যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ভিন্নমতালম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন হওয়ার এক বছর আগে সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেই তাকে হত্যা করার কথা বলেছিলেন। ওই সময় এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে বলেছিলেন, যদি খাশোগি সৌদি আরব ফিরে আসতে রাজি না হন তাহলে এক গুলিতে শেষ করবেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এখবর জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি আরব। খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগের আঙ্গুল উঠে খোদ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের খবর অস্বীকার করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততার খবর অস্বীকার করা হয়। ওই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন মোহাম্মদ বিন সালমান। খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি জোরালো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান দেশটির কংগ্রেসকে জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বা বিষয়টি সম্পর্কে সৌদি যুবরাজ অবগত ছিলেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দাবি করে আসছেন, যুবরাজের বিরুদ্ধে প্রমাণ পর্যাপ্ত নয়, আরও তদন্ত হওয়া উচিত।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি এই ফোনালাপ অনুলিখন করা হয়েছে। জামাল খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রমাণ হাজির করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে এই অনুলিখন করা হয়েছে।
সৌদি যুবরাজের এই ফোনালাপ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত নজরদারিতে রেকর্ড করা হয়েছে। মিত্রদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের ফোনালাপ রেকর্ড করে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
প্রতিবেদন অনুসারে, এই ফোনালাপ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুবরাজ কথা বলেন তুর্কি আলদাখিল নামের এক জ্যেষ্ঠ সহযোগীর সঙ্গে।
আলোচনায় সৌদি যুবরাজ বলেন, খাশোগি যদি সৌদি আরব ফিরে আসতে না চান তাহলে জোর করে নিয়ে আসতে হবে। কোনও পদ্ধতিই যদি কাজে না লাগে তাহলে তিনি নিজে গিয়ে এক গুলিতেই হত্যা করবেন।
খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বুঝতে পারছে যে, খাশোগিকে হত্যা করতে প্রস্তুত ছিলেন যুবরাজ। কিন্তু এই আলোচনা হয়ত তিনি সরাসরি গুলি করার কথা বলেননি।
জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত জাতিসংঘের কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিউ ইয়র্ক টাইমস খবরটি প্রকাশ করলো। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক তদন্তকারী অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, “খাশোগি হত্যার ঘটনায় তুরস্কের তদন্তজনিত সক্ষমতাকে ‘চরমভাবে সংকুচিত ও ক্ষুণ্ন’ করেছে সৌদি আরব।” ৭ ফেব্রুয়ারি তারা প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। আগামী জুনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।
খাশোগি হত্যার ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক তদন্ত দলের প্রধান অ্যাগনেস ক্যালামার্ড গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুরস্ক সফরে ছিলেন। তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, খাশোগি সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের হাতে নৃশংস ও পূর্ব পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছেন। সৌদি আরব তদন্তের ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখায়নি। বরং তুরস্কের তদন্ত করার সক্ষমতাকে ‘চরমভাবে সংকুচিত ও ক্ষুণ্ণ করেছে, তুর্কি তদন্তকারীদেরকে কনস্যুলেটে হত্যাস্থলে প্রবেশের অনুমতি দিতে ১৩ দিন পার করে দিয়েছে সৌদি আরব।