X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আনা সম্ভব হবে না!

উদিসা ইসলাম
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৫আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:১৯

  মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা (প্রতীকী ছবি)

মুক্তিযুদ্ধের সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য বাঙালি নারী। কিন্তু, সামাজিক বলয় ভেঙে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেননি তাদের বেশিরভাগই। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন এদের অনেকেই।  এ কারণে সব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।  তবে এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই বলেও জানান তিনি।  এদিকে, মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, ‘সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও বীরাঙ্গনাদের নাম-পরিচয় সমাজে প্রকাশ না করেও তালিকাভুক্তি সম্ভব ছিল।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতনের শিকার নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ২০১৪ সালে, যাদের বীরাঙ্গনা বলে ডাকা হতো। এরপর এখন পর্যন্ত ১৮৫ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়। আরও ৬৫ জনকে তালিকাভুক্তির বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

‘দ্য চেঞ্জিং ফেস অব জেনোসাইড’ বইতে ড. জিওফ্রে ডেভিস জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রতিটি থানায় প্রতিদিন গড়ে দু’জন করে মেয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। থানার সংখ্যা ৪৮০টি এবং দখলদারিত্ব স্থায়ী হয়েছিল ২৭০ দিন। ৪৮০কে ২৭০ ও ২ দিয়ে গুণ করে পাওয়া যায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ জন। অন্যান্য কারণেও মেয়েরা নিখোঁজ হয়েছেন ধরে সংশ্লিষ্ট বোর্ড সংখ্যাটাকে এনেছেন দুই লাখে।  অথচ এর মধ্যে মাত্র ২৫০ জনকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে!

এছাড়া ২০১৪ সালে হবিগঞ্জের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছিল, বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণ স্কিম চালুর পাশাপাশি বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের তালিকা করে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন, তাদের মরণোত্তর সম্মান জানিয়ে স্বজনদের শোক ও দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে।

কীভাবে তালিকাভুক্ত করা যাবে এমন প্রশ্নে ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোন উপজেলায় কে ধর্ষিতা হয়েছিলেন তা আর অজানা থাকার কথা নয়। তবে গোপনীয়তার সঙ্গেই এগুলো সংগ্রহ করা হবে।  কারণ অনেকে বৃদ্ধ বয়সে এসে প্রকাশ্যে তা বলতে চাইবেন না।’

সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমরা তালিকার কাজ করতে চাই। কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আটকে আছে। একইভাবে সমাজের লোকলজ্জার কথা ভেবে অনেকেই এখন আর তাদের বীরাঙ্গনা পরিচয় বেরিয়ে আসুক তা চান না, ফলে এই তালিকা এগিয়ে নেওয়ায় ধীরগতি।’

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ মনে করেন অনেকগুলো বিষয় এখনও সমাধান হয়নি।  তিনি বলেন, ‘আমি ৩৮৬ জন বীরাঙ্গনার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তারা আমাকে বলেছেন বিচারের কথা শুনে তারা খুশি হয়েছেন।  একইসঙ্গে তারা এও বলেছেন এই বিচারের ফলে তাদের সামাজিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি, সামাজিকভাবে সম্মান বাড়েনি। ফলে সমাজে সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আমরা পদক্ষেপ নিতে পেরেছি এটা বলা যাবে না।’

তুরিন আরও বলেন, ‘গ্রামের নারীরা সমাজে কীভাবে কাটালো এতোগুলো বছর, সেটা জানতে চাইনি আমরা। যুদ্ধশিশু যারা এদেশে আছেন তারা বহু কষ্টে বড় হয়েছেন। আমরা তাদের আইডি কার্ডে পিতার নামের জায়গায় মিথ্যা নাম দিতে বাধ্য করছি।  বীরাঙ্গনাদের ইস্যুটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির রায় পেয়েছি এতগুলো বছর হলো, তারপরও আমরা কোনও উদ্যোগ দেখিনি।  ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, যাচাই-বাছাই স্থগিত করা এসব ডামাডোলের ভেতর সবসময়ই নারীর ইস্যুটি কম গুরুত্ব পেয়েছে।’

কেন এতদিনে ১৮৫ জনকে গেজেটভুক্ত করা সম্ভব হলো প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব অপরূপ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৮৫ জনের গেজেটভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৬৫ জনকে শিগগিরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে রিট হওয়ায় সেটি বন্ধ হয়ে আছে। আমাদের জামুকার সভা হয় দেড় দু’মাস পরপর।  উনারা সময় পান না বসতে।  ফলে সময় লেগে যায়।  স্থগিত আদেশের জন্য আবেদন করছি, সেটি হয়ে গেলেই আমরা কাজটা এগিয়ে নিতে পারবো।’

তালিকাভুক্তরা সব সুবিধা পাচ্ছেন কিনা প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। এই অর্থবছরে সবার জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে।’

পূর্ণাঙ্গ তালিকার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু অনেকেই তালিকাভুক্তি চান না সমাজ ব্যবস্থার কারণে।  তারা আমাদের জানান, অনেকদিন চলে গেছে, পরিবার বড় হয়েছে। এখন আবারও তারা তাদের এই নির্যাতনের কথা সামনে আসুক সেটি চান না।’ তবে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চলমান আছে বলেও জানান তিনি।

/এমও/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