X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার কথা

আমানুর রহমান রনি, টেকনাফ থেকে
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:২৫আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৪

 

বাবা-মা হারানো দশ রোহিঙ্গা শিশু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী হত্যাকাণ্ড শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে লাখ-লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। যারা এসেছে, তাদের কারও বাবা-মা, কারও ভাই-বোন, কারও সন্তানকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এমন শিশুও রয়েছে, যারা বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে। বুধবার দিনব্যাপী টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কথা হয় এমনই কয়েকজন শিশুর সঙ্গে। তারা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মমতার বর্ণনা দেয়।  

মো. জাকারিয়া ওরফে জকারিয়া (১৩)

জাকারিয়ার বাবার নাম নূর আহমেদ। মা সকিনা খাতুন। মংডুর সরোয়ার দিঘি এলাকায় তাদের বাড়ি। বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে। তার এক বোন আছে। তবে বোন এখন কোথায়, তা জানে না সে।  ঠিক কতদিন আগে তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছিল, তা সে বলতে পারে না। তবে কোনও এক শুক্রবারে আগুন দেওয়া হয়েছে জানিয়েছে জাকারিয়া বলে, ‘সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামের সব পুরুষকে ধরে নিয়ে যায়। বাড়িতে আগুন দেয়। বাবাকেও সবার সঙ্গে ধরে নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনী যখন আগুন দেয়, তখন মা ঘরেই ছিলেন। প্রাণ  বাঁচাতে  প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছি।’

মো. জুবায়ের (৭) 

মো. জুবায়ের। মাত্র সাত বছর বয়সী এই শিশুর কেউ বেঁচে নেই। তার বাবার নাম হাশিম উল্লাহ। মা নূর জাহান। মংডুর হাসুয়াত এলাকায় পরিবারের সঙ্গে সে থাকতো। খালা হামিদা খাতুনের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। জুবায়ের বলে, সেনা বাহিনী আমাদের ঘটে আগুন দিয়েছে। আমার বাবা-মাকে গুলি করে মেরেছে। আমি খালা-খালুর সঙ্গে পালিয়ে এসেছি।’

আসমত আরা (৮)

আট বছরের এই শশুটির বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মংডুর নামাপাড়া এলাকা থেকে বড় বোন ও ভাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছে সে। তার মায়ের নাম তৈয়বা, বাবা কালা মিয়। এখন আছে দাদির সঙ্গে। নাফ নদী পার হয়ে মঙ্গলবার তারা টেকনাফে আসে। আসমত আরা বলে, ‘সেনাবাহিনী গ্রামে আগুন দেয়। এরপর গুলি করতে থাকে। গুলির শব্দে সবাই পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে। সেনাবাহিনী অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর হামলার আমার বাবা-মাকে আর পাইনি।’

জান্নাত আরা (৮)

এই শিশুটিও বাবা-মা ছাড়া বাংলাদেশে এসেছে। তার মায়ের নাম শামসুন নাহার। বাবা বশির আহমেদ। মংডুর নয়াপাড়া এলাকায় তাদের বাড়ি। তার এক বড় বোন আছে। তবে পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কিনা, সে জানে না। বর্তমানে তার খালা রশিদা বেগমের সঙ্গে আছে। জান্নাত আরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘মিলিটারি বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’  

মো. ফয়সাল (১১)

মংডুর সৈয়দ দিয়া এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতো। তার বাবার নাম মো. সৈয়দ, মা রমিজা খাতুন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার পর তার মা-বাবাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। দাদি আমেনা খাতুনের সঙ্গেই আছে তার তিন ভাইবোন। তার দুই বোনের নাম মোক্তাকিনা (৭) ও হালিমা (৩)।

ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, ‘বাবা আমাকে অনেক আদর করতেন। আমাদের অনেক গরু ছিল। সেনাবাহিনী একদিন সকালে বাড়িতে আগুন দেয়। গুলি করে। তারপর আর বাবাকে দেখিনি। বাবার কী হয়েছে, তাও জানি না।’

মালেক হোসেন (৭)

সাত বছরের এই শিশুটির আট বছর বয়সী এক বোন আছে। তার নাম আসমত আরা। দাদি ফিরোজা বেগমের সঙ্গে তারা পালিয়ে এসেছে। তারা দুই ভাইবোন ও দাদি ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। শিশুটি বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছে মিলিটারি। পুড়িয়ে দিয়েছে সব। বাবা-মা মারা গেছেন। তাই পালিয়ে এসেছি।’

মাইসারা বেগম (১৪)

মাইসারা বেগম ও তার ছোটভাই মোরশিদাকে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। তার বাবা-মাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা করেছে বলে জানা সে। মংডুর দক্ষিণ পাড়ায় তাদের বাড়ি। শিশুটি বলে, ‘গত সপ্তাহে আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে সেনাবাহিনী। আগুনে সব পুড়ে গেছে। সেনাবাহিনী প্রথমে গুলি করেছে, পরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে ছোট ভাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে এই হামলায় তাদের ডজনখানেক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছে। এরপর ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। সেনাবাহিনীর এই অভিযানে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দাবি করেছে। এছাড়া তিন শতাধিক গ্রামের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:  জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অনীহা রোহিঙ্গা নারীদের

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
জাতিসংঘের রোহিঙ্গা ডাটাবেজ ব্যবহার করতে চায় সরকার
ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে তিন রোহিঙ্গা শরণার্থীর লাশ উদ্ধার
ইন্দোনেশীয় উপকূলে নৌকাডুবি: ৭০ রোহিঙ্গা নিহতের আশঙ্কা
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা