X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় দশ

বীথি রহমান
১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০০আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০০

নিমন্ত্রণ

তোমাকে নিমন্ত্রণ করছি, এসো
মদিরা, চা, চুম্বন
যা কিছু চাও, নিয়ো
এই কামিনীকাঞ্চন ঘরে আমি এক
রোদ্দুরমাখা বন্দিনী

ঝুল-বারান্দা সৌরভে বিভোর
আমাকে ফুৎকার দেয়
অপরাজিতা-নীল
নিমন্ত্রণ গ্রহণ করো, এসো
ওষ্ঠচাপে মধ্যাহ্নে নামাই
চাঁদনি পসর যামিনী।


ডুব

এখানে বৃষ্টি হচ্ছে খুব
বাইরে ধারা যেমনতেমন, মুষলধারা চোখে
কোথায় তুমি ভিজবে বলো, কোথায় দেবে ডুব?


এতো কাছে এলে

এতো কাছে এলে; তোমার বুকে আমার শ্বাস মিশে গেল
ঠোঁটে ডুবল ঠোঁট
আমার নাসারন্ধ্র পেল তোমার মদির গন্ধ
তুমি এতো কাছে এলে; তোমার চোখে চোখ পড়ল
অথচ তোমাকেই দেখতে পেলাম না

তোমার ভেতর ডুবে গিয়েও তোমাকে দেখতে চাই
এটুকু দূরত্ব রাখো


নভেম্বর পেইন

নভেম্বর মানেই তো তুমি
তোমার প্রেম, স্পর্শ
শরীরজুড়ে রোদ্দুর আর আগুন

আগুন মানে তো তুমি
তোমার কাঁধ, বাহু
হিংস্র থাবায় খুঁজে নেয়া
পাহাড় আর অরণ্যের সুর

সুর মানে দেহের ভেতরে
তোমার মরণকামড়
গভীর জলে ভেসে থাকা কুয়াশার রাতে
তারপর; সুন্দরের দিকে তাকিয়ে যেভাবে মরে যায় দিনের আলো
ফের আমিও নভেম্বরের আলো থেকে
বাড়ি ফিরি একা
বাড়ি ফিরি, আমার শূন্য সে বাড়ি
যে বাড়িতে রেখে গেছো তোমার সুন্দর আঙুলের ছাপ
আমার যুগল পূর্ণিমা স্তনে


তুমি প্রেমে পড়েছো

সত্যি বলতে কী, আমি যদি আজ
লাল না পরে কালো পরতাম
তবু তোমার চোখ একইরকম মুগ্ধ হতো
আমাকে দেখতে দেখতে তোমার
সামনের আর সব আলো নিভে যেত
চোখ খসে যেত
অথৈ অন্ধকারেও তোমার দৃষ্টি নিভতো না
দেখতো আমার নিতম্বে রাখা হাত
হাতে পরা সবুজ চুরি, এলোচুল
ঈষৎ ফাঁকা ঠোঁট
আর সে ঠোঁটে ধরে রাখা পৃথিবীর তাবৎ সুরা

সত্যি বলতে কী
আমি যেভাবেই আজ বসি না কেন
কী টুলে, কী চেয়ারে
কী আবৃত, কী অনাবৃত
তুমি আজ মাছিই হতে চাইবে
কেনো না তুমি প্রেমে পড়েছ


তাকেই মনে পড়ে

আমি অবিশ্বাস্যভাবে প্রেমে পড়েছি
যেমন শাওন দিনে চৈত্রের তীব্র খরা
কী নিদারুণ বিস্মিতকরণ-
সেইভাবে, অনেক পথ হেঁটে হেঁটে আমি
এইখানে থেমেছি
অনেক মন ঘেঁটে ঘেঁটে
এই মুখে তাকিয়েছি
হারিয়েছি অনন্ত রাজসিক প্রেমে

আমার তাই এই অধীরতা
হৃদয়ে নেশাতুর ব্যথা
দিন থেকে ক্ষয় হয়েছে সোনালি আলো
রাত্রির গায়ে ম্লান বাতাস দোলা দিয়ে যায়
আজ সব ফেলে-টেলে ও মুখের কারুকাজ দুলছে
চোখের সম্মুখে
কোথায় হারাল সব
উজ্জ্বল চাঁদের বান
আয়মন নদীজল
অবিশ্বাস্যভাবে- এই মধ্যরাতে
তাকেই শুধু মনে পড়ে


আশ্বিনের শেষ বিকেলে

শরৎ এলে পাহাড়ের কাছে যেতে খুব ইচ্ছে হয়
বুনো মেঘ ছুঁয়ে যাবে নাক, গ্রীবা, স্তনাগ্র
আকাশের নীল মায়ায় চোখে জমবে
হীরার মতন শিশিরের দানা
পথের দু'পাশে সাদা ফুলের সমুদ্র দুলে উঠবে
শুভ্র সে ঢেউয়ে ভেসে ভেসে কার স্মৃতি
হুল ফুটিয়ে যাবে?

