X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস

১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম স্বাধীনতায় বিশ্ব গণমাধ্যম

ফাহমিদা উর্ণি
০৩ মে ২০১৬, ০১:০৪আপডেট : ০৩ মে ২০১৬, ০১:১৪

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে প্ল্যাকার্ড গণমাধ্যমের স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতিবছরের মতো এবারও ৩ মে (মঙ্গলবার) মুক্ত গণমাধ্যম দিবস বা ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে পালন করছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১শ’টিরও বেশি দেশ। এবারও জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও গবেষণাবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে’কে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ অথবা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছরই পালিত হয় দিনটি। সারা বিশ্বে মত প্রকাশের স্বাধীনতা,সাংবাদিকতায় বাধা-বিপত্তি, সাংবাদিকদের ওপর হামলা,হত্যা-এদিন সবই উঠে আসে আলোচনায়।

কেন এ সচেতনতা

বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন ও হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে অন্তত ৮০০ সাংবাদিক ও মিডিয়া প্রযোজক নিহত হয়েছেন। আর ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস’র তালিকা অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে সহিংসতার কারণে ২ হাজার ২৯৭ জন মিডিয়াকর্মী নিহত হয়েছেন। কেবল সাংবাদিকদের প্রাণহানিই নয়, তাদের ওপর নানাভাবে দমন-পীড়ন, হয়রানি ও ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে সাংবাদিক অপহরণের হারও বাড়ছে। বিভিন্ন কায়দায় সাংবাদিক, তাদের পরিবার কিংবা সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত হেনে তাদের কণ্ঠরোধ করার যে চেষ্টা তার মধ্যদিয়েই ক্ষুণ্ন হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।
কেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জরুরি সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইউনেস্কোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুক্ত গণমাধ্যম হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনকে তুলে ধরার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। সকল মুক্ত মানুষের জন্য মুক্ত গণমাধ্যম জরুরি। আর সাংবাদিক হত্যা হলো গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি।’
আরও পড়তে পারেন: ফেনী প্রেসক্লাব সভাপতিকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা


বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চিত্র

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে আগের ১২ বছরের চেয়ে ২০১৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কমেছে। এর জন্য বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল, অপরাধী চক্র ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্ষমতা আর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইকে দায়ী করা হয়েছে।
ফ্রিডম হাউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাপূর্ণ পরিবেশে বাস করেন। ৪১ শতাংশ মানুষ গণমাধ্যমের আংশিক স্বাধীনতাপূর্ণ পরিবেশে আর ৪৬ শতাংশ মানুষ গণমাধ্যমের একেবারেই স্বাধীনতা নেই এমন পরিবেশে থাকেন।
২০১৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ক্ষুণ্ন হয়েছে এমন দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশেরও নাম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে তুরস্ক, বুরুন্ডি, ফ্রান্স, সার্বিয়া, ইয়েমেন, মিসর, মেসিডোনিয়া ও জিম্বাবুয়ের নাম। ৪ ব্লগার ও ১ প্রকাশককে হত্যা, অন্য লেখকদের হুমকি প্রদান, গণমাধ্যমকে আইনিভাবে হয়রানি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ আরোপের চেষ্টাকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ফ্রিডম হাউজ।
আরও পড়তে পারেন: রাজশাহীর সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ১০ ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি

প্রেস ফ্রিডমের প্রতীকি ছবি যেসব ঝুঁকির মুখে থাকেন সাংবাদিকরা

সাংবাদিকরা প্রধানত হত্যার হুমকিতেই বেশি থাকেন। গত ডিসেম্বরে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী নিহত হয়েছেন ১১০ জন সাংবাদিক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নিহত হয়েছেন ৬৭ জন। বাকি ৪৩ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন কারণে। এসব মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ২০১৪ সালে দুই-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক নিহত হন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে। তবে ২০১৫ সালের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। গত বছর দুই-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক এমন সব দেশে নিহত হয়েছেন যেখানে ‘শান্তিপূর্ণ’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রিপোর্টার্স উইদাউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ড ছাড়াও অপহরণ ও জিম্মিদশার হুমকিতে থাকেন সাংবাদিকরা। মধ্য আমেরিকা থেকে শুরু করে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত সব জায়গায় অপহরণের হার বেড়েছে। সশস্ত্র সংগঠন আইএস, আল-কায়েদা, আল-শাবাবের মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলোই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অপহরণ করে থাকে। সিপিজে’র ২৫ বছরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেখা যায়, বিভিন্ন কারণেই সাংবাদিকদের অপহরণ করা হয়ে থাকে। কখনও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে, কখনও মুক্তিপণ আদায়ে, কখনও প্রোপাগান্ডা ছড়াতে আবার কখনও মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার আশায় সশস্ত্র দুবৃত্তরা সাংবাদিকদের অপহরণ করে থাকেন।
আইএস অধ্যুষিত ইরাক ও সিরিয়াকে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে ফ্রান্সকে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে ৫৪ জন সাংবাদিককে জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে ২৬ জনকে সিরিয়ায় জিম্মি করা হয়।
কমিটি টু প্রজেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) ২০১৫ সালকে সাংবাদিকদের জন্য চতুর্থ ‘সর্বোচ্চ ভয়াবহ বছর’ বলে ঘোষণা করে। তবে ভয়াবহতার মাত্রা বোধহয় চলতি বছরও কমেনি। কেবল ২০১৬ সালের এ পর্যন্ত ২৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস। হত্যা ও অপহরণ ছাড়াও সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক ও সরকারিভাবে ধরপাকড় চালানো হয়ে থাকে।

আরও পড়তে পারেন: পানামা পেপারসে নাম ওঠা ১১ জনকে দুদকে তলব
কার্টুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা রিপোর্টার্স উইদাউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী ১৫৩ জন সাংবাদিক কারাগারে ছিলেন। এর মধ্যে চীনে ২৩ জন ও মিসরে ২২ জনকে কারান্তরীণ রাখা হয়। এছাড়া ইরানের মতো কোনও কোনও দেশ কূটনৈতিক দর কষাকষির অংশ হিসেবে অনেকসময় বিদেশি সাংবাদিকদের অপহরণ করে।
বিশ্বের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই এ বছর ২৩তম বছরের মতো পালন করা হচ্ছে প্রেস ফ্রিডম ডে। এবারের মূল অনুষ্ঠান ফিনল্যান্ডে আয়োজন করেছে ইউনেস্কো। ২-৪ মে পর্যন্ত নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। এবার ইউনেস্কো/গিলারমো প্রেস ফ্রিডম ডে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন আজারবাইজানের নারী সাংবাদিক খাদিজা ইসমাইলোভা।

সূত্র: ফ্রিডম হাউজ, ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার, সিপিজে

/এফইউ/এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না