X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

বিদেশ ডেস্ক
২১ মার্চ ২০১৯, ০১:৪০আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৯, ১৯:৪৩
image

বর্ণবাদী বিদ্বেষ নিউ জিল্যান্ডের যে স্থানটিতে বন্দুকের গুলি হয়ে আছড়ে পড়েছিল, সেই ক্রাইস্টচার্চে সব সময়ই ধ্বনিত হয়ে আসছে বিশ্বমানবের ঐকতান। ভারতীয় উপমহাদেশ আর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে অভিবাসী হয়েছে। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় তাদের জড়িয়ে নিয়েছে নিজেদের বুকে। বিশ্বমানুষের এই সম্মিলনের প্রতীক হয়েই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে হামলার শিকার হওয়া নুর মসজিদ। হামলাকারীর বিদ্বেষী ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর তাই কোনও পাল্টা ঘৃণাবাদ স্পর্শ করতে পারেনি ক্রাইস্টচার্চের বাসিন্দাদের। বরং বিভক্তি, ঘৃণা আর বিদ্বেষের বিপরীতে সম্মিলন আর ভালোবাসার শক্তিতে আবারও জাগ্রত হতে চাইছে ছবির মতোন সুন্দর শহরটি। ক্রাইস্টচার্চ বার্তা দিচ্ছে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের শরীরে একই রক্ত প্রবহমান, সব মানুষের বেদনাস্থলও এক।

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

১৫ মার্চ (শুক্রবার) ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদ। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউয়ের আল নুর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তাণ্ডবের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। হামলায় নিহত অর্ধশত মানুষের মধ্যে আল নুর মসজিদে সংঘটিত হামলায় প্রাণহানী হয় ৪৩ জনের।  নিউ জিল্যান্ডের ইসলামিক নারী কাউন্সিলের আনজুম রহমান বিবিসিকে বলেছেন, নির্মাণের সময় আল নুর ছিল বিশ্বের সবথেকে দক্ষিণে অবস্থিত মসজিদ। মসজিদটি সবসময়ই তাদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতেই মসজিদটি নির্মিত। পরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলিমদের উপস্থিতিতে মসজিদটি হয়ে ওঠে বৈচিত্র্যের আধার। আল নুর-এর পাশাপাশি লিনউডের আরেকটি মসজিদে যারা হামলার শিকার হয়েছেন, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে নিউ জিল্যান্ডে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। সেখানে যেমন মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, সিরিয়ার বাসিন্দা রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত আর বাংলাদেশের অভিবাসীরাও।

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

আল নুরে যারা নামাজ আদায় করেন, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশই শরণার্থী। যারা হামলার কবলে পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তাও। একসময় ছিলেন ফুটবল তারকা। আক্রান্তদের মধ্যে ছিলেন ১৯৮০’র দশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের মুখে আফগানিস্তান থেকে পালানো এক বয়স্ক ব্যক্তিও। এরা সবাই নিউ জিল্যান্ডে নতুন করে বসতি গড়েছিলেন। আনজুম রহমানের পরিবার ১৯৭২ সাল থেকেই নিউ জিল্যান্ডে বাস করছেন। তিনি বলেন, আল নুরের মতো দেশটির মসজিদগুলোর বৈচিত্র্যে প্রতীয়মান হয় যে স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় কীভাবে সবাইকে কাছে টেনে নেয়। আনজুম রহমান বলেন, আমার মনে হয় নিউ জিল্যান্ড সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ যারা এটা সফলভাবে করতে পেরেছে। দুর্ঘটনাক্রমে এটা ঘটেনি। এটা এমন কিছু যার জন্য আমরা এবং আমাদের বাবা-মায়েদের প্রজন্ম এর জন্য কাজ করেছে।

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

ক্রাইস্টচার্চের হাগলি পার্কে শারীরিক কসরত করছিলেন দুই ব্যক্তি। উল্টোপাশে একটা গাছের কাছে এসে থমকে দাঁড়ান তারা। হামলায় হতাহতদের স্মরণে সেখানে রাখা ফুল আর শোকবার্তায় চোখ রেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তাদের একজন। কেঁপে ওঠে তার ঠোঁট। সঙ্গে থাকা সঙ্গী তার শরীরে আলতো করে হাত রাখেন। সামলে নিয়ে আবারও শারীরিক কসরত শুরু করেন তারা। এদের একজন ভারত থেকে আসা ২৫ বছর বয়সী জাওয়াকার সেলভারাজ। অপরজন ৫৩ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়ানর মরগান।

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

শুক্রবার হামলা শুরুর ১৫ মিনিট আগেও পার্কে ছিলেন সেলভারাজ। ওইদিনের নৃশংসতা তাকে ভীত করে তুলেছে। ‘জানি নতুন করে আর কিছুই হবে না... তবুও অভিবাসী মনের ভীতি তাড়া করেই যাচ্ছে।’ বিবিসিকে বলেন তিনি। মরগানের কাছে এই পার্ক ক্রাইস্টচার্চের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি মনে করেন, যেখানে তার সঙ্গী সেলভারাজ ভয় পাচ্ছেন, সেটি তাদের জন্য (অভিবাসী)স্বর্গ হওয়া উচিত ছিলো, হওয়া উচিত ছিলো এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। বিচলিত মরগানের আশা, অভিবাসী বন্ধুদের প্রতি তাদের প্রেমানুভব প্রদর্শনের কোনও না কোনও একটা রাস্তা ঠিকই বের হয়ে যাবে।

‘আমাদের শরীরে একই রক্ত, হৃদয়ে একই বেদনা’

পার্কের একপাশে যখন মরগান ভালোবাসাকে সামনে আনার পথ খুঁজে চলেছেন, অপরপাশটি তখন ভরে যাচ্ছে  ভ্রমণরতদের রেখে যাওয়া শোকবার্তা আর ফুলে। কেউ বার্তা দিয়ে গেছেন, ‘আমরা একই বাতাসে শ্বাস নিই, হেঁটে বেড়াই একই মাটিতে।’ কেউ লিখে গেছেন, ‘আমাদের শরীরে একই রক্ত প্রবাহিত।’ কেউ ভরসা দিয়ে যাচ্ছেন ‘এটাই আমাদের আবাস। এখানে তোমরা কেউ অনিরাপদ নয়।’ কিংবা ‘তোমার জন্য, তোমার পরিবার-স্বজন আর সম্প্রদায়ের জন্য আমাদের হৃদয় কেঁদে ওঠে। তোমাদের ব্যথা আমাদের বুকও বিদীর্ণ করে। তোমাদের কান্না আমাদের চোখ থেকেও জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে।’ 

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ
অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করলো রাশিয়া
সর্বশেষ খবর
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত