X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০ বছরের ব্যবধানে অরুন্ধতীর দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশিত

বিদেশ ডেস্ক
২১ মে ২০১৭, ১৪:০০আপডেট : ২১ মে ২০১৭, ১৬:২৩

অরুন্ধতীর দ্বিতীয় উপন্যাস ১৯৯৭ সালে প্রথম উপন্যাস ‘গড অব স্মল থিংস’ প্রকাশিত হওয়ার পর ২০ বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত হলো অরুন্ধতীর দ্বিতীয় উপন্যাস  ‘দ্য মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস’। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই বই প্রকাশের খবর দিয়েছে।
ন্যায়, সমতা আর মুক্ত পৃথিবীর পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অরুন্ধতী রায় বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিশ্বজুড়ে এক পরিচিত নাম। ভারত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন তিনি। ইরাক-আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন শাণিতভাবে। কাশ্মিরের জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে দাঁড়িয়েছেন নিজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ভারতের মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে মূলধারার বুদ্ধিজীবী এবং এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অবস্থান নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র খেতাব।
এসব বিভিন্ন বিষয়ে লেখা তার বহু রচনা নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পাঠক তা সাদরে গ্রহণও করেছেন। তবে ‘গড অফ স্মল থিংস’-এর পর আর কোনও উপন্যাস লেখেননি তিনি। কথা সাহিত্যের কথা বলতে গেলে তিনি ৯৭’এর পর থমকে ছিলেন ২০০৬ পর্যন্ত। ১০ বছরের বিরতি দিয়ে তিনি ২০০৭এ লিখতে শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস’। তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’-এর প্রকাশক ব্রিটেনের হামিশ হ্যামিল্টন এবং পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া। উপন্যাসটির বহু বছরের কাহিনী আবর্তিত হয় পুরনো দিল্লি থেকে শুরু করে অগ্নিকুণ্ড কাশ্মির হয়ে মধ্যভারতে। যেখানে যুদ্ধই শান্তি, অথবা শান্তিই যুদ্ধ। যেখানে কখনও কখনও ‘স্থিতাবস্থা’ ঘোষণা করা হয়।
উপন্যাসের শুরুতে লেখা – ‘সে কবরস্থানে বাস করে, কোনও গাছের মতোই।’ এ গল্পটি আঞ্জুমের। যে পুরনো দিল্লিতে ছেলে হিসেবে বেড়ে উঠে। তখন তার নাম ছিল আফতাব। পরে তার স্থান হয় বাড়ির কাছের হিজড়েদের কাছে। সেখানে তার নতুন নামকরণ হয় ‘আঞ্জুম’। পরে তিনি হয়ে উঠেন হিজড়েদের অধিকার আদায়ের মুখপাত্র। গুজরাটের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে কোনও রকমে রক্ষা পেয়ে তিনি কবরস্থানে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে শুরু হয় তার এক নতুন জীবনের।

দ্বিতীয় উপন্যাস হাতে অরুন্ধতী

অরুন্ধতীর দ্বিতীয় উপন্যাসটি এক বেদনাত্মক প্রেমের গল্প, আবার তা প্রতিবাদেরও গল্প। যা আমাদের আশেপাশেই শোনা যায়। এ উপন্যাসেও অরুন্ধতী মানবিকতার জয়গানই লিখেছেন। যেখানে মানুষের প্রেম, আশাবাদ আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছে কাহিনী এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।

গত বছর আগস্টে অরুন্ধতী তার সাহিত্য-বিষয়ক ব্রিটিশ এজেন্ট ডেভিড গডউইনকে ফোনে এক শন্দের একটি ম্যাসেজ পাঠান – ‘ডান’। গডউইন পরদিন সকালেই দিল্লিতে চলে আসেন। তিনি জানান, প্রথমদিকে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলেন। তবে পাণ্ডুলিপিটি পড়ার পর তার সব সংশয় কেটে যায়। বইটি আরও ৩০টি দেশে প্রকাশিত হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

