কনকনে শীতে পোড়া ইটের ওপর রক্তমাখা নিথর দেহ নিয়ে শুয়ে আছে ডজনখানেক শিশু। নিথর এই দেহগুলো জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে- একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই নৃশংসতা। সেদিন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এই বধ্যভূমিতে যেভাবে ফেলে রাখা হয়েছিল প্রতীকীভাবে সেই চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মূল বেদীর দক্ষিণ পাশে এমন চিত্র দেখা গেছে।কেন্দ্রীয় খেলাঘরের এই আয়োজন দর্শনার্থীদের অনুপ্রাণিত করেছে।শিশু- কিশোরদের সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের চন্দ্রালোক ও সূর্যালোক খেলাঘর আসরের শিশুরা এই প্রতীকী বধ্যভূমি প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারো মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে গভীর মনে দেখেছেন শিশুদের এই আয়োজন।
স্মৃতিসৌধের ঠিক ডান পাশের দেয়াল ঘেঁষে ইটের স্তুপের ওপরে তৈরি করা প্রতীকী বধ্যভূমিতে রক্তমাখা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ সেজে শুয়েছিল শিশুরা। তোদের ফাঁকে ফাঁকে খোলা আকাশের নিচে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর নিহত শহীদদের নাম ও ছবি সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুনু আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে দেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। এখানে সেই চিত্রটি দেখানো হয়েছে। আসলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তাদের সামনে প্রতীকী চিত্রের মাধ্যমে সে সময়ের বীভৎস দৃশ্য তুলে ধরতেই আমাদের এই আয়োজন। আমরা চাই এর মাধ্যমে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কর্ম, ত্যাগ ও মেধা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হোক।’
প্রতীকী বধ্যভূমিতে অংশ নেওয়া শিশু রাজীব উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আগে জানতাম না আসলে এই বধ্যভূমিতে কী হয়েছে। কয়েকজন বড়ভাই আজ আমাদের সেই ইতিহাস শিখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে যেভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, আমরা সেই চিত্রটি তুলে ধরেছি।এখানে অংশ গ্রহণ করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়।
আরও পড়ুন:
‘মাছ ধরতে গিয়ে শত শত বুদ্ধিজীবীর লাশ দেখে আঁতকে উঠি’