X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বেশির ভাগ মারা যায় চিকিৎসার অভাবে

জাকিয়া আহমেদ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৮:৪৯আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫৩

হার্ট দিবস আজ ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিবছর বিশ্বে ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ কোটি ৭৩ লাখ মানুষ।  এ বছর এ দিনটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘Power your life’ অর্থাৎ ‘আপনার জীবনী শক্তি বাড়ান’।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো অসংক্রামক ব্যাধি; যার অন্যতম হচ্ছে করোনারি হৃদরোগ। এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ।  আর দেশে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে শতকরা ১০ ভাগের মৃত্যু হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অথচ হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।

হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের অস্ত্রোপচার বেশ জটিল হওয়ায় সরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালগুলোয় এই অস্ত্রোপচার করা হয় না। সরকারি জেলা হাসপাতালগুলোতে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকাতে জন্মগত হৃদরোগে মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু।

বড় এবং ছোটদের হৃদরোগের ক্ষেত্রে অনেক সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকে, যা সঠিক যন্ত্রপাতি ও অদক্ষদের দিয়ে নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগই মারা যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। শিশু হ্রদরোগ

কার্ডিয়াক সোসাইটির তথ্যানুযায়ী, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও শল্যবিদসহ মোট ৩৮৩ জন চিকিৎসক নিবন্ধিত রয়েছেন। কিন্তু নেই শিশু-রোগীদের জন্য পৃথক কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব। এছাড়া শিশু-হৃদরোগীদের চিকিৎসায় পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্টের সংখ্যা ২০ এবং পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা ১১ জন। এদের আবার অধিকাংশই রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে জানা যায়, নারী ও পুরুষের পাশাপাশি দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু-হৃদরোগীর সংখ্যা। দেশে বর্তমানে তিন লাখের বেশি শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত। আর প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে ১০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে হৃদরোগ নিয়ে। সে হিসাবে গড়ে ২ লাখ ২০ হাজার শিশু জন্ম থেকেই হৃদরোগ নিয়ে বড় হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা না পেয়ে জন্মের ৭ থেকে আট মাসের মধ্যে মারা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, অপুষ্টিজনিত সমস্যা এবং রক্তশূন্যতা থাকে, সেসব মায়ের সন্তানের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সেই সঙ্গে রয়েছে, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতনতা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়া, গর্ভকালীন সঠিকভাবে নিজের যত্ন না নেওয়া, খাদ্যাভাস, রুবেলা টিকা গ্রহণ না করার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে শিশু-হৃদরোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সচেতনতার অভাবে জন্মের পর পরই শিশুদের হৃদরোগ নিয়ে কোনও পরীক্ষা না-করানো এবং সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেক শিশুরই চিকিৎসা দিয়ে আর সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। হার্ট দিবস

হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে জানা যায়, এখানে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৯৮৭ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৭ হাজার ৫৩৮ জন শিশু।

অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগে গত ৭ সাত বছরে প্রায় ৪ হাজার শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়েছে। ভর্তি হয়েছে নয়শ’র বেশি শিশুরোগী। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা নিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, দেশে শিশু কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে, এটা ঠিক। দেশে শিশু-হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে সে অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এ বিভাগ চালু করা। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে যদি এ সংক্রান্ত বিভাগ চালু করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের শিশু-কার্ডিয়াকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর এসব চিকিৎসকদের যদি কেবলমাত্র রাজধানীতে না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণের হার অনেক কমে আসবে।

একই কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানা রিমা। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পড়াশোনার দিকে নজর দেওয়া উচিত অতি জরুরিভাবে। তাহলে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর রোগীরাও চিকিৎসা পাবে।’

অভিভাবকদের সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে ডা. রিমা বলেন, ‘অভিভাবকদেরও ঘাটতি রয়েছে শিশুদের হৃদরোগ নিয়ে। আর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকাতে চিকিৎসকরাও সঠিক চিকিৎসাটা দিতে পারেন না সবসময়।’  

সে কারণে শিশুদের হৃদরোগ বিষয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের দায় অনেক বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন- 

ডিএমপির সার্ভারে ভাড়াটিয়াদের ডাটা এন্ট্রি করছেন নীলক্ষেতের ব্যবসায়ীরা! (ভিডিও)
মেডিক্যালে প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা

/জেএ/এবি/আপ-এফএস/  

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী