X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মিরে পুলিশ-বিদ্রোহী সংঘাতে বিপাকে পরিবারের সদস্যরা

বিদেশ ডেস্ক
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৩২আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:৪২
image

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বিদ্রোহী পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়রা। অতি সম্প্রতি স্বজনদের আটক ও অপহরণ করে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে উভয় পক্ষকে। পুলিশ ও সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে বার বারই হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ এনেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের পরিবারের সদস্যরা। নিরাপত্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যকার লড়াইয়ে পরিবারকে টেনে না আনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী হয়রানি বন্ধ করুক এবং বিদ্রোহীরাও পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে লক্ষ্যবস্তু না করুক।

বিদ্রোহীদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিসার আহমেদ নামে এক তরুণকে জড়িয়ে ধরেছে স্বজন কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামিকরণ হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মিরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতা থেকে আলাদা করে শনাক্ত করে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদিন সবচেয়ে সক্রিয়। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটিকে ভারতের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। আদর্শগতভাবে সংগঠনটি কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে।

২৯ আগস্ট বুধবার এক হামলায় চার পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর কাশ্মিরের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার রিয়াজ নাইকুর বাবা আসাদুল্লাহ নাইকুসহ বেশ কয়েজন আত্মীয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার জের ধরে বিদ্রোহীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাশ্মিরের অনন্তনাগ, কুলগাম, সোপিয়ান ও পুলওয়ামা জেলায় বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে বিদ্রোহীদের আত্মীয়দের পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার পর পুলিশের আত্মীয়দেরও মুক্তি দেওয়া হয়।

কাশ্মিরের পুলওয়ামা এলাকার বাসিন্দা আসাদুল্লাহ নাইকু। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে তার ছেলে রিয়াজ নাইকু বিদ্রোহী সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাকে ও তার পরিবারকে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। জানালা ও আলমারি দেখিয়ে আসাদুল্লাহ দাবি করেন, এ ছয় বছরে তার বাড়িতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। জিনিসপত্র তছনছ করা হয়েছে। পেশায় দর্জি আসাদুল্লাহ বলেন, ‘২৯ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটের পুলিশ আমাকে আটক করে। কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম আমাকে মারাধর কিংবা হয়রানি করা হয়নি। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে লকআপে না রেখে আমাকে একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল।’

আসাদুল্লাহ বলেন, ‘তারা আমাকে কাপড় ও জুতা পরতে দিয়েছিল। পুলিশের ডেপুটি সুপার বলেছিলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর এসিড হামলা নিয়ে আপনার ছেলে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছে। তিনি আমাকে আরও বলেছেন, মনে রাখবেন, যদি কিছু হয় তবে আমরা আপনার ঘর উড়িয়ে দেব।’

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুনির আহমদ খান শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দাবি করেছেন, পুলিশ সম্পদের ক্ষতি সাধন করে না এবং ‘জঙ্গিদের’ আত্মীয়দের হয়রানি করে না। তিনি বলেন, ‘আমরা পেশাদার বাহিনী। আমরা কাউকে হয়রানি করায় বিশ্বাসী নই। তবে জঙ্গির আত্মীয় কিংবা বন্ধু যদি কোনও রকমের অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, তবে আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হিজবুল মুজাহিদীন নেতা রিয়াজ নাইকু
দুগরিপোরা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হিজবুল সদস্য লতিফ দারের মা ফাতিমার বসবাস। আসাদুল্লাহর মতো একই রকমের বর্ণনা পাওয়া গেছে তার কাছ থেকেও। তিনি অভিযোগ করেন, রাত সাড়ে ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তার কৃষক স্বামী গোলাম হাসান ও দুই ছেলেকে নিয়ে যায়। দুই ছেলেই রঙ মিস্ত্রী। ফাতিমা বলেন, ‘পুলিশ স্টেশনে তারা বললো, আপনার ছেলে ট্রালের পিংলিশ থেকে এক পুলিশ সদস্যের ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা আমার স্বামীকে বললো সে যেন ছেলে দারকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। একইসঙ্গে তারাও এটাও স্বীকার করেছে যে সে (ছেলে দার) কথা শুনবে না।’

