X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপুষ্টির শিকার গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীরা

জাকিয়া আহমেদ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:১১আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:৩১

বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা নারীদের অনেকেই অন্তঃসত্ত্বা (ফাইল ছবি) মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার মুখ থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রতিটি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এর মধ্যে বিশেষভাবে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের নজরে রয়েছেন গর্ভবতী নারীরা। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস ও কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। এর মধ্যে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। আর এসব গর্ভবতী নারীরা একদিকে রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, অন্যদিকে তারা দীর্ঘদিন ধরে অপুষ্টিতে ভুগছেন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য বিনাখরচে অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীরা অপুষ্টিতে রয়েছেন জানিয়ে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে আসা রোহিঙ্গা শিশু-নারী-পুরুষ যারাই অপুষ্টিতে ভুগছেন। তবে এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে গর্ভবতী নারীদের কথা। নিশ্চিতভাবেই তারা গর্ভকালীন সময়ের সুষম খাদ্য পাচ্ছেন না, বিশ্রাম পাচ্ছেন না; যেগুলো একজন গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যাবশ্যক। তাদের দেশে তারা কোনও টিকা নিয়েছিল কিনা সে বিষয়েও আমরা কিছু জানি না। তারওপর এখানে আসার ঝক্কি, থাকা খাওয়ার সমস্যা— সব মিলিয়ে এসব নারীরা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ (ভালনারেবল) অবস্থায় রয়েছেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাদের জন্য সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি আমরা।’
নিজ দেশে তারা ‘অবহেলিত’ ছিলেন মন্তব্য করেন সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম। স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তাদের জন্য খুব ‘পুওর’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সবাই অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং গর্ভকালীন কোনও চিকিৎসা সেবা তারা পাননি। আমাদের এখানে ১৬ হাজার গর্ভবতী নারীদের প্রসব কোথায় হবে, তাদের জটিলতাগুলো কী করে সমাধান করা হবে, সেসব বিষয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। কারণ প্রতিদিনই রোহিঙ্গা নারীদের কেউ না কেউ সন্তান প্রসব করছেন।’
এদিকে, গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে থাকলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও সন্তানদের সেই অপুষ্টির রেশ বহন করতে হয় উল্লেখ করে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ফিস্টুলা সার্জন ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব নারীরা অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং এর প্রভাব তাদের সন্তানের ওপর পড়বে। একজন গর্ভবতী নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার গর্ভের সন্তান পর্যাপ্ত খাবার পায় না। ফলে গর্ভাবস্থায় সন্তানটির যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা, সেটি হয় না। অন্যদিকে গর্ভবতী নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে ‘প্রি মেচিউর লেবার’ বা ‘অকাল প্রসবে’র আশঙ্কা থাকে। এতে করে বাচ্চাটি সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় জন্ম না-ও নিতে পারে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপুষ্টির শিকার নারীদের প্রসবকালীন অল্প রক্তক্ষরণেই বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি তা প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই গর্ভবতী যেকোনও নারীর পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তারা বলছেন, যেকোনও গর্ভবতী নারীর সুষম খাবার দরকার; সকালে দুই ঘণ্টা, বিকালে দুই ঘণ্টা ও রাতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা বিশ্রামের দরকার। কিন্তু এই রোহিঙ্গা নারীরা আট থেকে ১০ দিন পায়ে হেঁটে, নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসছেন। এই সময়ে তাদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এর প্রভাব তাদের অনাগত সন্তানদের ওপরও পড়বে।
কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা এতদিন রাখাইনে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন— এ কথা সাধারণভাবেই বলা যায়। তারা খাদ্য পাননি, পুষ্টি পাননি, ঠিকমতো গর্ভকালীন টিকা নিয়েছিলেন কিনা, সে বিষয়েও আমরা নিশ্চিত নই।’
এ পরিস্থিতিতে গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান পিন্টু ভট্টাচার্য। কিনি বলেন, ‘আমরা গর্ভবতী নারীদের যতটা পারছি ভিটামিন ও আয়রন দিচ্ছি। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে। অপুষ্টির শিকার এসব গর্ভবতী নারীদের উখিয়া ও টেকনাফের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নিয়ে এসে চেকআপ করানো হচ্ছে।’ গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার জন্য পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ১০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অনীহা রোহিঙ্গা নারীদের

বিধবা হিন্দু রোহিঙ্গা নারীরা বললেন নির্যাতনের কথা



এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার কথা

/টিআর/
সম্পর্কিত
জাতিসংঘের রোহিঙ্গা ডাটাবেজ ব্যবহার করতে চায় সরকার
ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে তিন রোহিঙ্গা শরণার্থীর লাশ উদ্ধার
ইন্দোনেশীয় উপকূলে নৌকাডুবি: ৭০ রোহিঙ্গা নিহতের আশঙ্কা
সর্বশেষ খবর
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট