এ বছর নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের হয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন তার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন; সোমবার এমন খবর দিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এবং সংবাদমাধ্যম এনবিসি। জুলাইয়ের ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনের আগেই এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ঘটনাকে নীতিবিরুদ্ধ সাংবাদিকতা বলে উল্লেখ করেছে স্যান্ডার্স শিবির। তারা প্রশ্ন তুলেছে এই ধারার সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে। রাজনীতি বিশ্লেষকরাও এপি-এনবিসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটদের ডেলিগেট সংখ্যা ৪,৭৬৩ জন। এদের মধ্যে প্রাইমারি আর ককাস থেকে নির্বাচিত ডেলিগেটের সংখ্যা হবে ৪২৫১ জন। আর সুপার ডেলিগেটের সংখ্যা ৭১২ জন। মোট ৪৭৬৩ জন সাধারণ ও সুপার ডেলিগেটের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক ডেলিগেট যাকে ভোট দেবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন ডেমোক্র্যাটদের হয়ে। সে হিসেবে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে একজন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে পেতে হবে ২৩৮২ জন ডেলিগেটের সমর্থন। জুলাইয়ে ফিলাডেলফিয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন। সেই সম্মেলনেই ডেলিগেটদের সমর্থন আর সুপার ডেলিগেটদের ভোটে নির্ধারিত হবেন ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
সুপার ডেলিগেটসরা ভোট দেবেন ন্যাশনাল কনভেনশনে। তারা এখন যাকেই সমর্থন করুন না কেন, জুলাইয়ের ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনে তারা সেই সমর্থন বদলে অন্য কাউকে ভোট দিতে পারেন।
তবে সেই ন্যাশনাল কনভেনশনের আগেই এপি এবং এনবিসি নিউজের পক্ষ থেকে সোমবার দাবি করা হয়, এরইমধ্যে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন হিলারি। তারা জানায়, হিলারির ১ হাজার ৮১২ জন ডেলিগেটের সমর্থনের সঙ্গে যোগ হওয়া ৫৭১ জন সুপার ডেলিগেটের সমর্থন তার প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছে। এপির দাবি, সুপার ডেলিগেটসরা মার্কিন ওই বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন যে তারা তাদের সমর্থন বদলাবেন না। যদিও সুপার ডেলিগেটসরা যে তাদের এখনকার সমর্থন বদলাবেন না, তা এপি কী করে নিশ্চিত হচ্ছে তা তারা জানাননি। তারা জানাননি কেন তারা সুপার ডেলিগেটসদের কথার ওপর ভরসা করছে। তাই এপি-এনবিসির দাবিকে ভিত্তি হিসেবে ধরে হিলারির প্রার্থিতা চূড়ান্ত বলা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্যান্ডার্স শিবির। তারা একে নীতিবিরুদ্ধ সাংবাদিকতা বলেও উল্লেখ করেছে।
এপি এবং এনবিসির দেওয়া নিশ্চয়তাকে সরাসরি প্রত্যাখান করেছেন স্যান্ডার্স স্বয়ং। স্যান ফ্রান্সিসকোর এক র্যালি থেকে সোমবার মধ্যরাতে স্যান্ডার্স সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এখনও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ ডেলিগেটস সংগ্রহ করতে পারেননি। তাকে নির্ভর করতে হবে সুপার ডেলিগেটসদের ভোটের ওপর। সুতরাং ২৫ জুলাইয়ের ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। কেননা সুপার ডেলিগেটসরা তাদের সমর্থন পরিবর্তন করতে পারেন চাইলেই’।
স্যান্ডার্সের একজন মুখপাত্র ফক্স নিউজের কাছে প্রশ্ন তোলেন, এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সম্মেলনের স্পষ্ট ঘোষণার আগেই সুপার ডেলিগেটসদের ভোটের ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া ভুল’।
স্যান্ডার্সের পক্ষের প্রচারণাকারী, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সাবেক একজন স্টেট লেজিসলেটর ‘ডেমোক্র্যাসি নাউ’কে বলেছেন, ‘এটা একেবারেই নীতিবিরুদ্ধ। এটা হতে পারে না। প্রত্যেক সুপার ডেলিগেটস-এর ভোট গণনার আগে কোনও সংবাদমাধ্যম এমন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এটাকে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা আকারেও দেখা যেতে পারে।’
দিজ ক্যান্ট বি হ্যাপেনিং নামের এক অনলাইন সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডেভ লিন্ডরফ। তিনি বিকল্প সংবাদমাধ্যম কাউন্টার পাঞ্চকে বলেছেন, হিলারির মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পেছনে কর্পোরেট মিডিয়ার কারসাজি রয়েছে।
এদিকে ব্রিটিশ অ্যাকটিভিস্ট ও লেখক শেন রায়ান পেস্ট ম্যাগাজিনের এক লেখায় দাবি করেছেন, ন্যাশনাল কনভেনশনের আগেই হিলারির প্রার্থিতা চূড়ান্তের ঘোষণা মার্কিন রাজনীতি ও সাংবাদিকতার জন্য একটা লজ্জার বিষয়’।
সূত্র: বিবিসি, এপি, এনবিসি, ডেমোক্র্যাসি নাউ, ভক্স নিউজ, ফক্স নিউজ, কাউন্টার পাঞ্চ, পেস্ট ম্যাগাজিন
/বিএ/