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) দক্ষিণ কাশ্মিরের চার জেলা (পুলওয়ামা, অনন্তনাগ, সোপিয়ান ও কুলগাম) থেকে অপহৃত ১১ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল পুলিশ সদস্যদের আত্মীয়। শুক্রবার (৩১ আগস্ট) নাইকো, দার ও আরেক বিদ্রোহী আদিল আহমদের বাবাকে পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার পর পুলিশের অপহৃত আত্মীয়রাও মুক্তি পায়। ফাতিমার দুই সন্তানও মুক্তি পায়। পুলিশ সদস্যদের আত্মীয়রা ছাড়া পাওয়ার পর রিয়াজ নাইকু একটি অডিও বিবৃতি দেয়। সেখানে দাবি করা হয়, সন্তানহারা মায়ের কষ্টটা কেমন তা পুলিশকে উপলব্ধি করাতে ওইসব ব্যক্তিকে অপহারণ করা হয়েছিল।

নাইকো ও লতিফ দারের পরিবারের অভিযোগ, দক্ষিণ কাশ্মিরের চার জেলার কোথাও যদি কখনও সশস্ত্র বিদ্রোহজনিত ঘটনা ঘটে তখনই পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করে।

কাশ্মির
২০১৭ সালের অক্টোবরে এক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর এবং গত জুনে আওরঙ্গজেব নামে এক সেনা সদস্য নিহত হওয়ার পর কিভাবে তাদের ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে তারও বর্ণনা করেছে নাইকো ও লতিফ দারের পরিবারের সদস্যরা।

নাইকোর বাবা আসাদুল্লাহ বলেন, ‘২০১৭ সালের অক্টোবরে যখন এক পুলিশ সদস্য নিহত হলো, প্রায় ১০ জনের মতো মানুষ আমাকে মারধর করলো এবং আমার ওপর নির্যাতন চালালো। তারা ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট করলো এবং ছোটখাটো ইলেক্ট্রনিক জিনিসগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নিলো। আমাকে, আমার ভাইকে ও পরিবারের আরও দুই সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হলো। ১৭ দিন পর তারা আমাকে ছাড়লো। আওরঙ্গজেবের হত্যাকাণ্ডের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আবারও আমার পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালালো।’ আসাদুল্লাহর দাবি, পুলিশ এখনও রিয়াজ নাইকোর আত্মীয়দের আটকে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘রিয়াজের চাচারা ও দুলাভাই কী করেছে? তাদের কেন হয়রানি করা হচ্ছে?’

লতিফ দারের মা ফাতিমা জানান, আওরঙ্গজেব অপহৃত হওয়ার দিন তার অন্য ছেলেদের এমনকি বাড়িতে থাকা অতিথিদেরও মারধর করেছে সেনাবাহিনী। চারদিন নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার পর ঈদের আগে তার দুই ছেলে বাড়ি ফেরে।

যুদ্ধরত দুই পক্ষের জন্যই একটি বার্তা দিয়েছে পরিবারগুলো। তারা চাইছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনী হয়রানি বন্ধ করুক এবং বিদ্রোহীরাও পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে লক্ষ্যবস্তু না করুক। ফাতিমা বলেন, ‘প্রায় ২০ পুলিশ সদস্যের পরিবার আমার গ্রামে থাকে। তাদের কী দোষ? পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের ও আমাদের প্রতিবেশীদের হয়রানি করে। আমাদের দোষটা কী? এ হয়রানির কারণে অনেক তরুণ সশস্ত্র বিদ্রোহে যোগ দিয়েছে। গত ১৬ মাস ধরে আমি আমার ছেলেকে দেখি না।’

আসাদুল্লাহ মনে করেন, পুলিশ ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের পরিবারকে তাদের মতো থাকতে দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও বিদ্রোহীরা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করুক। এর মধ্যে পরিবারকে টেনে আনাটা তাদের ঠিক হবে না। আমরা এখানে গৃহযুদ্ধ চাই না।’

/এফইউ/এমপি/
সম্পর্কিত
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