৪৬৪ পৃষ্ঠার ওই উপন্যাসে সমসাময়িক ঔপন্যাসিক ডিকেনস, তলস্তয় এবং গার্সিয়া মার্কেজের ছায়া পাওয়া যাবে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে। ‘গড অব স্মল থিংস’-এ যেমন পরিবার, সমাজ, রাজনীতির এক প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছিল কাহিনীর পরিক্রমায়। তেমনি ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ উপন্যাসে উঠে আসছে ভারতের এক ভিন্ন অর্থনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট। অরুন্ধতী সম্পর্কে লেখক বন্ধু পঙ্কজ মিশ্র বলেন, ‘ও সবসময় দুর্বলের প্রতি সহানুভূতিশীল। এটা এক বিরল গুণ। সে সবসময় ক্ষমতাহীন মানুষের পাশে থেকেছে।’

নতুন উপন্যাস প্রসঙ্গে প্রকাশনা সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই উপন্যাস প্রকাশ করা একই সঙ্গে সম্মানের ও আনন্দের। বিভিন্নভাবে এটি একটি অসাধারণ বই, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পড়া সেরা।’ প্রথম উপন্যাস ‘গড অফ স্মল থিংস’-এর জন্য সেবছরই বুকার পুরস্কার জিতেছিলেন অরুন্ধতী।

এর আগে গত অক্টোবরে হামিশ হ্যামিল্টন-এর প্রকাশনা পরিচালক সাইমন প্রসার এবং পেঙ্গুইনের প্রধান সম্পাদক মেরু গোখলে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘তার (অরুন্ধতী) লেখনি যেমন, তার চরিত্রগুলোও তেমনি অসাধারণ – প্রাঞ্জল শব্দের ব্যবহারে যে চরিত্রগুলো উদারতা ও সহমর্মিতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রতিটা শব্দই যেন জীবন্ত, যা আমাদের জাগিয়ে তুলে এক নতুন পথে দেখতে, অনুভব করতে, শুনতে ও যুক্ত হতে শেখায়। এসবের মধ্যদিয়েই উপন্যাসটি পেয়েছে নতুনত্ব, যা তাকে প্রকৃত উপন্যাসে পরিণত করেছে।’

অরুন্ধতী রায়

বইটি লেখার ক্ষেত্রে তার বন্ধু বুকার পুরস্কারজয়ী জন বার্গার উৎসাহ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অরুন্ধতী। ২০১১ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে তিনি জানিয়েছিলেন, কিভাবে জন তাকে তার দ্বিতীয় উপন্যাসটি লেখার জন্য অনুরোধ করতেন। তবে তখন অরুন্ধতী ভারতে মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে কাজ করছিলেন।

২০১১ সালে অরুন্ধতী ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেছিলেন, “প্রায় দেড় বছর আগে আমি তখন জনের বাড়িতে, জন বলছিল, ‘এখনই তোমার কম্পিউটার চালু করো এবং তুমি কি ফিকশন লেখছো, তা আমায় দেখাও।’ সম্ভবত পৃথিবীতে সে-ই একমাত্র ব্যক্তি, যে কিনা আমাকে একথাগুলো বলার সাহস রাখে। আর আমি তাকে কিছুটা পড়েও শোনালাম। সে বললো, ‘তুমি সোজা দিল্লি যাও, আর বইটা শেষ করো।” অরুন্ধতী ইন্ডিপেন্ডেন্টকে আরও বলেন, ‘আমি দিল্লিতে ফিরে আসি। আর এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টাইপরাইটারে লেখা একটি চিরকুট আসে আমার কাছে। তাতে মাওবাদীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাকে মধ্য ভারতের জঙ্গলে যেতে বলা হয়।’

উপন্যাসটি প্রকাশের আগে অরুন্ধতীর এজেন্ট ডেভড গডউইন বলেন, ‘কেবল অরুন্ধতকীর পক্ষেই এমন উপন্যাস লেখা সম্ভব, যা ২০ বছর ধরে লেখা হয়েছে। এখন তা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, কেননা আমরা প্রকাশক পেয়েছি। এই সুদীর্ঘ সময়টা সার্থক হয়েছে।’

/এসএ/বিএ/

সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা