টিপু সুলতান একাই ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী এস এম টিপু সুলতান জানান, ২৭ বছর ধরে ফুলচাষের সঙ্গে জড়িত তিনি। ঢাকায় তার ফুলের দোকানও আছে। সেখানে তিনি ফুলের ব্যবসা করেন। তিনি নিজে শেরে বাংলা নগর ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ-সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রথম গ্লাডিওলাস দিয়ে ফুলের চাষ শুরু করেন। এরপর জারবেরা ফুলের আবাদ করেন। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডের ফুল লিলিয়ামের চাষ করেন। কিন্তু সময় মতো ফুল না ওঠায় সেবার তিনি তেমন ফুল বিক্রি করতে পারেননি। এবার  সময় মতো ফুল উঠবে এবং তিনি ভালভাবে লিলিয়াম ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশা করেন।

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

প্রতি বছর তিনি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন বলেও জানান। ব্যয় বাদে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লাভ থাকে বলেও জানান তিনি।

ফুলচাষিরা জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ব্যবসা ভাল হয়। এসময় ফুলের দাম ভাল পাওয়া যায়। পাইকারি হারে একটি লিলিয়াম ফুল ১০০ টাকা, জারবেরা ৫-১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬-৭ টাকা ও গোলাপ একটাকা করে বিক্রি করা হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের ফুলচাষি মিজানুর রহমান জানান, তারা গাঁদা ফুলের চাষ করেন। দড়িতে ফুল গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ গাদা ফুল থাকে। ফুলের মূল্য কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। তবে একঝোপা ফুল ১০-১২ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ জানান, জেলায়চলতি বছর প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায়ই ১৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। এ কারণে সবাই এখন এই এলাকাকে ফুলনগরী বলেই চেনেন।

সরেজমিনে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।

সারাদেশের আড়তগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালবাসা দিবস প্রভৃতি দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এসময় দামও থাকে ভালো। ফুলচাষিরা নিজেরা না এসে সারা বছর তাদের ক্ষেতের ফুল চুক্তি মোতাবেক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের ফুলের আড়তে পাঠিয়ে দেন। এ সকল স্থানের আড়তদারেরা বিক্রির পর তাদের কমিশন রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেন। ফলে ফুল চাষিদের টাকা খরচ করে ফুল বিক্রির জন্য কোথাও যাওয়া লাগেনা। তারা মোবাইল বা ফোনালাপের মাধ্যমে বাজার দর ঠিকঠাক করে ফুল পাঠিয়ে থাকেন বলেও জানান কৃষকরা।

ভালোবাসা ও ভাষা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, জেলার মধ্যে কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয়। কৃষি বিভাগ এনএটিপি প্রকল্প থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে একটি মিনি হিমাগার তৈরির জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। যাতে কৃষকরা ফুল তুলে তা সতেজ রাখতে পারেন। 

ত্রিলোচনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ছানা বলেন, ‘আমার এলাকার মাটি খুবই উর্বর। এখানে ফুল চাষ করে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে এলাকার উন্নয়ন ঘটছে। বেকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে। কালীগঞ্জের ফুল জেলার বিভিন্ন স্থানে রফতানি হওয়ায় এলাকার সুনামও বাড়ছে।  

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাবেয়া
বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাবেয়া
বন্ধ হচ্ছে না নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপণন, বাড়ছে উদ্বেগ
বন্ধ হচ্ছে না নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপণন, বাড়ছে উদ্বেগ
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে পড়ে আ.লীগ নেতার মৃত্যু
কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে পড়ে আ.লীগ নেতার মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