X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ট্রাম্প-মিডিয়া সম্পর্ক?

বাধন অধিকারী ও আরশাদ আলী
২৮ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:৪৬আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ২০:১২
image

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ট্রাম্প-মিডিয়া সম্পর্ক? শীর্ষস্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অফ দ্য রেকর্ড সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় ‘মিডিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যুদ্ধ’ শিরোনামে খবর লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ঘটনার একদিনের মাথায় নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গের এক বৈঠককে ঘিরে ওই পত্রিকার সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে নির্বাচনি প্রচারণাকালের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ‘যুদ্ধ’ আজকের নয়। বরং সেই প্রচারণার শুরু থেকেই কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমকে তার প্রতি বৈরি হিসেবে বিবেচনা করে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

মার্কিন মিডিয়া যাকে তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত ট্রাম্পের যুদ্ধ বলছে,  বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সেই যুদ্ধটা একপাক্ষিক নয়। যুদ্ধটা যে ট্রাম্পের দিক থেকে এককভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তার প্রমাণ মেলে হিলারির প্রতি মার্কিন মিডিয়ার পক্ষপাতে। নির্বাচনকালে হিলারির প্রতি পক্ষপাত আড়াল করতে সক্ষম হয়নি মূলধারার মার্কিন মিডিয়াগুলো। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্য, ভোটারদের ওপর পরিচালিত বিভিন্ন জরিপ আর বিশ্লেষকদের কথায় সেই পক্ষপাত স্পষ্ট হয়েছে। ট্রাম্প হুমকি দিচ্ছেন আইনি পথে মিডিয়াকে রুদ্ধ করবেন তিনি। বিপরীতে তার বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হওয়ার পাল্টা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। তবে পারস্পরিক যুদ্ধ কিংবা বৈরিতার বিপরীত দিকও রয়েছে। সম্পর্ককে স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টাও চলছে দুই পক্ষের তরফ থেকেই। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরে অন্তত দুটি ঘটনায় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সেই আভাস মিলেছে।

ছবিতে ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছেন হোয়াইট হাউসের সম্ভাভ্য প্রেস সেক্রেটারি

তবে সম্পর্কের এ উত্থান-পথনকে ভালো চোখে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, সরকার-রাষ্ট্র এবং মিডিয়ার এই সম্পর্কসূত্র মার্কিন সমাজের আসন্ন ভবিষ্যতকে হুমকিতে ফেলতে পারে। 

নিতে গেলেন অভ্যর্থনা, পেলেন বঞ্চনা

গত ২১ নভেম্বর (সোমবার) নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রচার মাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের এক বৈঠকে ডেকেছিলেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর খবর অনুযায়ী  ইতিবাচক অভ্যর্থনার প্রত্যাশা ছিল মিডিয়াগুলোর। সম্প্রচারমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আশা করেছিলেন, প্রচারণাকালে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট তিক্ততার অবসান ঘটাতে চাইবেন ট্রাম্প। তবে অভ্যর্থনা পাওয়ার আশায় ট্রাম্প টাওয়ারে গিয়ে বঞ্চনা পেয়েছেন তারা।

বৈঠক উপস্থিত হওয়া মাধ্যমগুলো এ বিষয়ে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।  তবে বৈঠকসূত্রের বরাত দিয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সিএনএন, এনবিসি, সিবিএস নিউজ, ফক্স নিউজ, এমএসএনবিসি, এবিসিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিভি চ্যানেলের কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা ছিলেন ওই বৈঠকে। তাদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ জনের মতো কর্মকর্তা ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে।

তারা জানান, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠকের শুরুতেই সিএনএন ও এনবিসি চ্যানেলে তাকে নিয়ে প্রচারিত খবরকে ‘অসত্য’ ও ‘পক্ষপাতমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেন। নির্বাচনি প্রচারণার সময় সংবাদমাধ্যম কর্মীদের ‘মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট প্রজাতি’ হিসেবে উল্লেখ করা ট্রাম্প বৈঠকে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ ছিলেন সিএনএন ও এনবিসি চ্যানেলের ওপর। যদিও চ্যানেল দুটির যাদের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ তাদের নাম সরাসরি বলেননি তিনি। সবগুলো চ্যানেলের মধ্যে এ দুটিকে ‘সবচেয়ে জঘণ্য’ উল্লেখ করেন তিনি।

পলিটিকোর তৈরি করা গ্রাফিক্স

নিউ ইয়র্ক পোস্ট বৈঠক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আলোচনা খুবই উত্তপ্ত ছিলো। ট্রাম্প নাকি সিএনএন সাংবাদিকদের ‘মিথ্যাবাদী’ এবং ‘তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত’ বলেও মন্তব্য করেছেন। ওই সূত্র বৈঠকটিকে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ট্রাম্প নাকি বার বার বলেছেন, আমরা ‘একদল মিথ্যাবাদী, অসৎ মিডিয়া’; যারা সবকিছুতে ভুল করে তাদের সঙ্গে বসে আছি।

যুদ্ধটা ট্রাম্পের নয়, হিলারিভক্ত-মিডিয়ারই ঘোষিত

বিবিসি কিংবা অপরাপর সংবাদমাধ্যমগুলো ‘ট্রাম্প-সংবাদমাধ্যম সাম্প্রতিক সম্পর্ক’কে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ‘যুদ্ধঘোষণা’ হিসেবে দেখলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নির্বাচনপূর্ববর্তী প্রচারণাকালের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ‘যুদ্ধ’ আজকের নয়। বরং সেই প্রচারণার শুরু থেকেই কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমকে তার প্রতি বৈরি বলে বিবেচনা করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। আর তার কথা যে মিথ্যে নয়; উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্য, মার্কিন মিডিয়ার বিভিন্ন সংবাদভাষ্যের বিশ্লেষণ ও ভোটারদের ওপর পরিচালিত বিভিন্ন জরিপের মধ্য দিয়ে তার ইশারা মেলে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ের সময় ছয়টি প্রাইমারিতে ফল ঘোষণার আগেই মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়ে দেয়, ডেমোক্র্যাটদের হয়ে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন হিলারি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সে সময় বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেই প্রতিবেদনে হিলারির প্রতি এপির পক্ষপাতের ইঙ্গিত মেলে। উইকিলিকসের ফাঁস করা ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের (ডিএনসি) নথিতে স্যান্ডার্সকে হারিয়ে মিডিয়া-ডেমোক্র্যাট শিবির-এর হিলারিকে জিতিয়ে দেওয়ার বাসনা উন্মোচিত হয় আগস্টে।

noname

এদিকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাভারেজ বিশ্লেষণ করেও মিডিয়ার হিলারি পক্ষপাতের  আরও কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরোষ্ট্রের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল রেডিও প্রজেক্ট (এনআরপি)-এর  এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, হিলারির প্রতিপক্ষপাতের কারণে ট্রাম্পের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই বেশি সরব কর্পোরেট মিডিয়া। প্রার্থী হিসেবে তিনি স্বাভাবিক ইতিবাচক কোনও ভূমিকা পাননি মিডিয়ার তরফ থেকে। এনআরপি একটি বিশেষ খবরের উল্লেখ করে এ ঘটনায়। ট্রাম্প টাওয়ার বেয়ে একজন উঠে যাচ্ছিল ওই ব্যক্তি আদতে কোনও নাশকতা ঘটাতে নয় বরং অস্ত্রোপচারের টাকা যোগাড় করতেই ট্রাম্পের দারস্থ হতে চাইছিলেন। আহ্বান জানিয়েছিলেন ভোট দেওয়ার। এনপিআর লিখেছে, এ ঘটনায় কোনও লাইভ হয়নি, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিউজ কাভার করা হয়নি। অথচ এই কাভারেজ বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ার দরকার ছিল এবং সেটা পেলে ট্রাম্পের পক্ষে তা ইতিবাচক হতো।

নির্বাচনি প্রচারণার সময়গুলোতে হিলারির প্রতি পক্ষপাতিত্বের আরও প্রমাণ পাওয়া মিডিয়া রিসার্চ সেন্টার (এমআরসি)-এর একটি প্রতিবেদনে। তাদের একটি জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পকে নিয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রচারণারর ৯১ শতাংশই ছিলো নেতিবাচক।  হিলারির তুলনায় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিতর্কিত ইস্যুতে টেলিভিশনগুলো বেশি সময় দিয়েছে। ট্রাম্পের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে টেলিভিশনগুলো সান্ধ্যকালীন খবরের সময় ব্যয় করেছে ৪৪০ মিনিট। বিপরীতে হিলারির ক্ষেত্রে ছিল তা মাত্র ১০২ মিনিট।  হিলারির ইমেইল কেলেঙ্কারি ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বিতর্ক নিয়ে প্রচারিত খবরের ব্যপ্তি ছিলো সবমিলিয়ে ৫৩ মিনিট।

noname

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পরেও কর্পোরেট সংবাদমাধ্যম একে ‘বিপর্যয়’, ‘মিরাকল’ অথবা ‘ইতিহাসের ভয়াবহ নেতিবাচক বাস্তবতা’ আকারে সংবাদভাষ্য তৈরি করেছে। তবে মার্কিন জনতা এইসব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন বলে জরিপে তার আভাস মেলে। গ্যালাপ প্রকাশিত নির্বাচন পূর্ববর্তী এক জরিপে দেখা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই মিডিয়াকে হিলারির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট মনে করেছেন। বিপরীতে  ট্রাম্পের প্রতি মিডিয়ার পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষের।

কেবল যুদ্ধ নয়, চলছে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টাও

তবে ট্রাম্প-মিডিয়া কথিত যুদ্ধে বৈরিতা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টাও। ট্রাম্প শিবির এবং মার্কিন কর্পোরেট মিডিয়া; দুই দিক থেকেই সেই স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া ট্রাম্পের একমাত্র এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক দেখিয়েছেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলো এড়িয়ে গেছেন প্রশ্নকর্তা। এমনকী  ট্রাম্পের বিরুদ্ধের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ কিংবা নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি তাকে। বিপরীতে নিউ ইয়র্ক টাইমস টেলিভিশনের প্রনিধিদের সঙ্গের ওই বৈঠক বিষয়ক খবরে জানিয়েছে,  এ বৈঠক প্রমাণ করে ট্রাম্প জয়ের পরও উদ্বিগ্ন। সাধারণভাবে প্রেসিডেন্টরা যেমন প্রচার পান ও সাংবাদিকরা যেভাবে কাভারেজ দেন; ট্রাম্প তা পাবেন না বলে হয়ত উদ্বিগ্ন। ফলে ট্রাম্প চাইছেন এসব চ্যানেল গুলোর সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতায় পৌঁছাতে।

এদিকে নির্বাচনে হিলারির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণাকারী নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গেও বৈঠক বাতিল, তারপর আবারও বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং শেষ পর্যন্ত বৈঠকে তীব্রতর আক্রমণ করেন ট্রাম্প। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের মাহাত্ম্য তুলে ধরেন।  

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ট্রাম্প-মিডিয়া সম্পর্ক?

এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর দিক থেকেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।  উগ্র রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের শীর্ষ ব্যক্তি এবং ট্রাম্পের অন্তবর্তী উপদেষ্টা দলের মুখ্য কৌশলপ্রণয়নকারী স্টিভ ব্যাননকে নিয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প তার সঙ্গে বর্ণবাদের সংযোগ অস্বীকার করেন। ইন্টারসেপ্টে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্পের এ জবাবের পর প্রশ্নকর্তা তুলে ধরতে পারতেন যে মাত্র চার মাস আগে ব্যাননের অধীনে ব্রেইটবার্ট নিজেদের উগ্র-ডানপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একইভাবে কেউ-ই জিজ্ঞেস করেননি কেন ট্রাম্পের কাছে তার কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন ট্রাম্প কোনও ট্রাস্টের কাছে তার সম্পদ হস্তান্তর করবেন না কিংবা কেন তিনি মনে করেন তার আবাসন প্রকল্পগুলো বিক্রি করা সম্ভব নয়।

ইন্টারসেপ্ট এর ওই বিশ্লেষণে আরও বলা হয়,  কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা যদি সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা অথবা বেসরকারিকরণের বিল, আয়কর পরিকল্পনার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত স্ববিরোধ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে নিয়োগের প্রশ্নে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।

এভাবেই সম্পর্কের মধ্যে বৈরিতা ও স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া দুইই অব্যাহত রয়েছে।

কোনদিকে মোড় নেবে সম্পর্ক?

এই যে সম্পর্কের বৈরিতা আর স্বাভাবিকতার যুগপথ যাত্রা, মার্কিন মিডিয়ার জন্য তা শুভ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ট্রাম্প-মিডিয়া সম্পর্ক?

ফরচুন সাময়িকি এক প্রতিবেদন বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এমনিতেই টিভি কোম্পানিগুলোর আয় কমে গেছে। এমন সময় মিডিয়াকে অপছন্দ করা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এটা একেবারে ‘মড়ার ওপর খড়ার ঘা’ হতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা মার্কিন সংবিধান প্রথম সংশোধনী সংকটেও পড়তে পারে। কারণ পুরো নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। প্রতিটি বক্তব্যে তার অপছন্দের সাংবাদিকদের সমালোচনা করেছেন। এমনকি তার সমর্থকদেরও মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে আঘাত করতে উৎসাহিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সংবাদমাধ্যমের প্রতি ট্রাম্পের আচরণ আরও খারাপ হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সামনে না আসাকে এক ধরনের বিরোধিতা হিসেবেও মনে করা হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের সাবেক সম্পাদক ও ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান ব্যাকুয়েট মন্তব্য করেন, ‘আমি এধরনের নিরবতা কখনও দেখিনি। আমি মনে করি, আর কখনও এমন কোনও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পাবো না, যিনি আমাদের নিয়ে টুইট করেন।’

সবমিলে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কর্পোরেট স্বার্থের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাভাবিকভাবে হাজির করবে নাকি পুরনো আক্রমণ অব্যাহত রাখবে তা নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সংবাদমাধ্যম কি একপেশেভাবে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে যাবে নাকি সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। ‘ফোর্থ এস্টেট’ বলে পরিচিত সংবাদমাধ্যম হয়ত তার কার্যকর ভূমিকা হারিয়ে ফেলবে কিনা, সেই আশঙ্কাও করা হচ্ছে। সবকিছুই নির্ভর করবে ট্রাম্পের আসন্ন পদক্ষেপগুলো আর মার্কিন কর্পোরেট মিডিয়ার ভূমিকা বিচারের ওপর। 
সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, গার্ডিয়ান, বিবিসি, পলিটিকো, ফরচুন

/বিএ/

সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় ২ জঙ্গি নিহত
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় ২ জঙ্গি নিহত
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!