X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এপার থেকে তাকিয়ে দেখলেন, ওপারে পুড়ে যাচ্ছে ঘর (ভিডিও)

আমানুর রহমান রনি, বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত থেকে
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:৪৫আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:০১

ওপারে পুড়ছে নিজেদের ঘরবাড়ি, তাই দেখে অচেতন হয়ে পড়েছেন নাসিমা খাতুন ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকাল সাড়ে ৪টা। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় দাঁড়িয়ে দেখা গেল, সীমান্তের ওপারে কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন জ্বলছে। কাঁটাতারের এপার-ওপারের ব্যবধান মাত্র কয়েকশ গজ। তাতে এপার থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাচ্ছে কয়েকটি ঘরবাড়ি।
ঠিক এই সময়ই সীমান্তের এপারে একটি পরিবার সেই আগুন দেখতে দেখতে বিলাপ করছিল। মধ্যবয়সী রোহিঙ্গা নারী নাসিমা খাতুনের চোখ দিয়ে তখন অশ্রুর ধারা। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়লেন তিনি। পাশে থাকা ছেলে-মেয়েরা তখন ব্যস্ত তার জ্ঞান ফেরাতে। সেই অবস্থাতেই তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন, ওপারে যে ঘরবাড়িগুলো পুড়ছে, তার মধ্যে তাদের বাড়িও রয়েছে। এপারে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ায় তাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঘুমধুমের বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় দেখা যায় এই দৃশ্য। আগুনের পাশাপাশি কমপক্ষে ১০ রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা গেছে এসময়। নাসিমা খাতুনের পরিবার জানায়, আগুনে পুড়তে থাকা এলাকাটি রাখাইন রাজ্যের তমব্রুর পশ্চিমকুল গ্রাম।
নাসিমা খাতুনের জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত তার ছেলে-মেয়ে নাসিমা খাতুনের পরিবার জানায়, গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীসহ সরকারি বাহিনী ও স্থানীয় মগদের নির্যাতন আর সহিংসতা শুরুর পরই বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তারা। নাসিমা খাতুনের স্বামী নুরুল আমিন। সঙ্গে ছিল পাঁচ ছেলে-চার মেয়ে। শুধু নাসিমা খাতুনের পরিবারই নয়, তার বোনের পরিবারও পালিয়ে এসেছে ঘুমধুম সীমান্তে। তারা বাড়িঘর ছেড়ে এসেছেন, কিন্তু সীমান্তে দাঁড়িয়ে কয়েকশ গজ দূরে থাকা নিজেদের গ্রাম আর ঘরবাড়ি দেখার চেষ্টা করেন তারা। আজ বিকালে যখন পশ্চিমকুল গ্রামে আগুন জ্বলছিল, নাসিমা আর তার বোনের পরিবারও অস্থায়ী ক্যাম্পে বসে থাকতে পারেননি। চলে এসেছেন কাঁটাতারের কাছে।
নিজেদের বাড়িঘরে আগুন জ্বলতে দেখে অচেতন হয়ে পড়া নাসিমা খাতুনের জ্ঞান ফেরে মিনিট ১৫ পর। তবে শোকে মূহ্যমান নাসিমা কথা বলতে পারছিলেন না। তার মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো আগেই চলে এসেছি। কিন্তু বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসতে পারিনি। আমাদের সবকিছু বাড়িতেই ছিল। কিন্তু আমাদের সব ঘর তো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। খালাদের কয়েকটি ঘরও আছে এর মধ্যে। চেয়ে চেয়ে দেখছি, চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে যাচ্ছে। অথচ এপারে দাঁড়িয়ে কিছুই করতে পারছি না।’
নাসিমা খাতুনের বোন নুর নাহার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাদের ঘর পুড়ছে, আর আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। আমাদের তো কিছু করার নাই।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত প্রায় এক মাসে তৈরি হওয়া মানবিক সংকটের প্রতীকী চিত্র বোধহয় এটাই। এক পারে যখন আগুনের শিখা গিলে খাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি, কাঁটাতারের অন্য পারে তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওইসব ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের চোখে অশ্রুর ধারা।
আরও পড়ুন-
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে রাশিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শনে সেনাপ্রধান
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সৌদি আরবের আহ্বান

/টিআর/টিএন/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন