X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: নবাবগঞ্জ বাজার রোডে পেটপূজা

সোহেলী তাহমিনা
০৩ মার্চ ২০১৯, ১৯:০০আপডেট : ০৩ মার্চ ২০১৯, ১৯:১৭

সুলতানি, মোগল, নবাবি, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলের পর আমাদের প্রাণের ঢাকা শহর ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসেছে। ইতিহাসের কিছু কিছু অংশের প্রভাব কোথাও খুব বেশি, কোথাওবা একেবারেই নেই। ইতিহাস ও আধুনিকতাকে একসঙ্গে বয়ে চলেছে এই শহরের বিশেষ অংশ পুরান ঢাকা। এখানে ইতিহাস এখনও কথা বলে, ঐতিহ্য সগৌরবে মাথা উঁচু করে চলে। এই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থান, সংস্কৃতি খাবার নিয়ে জার্নির ধারাবাহিক আয়োজন।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: নবাবগঞ্জ বাজার রোডে পেটপূজা বিখ্যাত ফুড ভ্লগার ও ‘দ্য ফুড রেঞ্জার’ ইউটিউব চ্যানেলের পরিচালক কানাডার ট্রেভর জেমস বাংলাদেশ ভ্রমণ নিয়ে প্রথম ভিডিওতেই পুরান ঢাকার স্ট্রিট ফুডকে তুলে ধরেছেন। জার্নিতে এবার পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ বাজার রোড জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য মুখরোচক খাবার নিয়ে কথা হোক। আজিমপুর থেকে লালবাগ রোডের শেখ সাহেব বাজার মসজিদের দিকে যাওয়ার পথে হাতের ডান দিকে বেশ কয়েকটি গলি ধরেই এই রোডে পৌঁছানো যায়। অথবা রিকশা নিয়ে সরাসরি সুবল দাস লেনের শেষে নেমে যেতে পারেন। তারপরে পায়ে হাঁটাই সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, নবাবগঞ্জ বাজার রোডের খাবার উপভোগ করতে চাইলে সন্ধ্যার দিকেই সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশেষত শীতকালে সবচেয়ে বেশি বিচিত্র খাবারের পসরা সাজানো হয় এই সড়কে। তবে সকালের দিকে পরোটা দিয়ে নাশতা করার জন্য এখানে বেশকিছু স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে সুস্বাদু মাঠা আর খাঁটি ছানার তৈরি লাড্ডু। পাইকারি মূল্যে নন-ব্র্যান্ডেড চা-পাতাও বিক্রি হয় একটি দোকানে। মিষ্টি আর বাকরখানির দোকানগুলো সকাল থেকেই খোলা থাকে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে শুরু হয় বিরিয়ানি আর মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। তবে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মাঠা ছাড়া এসবসহ আরও অনেক কিছুই পাওয়া যায়।

মা শাহী হালিম সুবল দাস লেন থেকে ডান দিকে এগিয়ে প্রথমেই পড়বে ‘মা শাহী হালিম’। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চলছে দোকানটি। আশেপাশের কয়েক রোড জুড়েই এর বেশ সুনাম। বড় ভাই হারুনের সঙ্গে মিলে শুরু করলেও এখন ছোট দুই ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও জিয়াউর রহমান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। দুই ভাইয়ের একজন সব উপাদান একত্র করে দোকানেই হালিম তৈরি করেন। অন্যজন পরিবেশন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ সামলান।
পুরান ঢাকার অলিগলিতে: নবাবগঞ্জ বাজার রোডে পেটপূজা মুরগি, খাসি ও গরুর মাংস দিয়ে হালিম তৈরি হয় এখানে। অত্যন্ত সুস্বাদু এই খাবার বেশ সাশ্রয়ী। সর্বনিম্ন ৩৫ টাকায় এখানে আধা বাটি মুরগির হালিম বিক্রি হয়। প্রতিষ্ঠার পরে একবার দোকানের স্থান পরিবর্তন হয়েছে। সম্প্রতি এর আয়তন বাড়ানো হয়েছে। ফলে দোকানের বাইরে রাস্তায় ক্রেতাদের লাইন কিছুটা হলেও ছোট হয়ে এসেছে।

সিদ্দিকের ডিম পোয়া একটু সামনে এগোলেই দেখা যাবে পুরো নবাবগঞ্জ বাজার রোড জুড়েই রয়েছে বেশকিছু চায়ের স্টল ও ভাজাপোড়া খাবারের দোকান। এগুলোর মধ্যেই সাত শহীদ কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশপথ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে নামহীন একটি রেস্তোরাঁ। এখানে কোনও ঘর বা ছাদ নেই। কমিউনিটি সেন্টারের দেয়ালের সঙ্গে মাথার ওপরে চাঁদোয়া রেখে এই রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠা। এভাবেই এটি পরিচালনা করা হয়। এখানে ক্রেতাদের বসার জন্য রয়েছে নিচু বেঞ্চ ও প্লাস্টিকের স্টুল। বিশালাকার তাওয়ায় সবসময়ই ভাজা হচ্ছে লুচি, পরোটা, টিকিয়া, কাবাব, চাপজাতীয় বিভিন্ন খাবার। একটু বেশি ভাজা হলেও খাবারের স্বাদ এখানে ভালো। মূল্যও সাশ্রয়ী। তবে পড়ন্ত বিকালের আগে এই রেস্তোরাঁর কোনও অস্তিত্বই পাওয়া যায় না।

ডালরুটি ও দিলীপ শাহের দধি মিষ্টির জন্য প্রসিদ্ধ এই রোডে রয়েছে বেশ কয়েকটি দধির দোকান, যেখানে ঘরে তৈরি টাটকা দই ও খিরসা বিক্রি হয়। এসব দোকানের বয়স মোটামুটি ১০০ বছরের কাছাকাছি বা বেশি। যেমন দিলীপ শাহের দোকান। তার অবর্তমানে ছেলে ও ছোট ভাই ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। দোকানটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তার দিলীপ শাহের পিতামহ। অন্যদিকে চিরায়ত মিষ্টির দোকানগুলোতে সাধারণ মিষ্টি ও জিলাপীর পাশাপাশি সকালে গরম গরম লুচি ও হালুয়া দিয়ে নাশতার ব্যবস্থা রয়েছে।

পিঠাওয়ালা বিকালের পর থেকেই সড়কের বিভিন্ন কোণে চোখে পড়বে বেশকিছু পিঠা বিক্রেতা। যেখানে শুধু ভাপা আর চিতই পিঠা ছাড়াও রয়েছে পাটিশাপটা, পোয়া পিঠা, ডিম পোয়া, তেলের পিঠা, পাকান পিঠা, পুলি পিঠাসহ আরও অনেক রকমের পিঠার সমাহার। এমন বৈচিত্র্যময় পিঠার পাশাপাশি দুটি অস্থায়ী আয়োজন নজর এড়ায় না নবাবগঞ্জ বড় মসজিদের ঠিক সামনেই। এখানেই আরও আছে ‘ডালরুটি’ নামক একটি মাত্র প্রজাতির ভিন্ন ধরনের পিঠা বিক্রয়কারী একটি দোকান। এখানকার মূল বিক্রয় সামগ্রী সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার দ্রব্যাদি। মসজিদটির একটু আগে নবাব বাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ ঘেঁষেই রয়েছে সিদ্দিক মামার পোয়া পিঠার (মূলত এক ধরনের পাকোড়া) দোকান। বছরজুড়েই এখানে সন্ধ্যা নেমে এলে পিঠা তৈরি করেন তিনি। এসব পিঠার দাম বেশ সাশ্রয়ী। মাত্র ৫ টাকা থেকে শুরু।

ছবি: লেখক

* নবাবগঞ্জ রোডের বিরিয়ানি ও কাবাবের কথা থাকছে পরের কিস্তিতে।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত