যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম চিন্তাবিদ ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ১৩ হাজার পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে তুর্কি সরকার।
চলতি বছরের জুলাইয়ে ক্যু প্রচেষ্টার পর থেকে অন্তত এক লাখ সরকারি চাকরিজীবীদের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তুর্কি জাতীয় পুলিশ জানিয়েছে, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি কর্মকর্তারা ছিলেন বিভিন্ন এলাকার পুলিশ প্রধান। তুরস্কের মোট পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দুই লাখ ৭০ হাজার।
এর আগে তুর্কি কর্তৃপক্ষ দেশটিতে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানোর ঘোষণা দেন। আগামী ১৯ অক্টোবর ওই জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
জরুরি অবস্থা চলাকালে প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রী পরিষদ পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে যে কোনও আইন জারি করতে পারে এবং যে কোনও নাগরিক অধিকার সীমিত করতে পারে।
তুর্কি কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই গুলেনকে ওই ক্যু প্রচেষ্টার জন্য দায়ী করে আসছে। তারা চলতি বছরের আগস্টে মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এক চিঠিতে গুলেনকে গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানোর অনুরোধও জানিয়েছে। সেখানে গুলেনের বিরুদ্ধে সরকার উচ্ছেদ করার চেষ্টাসহ ১০টি অভিযোগ আনা হয়।
তবে গুলেন তার ওপর আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এর আগে তিনি তুর্কি সরকারের আচরণকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে উল্লেখ করে ওই ক্যু প্রচেষ্টাকে সাজানো বলেও মন্তব্য করেছিলেন।
চলতি বছরের ১৫ জুলাই তুর্কি সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেওয়ার দাবি করে, কিন্তু পরে ওই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের ক্ষমতা আরও সংহত করার প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর চলে ব্যাপক ধরপাকড়। যাকে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ‘এরদোয়ানের বেসামরিক ক্যু’ বলেও অভিহিত করেছেন।
সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার মানুষ এখন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের অন্তত ১৩০টি সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্যু প্রচেষ্টার পর।
প্রসঙ্গত, ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তুর্কি সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেওয়ার দাবি করে, যা দেশটির টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। মধ্যরাতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’দেশ চালাবে এবং কারফিউ ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে। কারফিউর বিরোধিতা করে এরদোয়ানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সব অংশের সমর্থন না থাকায় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তৎপরতায় জনগণ রাস্তায় নেমে এলে বিদ্রোহী সেনাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
সূত্র: বিবিসি।
/এসএ/
