নতুন শহরে যেতে আকাশপথে ভ্রমণের জন্যই সাধারণত বিমানবন্দরে যাওয়া হয় মানুষের। অসংখ্য বাতি, খাবার-দাবারের দারুণ সুবিধা, চলাফেরার বিশাল ফাঁকা জায়গা, রানওয়ে দেখা, কাজ করা ও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগসহ অনেক কিছুই থাকে বিখ্যাত বিমানবন্দরগুলোতে। কিন্তু কয়েকটির স্থাপত্য বা নির্মাণশৈলী পর্যটকদের কাছে কাঙ্ক্ষিত। বিখ্যাত মার্কিন স্থাপত্য সমালোচক পল গোল্ডবার্জার এমন আটটি বিমানবন্দরের তালিকা তৈরি করেছেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে স্থাপত্যের সমালোচনা লিখে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখেন এই ব্যক্তিত্ব। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হোয়াই আর্কিটেকচার ম্যাটারস’।
মাদ্রিদ-বারাহাস বিমানবন্দর (স্পেন)
স্থাপত্য সমালোচক পল গোল্ডবারজারের প্রিয় স্থাপনার মধ্যে অন্যতম স্পেনের মাদ্রিদ-বারাহাস বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৪। ২০০৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এটি ডিজাইন করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রিচার্ড রজার্স। আধা মাইল জুড়ে সূর্যের আলোয় দিনের একেক সময় একেক রঙ ধারণ করে স্টিলের কারুকার্যময় এই বিমানবন্দর। বিশেষ করে বহির্গমন বিভাগ থেকে এই পরিবর্তন ভালোভাবে দেখা যায়।
বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (চীন)
নতুন ঢঙের বিমানবন্দর সাজানোর বেলায় এর ডিজাইনার স্যার নোম্যান ফস্টারকে অন্য সবার চেয়ে সফল মনে করেন স্থাপত্য সমালোচক গোল্ডবার্জার। বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডিজাইন শেষ হয় ২০০৮ সালে। অলিম্পিক গেমসকে সামনে রেখেই নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। টার্মিনাল-৩ দেখলে বোঝা যায়, এটি ভাগ করা হয়েছে দুটি বিশাল ত্রিকোণাকৃতির অংশে। আর এই দুটো অংশকে সংযুক্ত করেছে একটি রেলগাড়ি। এটি স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণীয়।
কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওসাকা, জাপান)
জাপানের ওসাকা শহর থেকে ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটাই স্থপতি রেনজো পিয়ানোর সবচেয়ে স্মরণীয় কাজ। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, ১৯৮৮ সালে মানুষের গড়া কোনও দ্বীপে একটি বিমানবন্দরের ডিজাইন করে পুরস্কার জেতেন তিনি। এর ছয় বছর পর সত্যিই এমন হয়েছে! ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। দিনে ২৪ ঘণ্টাই সেখানে উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। পরে ওই দ্বীপরাজ্যকে আড়াই মাইল দীর্ঘ একটি দ্বি-স্তর সেতু দিয়ে মূল ওসাকা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (জেদ্দা, সৌদি আরব)
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেদ্দার বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আমেরিকান প্রতিষ্ঠান স্কিডমোর, ওউইংস অ্যান্ড মেরিলের এই ডিজাইনে পাওয়া যায় সৌদি আরবের মরুভূমির যাযাবর জীবনের সারাংশ। মরুভূমির আঁচ থেকে যাত্রীদের প্রশান্তি দিতে হজ টার্মিনালের ছাদ সাজানো হয়েছে তাঁবুর মতো। বিমানবন্দরটির স্থিরচিত্র মুগ্ধ করেছে স্থাপত্য সমালোচক পল গোল্ডবার্জারকে।
র্যালেফ-ডারহ্যাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (নর্থ ক্যারোলিনা, যুক্তরাষ্ট্র)
মানসম্পন্ন স্থাপত্য আছে এমন বিমানবন্দরের কথা বললেই চলে আসে র্যালেফ-ডারহ্যাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২। এটি ডিজাইন করেছেন আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ফেনট্রেস আর্টিটেক্টস। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যে ২০১১ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্টিলের বিকল্প হিসেবে এর ভেতরের পুরোটাই কাঠ ও কাঁচের সমন্বয়ে সাজানো। কৃত্রিম কোনও আলোও নেই সেখানে। পুরোটাই প্রাকৃতিক। এর ছাদ নর্থ ক্যারোলাইনার পাইডমন্ট পর্বতে অনুপ্রাণিত।
অ্যারোপুয়ের্তো ডি ক্যারাসকো (মন্টেভিদেও, উরুগুয়ে)
উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিদেওর অন্যতন দর্শনীয় স্থান ৪৫ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ক্যারাসকো বিমানবন্দর। বিখ্যাত স্থপতি রাফায়েল ভিনোলির ডিজাইনে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে। কাচের ব্যবহার ও প্রসারিত ছাদের সম্মিলনে অন্যমাত্রা রয়েছে এতে। বছরে ৩০ লাখ যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ বিমানবন্দরের স্থাপত্য দেখতেই বারবার উরুগুয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন সমালোচক পল গোল্ডবার্জার।
টিডব্লিউ ফ্লাইট সেন্টার টার্মিনাল (জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউ ইয়র্ক)
গগনচুম্বী অট্টালিকার শহর নিউ ইয়র্কের এই টার্মিনাল এখন আর সচল নেই। তবে স্থাপত্য সমালোচক গোল্ডবার্জার মনে করেন, এটি এখনও স্থাপত্যের এক বিস্ময়। ইরো সারিনেনের ডিজাইন করা এই বিমানবন্দর চালু হয় ১৯৬২ সালে। এর খুঁত ছিল একটাই— বড়সড় উড়োজাহাজ পরিচালনা কিংবা প্রচুর যাত্রীর জন্য অনুপযুক্ত। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এটি অকার্যকর। তবে নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে টিডব্লিউ টার্মিনাল সর্বকালের সেরা বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মাত্তেও পেরিকোলি ম্যুরাল (জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউ ইয়র্ক)
জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমেরিকান এয়ারলাইন্সের টার্মিনালে রয়েছে ১২১ মিটার দীর্ঘ একটি চমৎকার দেয়ালচিত্র। ইতালিয়ান স্থপতি ও চিত্রকর মাত্তেও পেরিকোলিকে এই টার্মিনালের দেয়ালে দারুণ ম্যুরাল আঁকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত এটি দেখতেই এ বিমানবন্দরে অনেকে পা রাখেন। গোল্ডবার্জারের কাছে বিভিন্ন বিমানবন্দরের প্রিয় জিনিসগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
সূত্র: সিএনএন