X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এখনই স্কুলে যাওয়ার যোগ্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক লাখ রোহিঙ্গা শিশু

রশিদ আল রুহানী
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:০৯আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৪০

রোহিঙ্গা শিশু (ছবি: ফোকাস বাংলা) মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে প্রায় এক লাশ শিশু এখনই স্কুলে যাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং ইন্টার সেক্টর কো-অরডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) নামের একটি এনজিও। সংস্থা দুটির তথ্য মতে, এসব শিশুর বয়স চার থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এবং তাদের এখনই স্কুলে পাঠানো জরুরি।

ইউনিসেফের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এএম শাকিল ফায়জুল্লাহ বাংলা ট্র্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ০ থেকে ১৮ বছরের রোহিঙ্গা শিশু আছে দুই লাখ ৪০ হাজার। যাদের মধ্যে লক্ষাধিক শিশু এখনই স্কুলে যাওয়ার যোগ্য।’

ইউনিসেফের দাবি, গত বছর অক্টোবরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা। আর চলতি বছরের ২৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্তনতুন করে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যাদের ৬০ শতাংশই শিশু এবং তারা কক্সবাজারের কুতুপালং, উখিয়া, বালুখালি, লেদা অঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও মানবিক বিকাশে কাজ করেছে ইউনিসেফ, আইএসসিজি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ব্র্যাক, কোডেকসহ কয়েকটি সংস্থা ও এনজিও। এসব শিশুকে লেখাপড়া শেখাতে স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোয় লার্নিং সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার ও প্রি-স্কুলিং সেবা চালু করেছে তারা। এছাড়া রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে ছবি আঁকা, লুডু-ক্যারামসহ আরও কিছু খেলাধুলার সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিশু (ছবি: সংগৃহীত)

আইএসসিজি’র তথ্য অনুযায়ী,রোহিঙ্গাশিশুদের লেখাপড়া শেখাতে ও মানসিক বিকাশে কুতুপালং, উখিয়া, বালুখালি, লেদা অঞ্চলে ১৭৩টি লার্নিং সেন্টার খুলেছে তারা। এর মধ্যে চারটি সেন্টার অস্থায়ী এবং বাকিগুলো স্থায়ী। এছাড়া এক লাখ রোহিঙ্গা শিশুর মধ্যে ১২ হাজার ৯৩৪ জনকে তারা প্রি-স্কুলিং সেবা দেবে। এছাড়া চারটি অস্থায়ী কেন্দ্রে ৪১৩ জন শিশুকেও তারা সেবা দেবে। এর আগে প্রতি স্থায়ী কেন্দ্রে ৩৫ জন শিশুকে সেবা দেওয়া হতো। তবে এখন থেকে প্রতি কেন্দ্রে ৫০ জনকে সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানায় এনজিওটি। শুধু তাই নয় ৪৪৯ জন শিশুকে চাইল্ড কেয়ারে আলাদাভাবে সেবা দেবে এনজিওটি।

এ বিষয়ে ইউনিসেফের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এএম শাকিল ফায়জুল্লাহ বাংলা ট্র্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর অক্টোবর ও নভেম্বরে ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর কুতুপালং, উখিয়া, বালুখালিসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে স্থায়ীভাবে ৯টি লার্নিং সেন্টার করে ইউনিসেফ। এছাড়া ৩৩টি মোবাইল সেবাকেন্দ্রও তৈরি করা হয়। এই কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে শিশুদেরকে সেবা দেয়। সেখানে শিশুদের খেলাধুলা ও লেখাপড়াসহ মানসিক বিকাশে নানারকম কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।’ রোহিঙ্গা শিশু (ছবি: আমানুর রহমান রনি)

রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা শিশুকে তাদের নিজস্ব ভাষায় (বার্মিজ) লেখাপড়া শেখানো শুরু করা হয়। কিন্তু তারা যেহেতু একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে, সেহেতু তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই লেখাপড়া শেখানো বাদ দিয়ে তাদের প্রথমে বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলর দিয়ে কউন্সিলিং করানো হয়। এরপর শিশুদের ছবি আঁকা শেখানো, খেলাধুলাসহ অন্যান্য অনেক ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক মাস আগে থেকেই আমরা তাদের সেবা দেওয়া শুরু করেছি। তাই তাদের মানসিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সেভাবে লেখাপড়া শেখানো যাচ্ছে না। ৯টি স্থায়ী ক্যাম্পে অন্তত সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার শিশুকে সেবা দেয় ইউনিসেফ।’

নতুন চার লাখ রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইউনিসেফের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব শিশুকেই সেবা দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে আমাদের। কিন্তু এত শিশুকে সেবা দেওয়া একা ইউনিসেফের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমরা ব্র্যাক, কোডেকসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি এনজিওকে সঙ্গে নিয়ে ওইসব শিশুদের সেবা দিয়ে থাকি। এখন আবার আগের তুলনায় আরও ছয় গুণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। ফলে এত শিশুর সেবা দেওয়া অনেক কঠিন হবে। তাই আমাদের সঙ্গে অন্যান্য এনজিওকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করে ফান্ডের ওপর। আমরা ফান্ড পেলেই আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে শুরু করবো।’

ইউনিসেফের কুতুপালং লার্নিং সেন্টারের সংগঠক হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্কুলগুলোতে বার্মিজ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। ওইসব স্কুলে বার্মিজ ভাষা জানেন-এমন শিক্ষকও রয়েছেন। তবে নতুন করে আরও শিশু আসায় শিক্ষক সংকট বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৬ লাখ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দেড় লাখ



/আরএআর/এমএ/এসএনএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!