বছর বিশ আগে, আব্বার হাতে দেখেছিলাম
মাড় দেয়া একটি কড়কড়ে লাল ফ্রক
বিকালের পড়ে আসা রোদে পুজোমণ্ডপ থেকে
তখন ভেসে আসছিল উলু আর শঙ্খধ্বনি
আব্বা হাসিমুখে বললেন- 'মাগো, শরৎ এসেছে!'
শিউলি ঝরে যায় দ্রুত, স্মৃতিতো মরে না
তার সুঘ্রাণে উতলা বুক
আমি তবে কার কাছে যাব?
পাহাড়ে, নাকি ফেলে আসা শরতে?
আমার পথ দুদিকে চলে যায় সময়ের নির্মম স্রোতে
তবু শীতল চাঁদের মতন স্থির চোখে খেলা করে
একটি হৃদয়-ঘনিষ্ঠ স্মৃতি-
আশ্বিনের শেষ বিকেলে লাল ফ্রক হাতে দাঁড়িয়ে আমার শ্বেতশুভ্র আব্বা।


চলে গেলে যাও

১.
তোমার যাওয়াই ভালো
বারংবার আঘাতে যে হৃদয় লুণ্ঠন করে
প্রেমে, বিরহে, কামে
সে এক অস্থির অপ্রিয় ভুল
.
২.
নাভির ভেতরে অজ্ঞাত যন্ত্রণার কামড়
দীর্ঘশ্বাসের ব্যাকুল আনাগোনায়
গলায় উৎকট বিবমিষা
আর আমার মুখে বিষপাত্র ধরে
ঢেলে গেছো অমৃত সুধা
কার জানি বুকে!
.
৩.
ভালোবাসা, এভাবে মানুষ বাঁচে না
বুভুক্ষু হৃদয় চায় সুষুপ্তির রাত্রি
চলে গেলে একেবারে যাও
এভাবে বাড়িয়ো না দুঃখের মেয়াদ।


মুখোশ

আমি আর চোখে দেখতে চাই না-
দু'চোখে এতো আলো নিয়ে যদি ভুল দেখি
কাঁটাকে দেখি ফুটন্ত ফুল
কী লাভ চোখে দেখে!

মেঘ মুঠো করে
দেখি হাওয়াই মিঠাই
আঁজলা ভরে পানি নিই মুখে
অগ্নিতে দাহ হয় জিভ
চুম্বনে ভেজাই তৃষ্ণার্ত ঠোঁট
আকণ্ঠ ভরে যায় বিষে
মানুষ ভেবে বুকে তুলি
দেখি হৃদয় তার মুখোশে ঢাকা...

যেদিকে তাকাই মুখোশ আর মুখোশ!


উদ্বাস্তু

আমার কোনো বাসস্থান নেই
দু’মুঠো অন্ন যা পাকস্থলীতে পড়ে
তা অন্যের কৃপায়
যে বিছানায় মাথা পাতি
ফেরারি রাত-বিরেতে
সেটুকু করুণার জগদ্দল পাথর

তবু এ হৃদয় বেনীআসহকলা
বুকের ভেতর এক রঙিন সুবর্ণগ্রাম
ইচ্ছেফড়িঙ রোজ পাখা মেলে গেরুয়া আকাশে
সোনালি গাঁয়ের ঘাসপাতা জমিনে শুয়ে
সবুজ সঙ্গমে মাতে স্বপ্নময়ী মন
এইসব উদ্বাস্তু অনিদ্রা একদিন ঘুমবতী রাত্রি হবে
নক্ষত্রপানে দু’বাহু বাড়ায়ে আছি
স্বাধীনতা, যদি পারো আমার ঘরে এসো।



পরিচিতি:
বীথি রহমানের জন্ম ১৫ মার্চ, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার আয়মন নদীর কূল ঘেঁষা একটি গ্রামে। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর। কবিতার বই : 'এখানে অনেকদিন বৃষ্টি হয় না', 'কেঁদে যায় বিকালের শরীর' এবং 'বিষয়টা সন্দেহজনক'। বীথি বসবাস করছেন ঢাকায়, পেশায় ব্যাংকার। 

জেড-এস
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
সর্বশেষ খবর
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে