X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউ জিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলা: রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ সতর্কতা

নুরুজ্জামান লাবু
১৫ মার্চ ২০১৯, ২২:৩০আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৯, ২৩:২৩





সন্ত্রাসী হামলার পর আহত একজনকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে  নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়ায়ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চের এই ঘটনার পর কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তি যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সেজন্য সজাগ রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিউ জিল্যান্ডে মসজিদে মুসলিম বিদ্বেষী হামলার পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও নিরাপত্তা ‘ঝুঁকি চিহ্নিত’ করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাটি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। তারপরও ঘটনার পরপরই আমরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় এমনিতেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সেখানেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’
হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারান্ট প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৫ মার্চ) নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে এক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৪৯ জন ইসলাম ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে অন্তত তিন জন বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। হামলায় ক্রাইস্টচার্চের আল  নূর মসজিদে ৪১ জন এবং লিনউডের আরেকটি মসজিদে ৮ জন নিহত হন। এই উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী হামলার সময় আল  নূর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। মসজিদে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে ওই হামলার ঘটনাটি ঘটে। ফলে অল্পের জন্য জীবন রক্ষা পান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
এদিকে, ঘটনার পর ব্রেনটন ট্যারান্ট নামে এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে  চিহ্নিত করা হয়েছে। দু’বছর ধরে নেওয়া পরিকল্পনার বাস্তবায়নকারী এই বন্দুকধারী হামলার চালানোর আগে অনলাইনে একটি দীর্ঘ বার্তা দিয়েছে। এতে সে হামলার কারণ উল্লেখ করে। সে নিজেকে শ্বেতাঙ্গ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের অনুসরণকারী হিসেবে উল্লেখ করে। ওই বার্তায় মুসলিম বিদ্বেষী বিভিন্ন ধরনের কথাও লিখেছে সে।
হামলার পর উদ্বিগ্ন জনতা গণমধ্যমে ব্রেনটনের এই ভাষ্য আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা রকম প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কেউ বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা করে বসে কিনা, সেই আশঙ্কা থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাড়তি সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ ভিজিবল পুলিশিং, টহল, পেট্রোল ও তল্লাশি চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের হামলায় আইডোলজিক্যাল পয়েন্ট থেকে দুটো বিষয় দেখতে পাচ্ছি—  আমরা বলছি, প্রবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ ও ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। একটা মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে, এই ইসলাম বিদ্বেষের কারণে আমরা যেন অন্য ধর্মালম্বীদের প্রতি বিদ্বেষী না হয়ে যাই, সেজন্য সামাজিক সম্প্রীতির ওপর আমাদের জোর দিতে হবে। একটি সহনশীল সমাজ গঠনের  জন্যই এখানে কোনও ছাড় দেওয়া যাবে না। সমাজকে সহনশীল ও সহিষ্ণু রাখতে হবে।’
হামলায় নিহত কুড়িগ্রামের ড. সামাদ তিনি বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের এখানে টেরোরিজম বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়। ফলে সেরকম কোনও আশঙ্কা নেই। তারপরও আমাদের এখানে তো কনস্ট্যান্ট একটা থ্রেট আছেই। জঙ্গিবাদের ঝুঁকির মধ্যেই আমরা আছি। এই বিষয়টাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করার জন্য কেউ কেউ কাজ করতে পারে। শুধু জঙ্গি গোষ্ঠী না, জঙ্গি গোষ্ঠীকে বিভিন্ন জিও-পলিটিক্যাল কারণে অনেকেই তাদের মদদ দিয়ে থাকে, তাদের স্বার্থের জন্য। সেই ঝুঁকি থেকে তো আমার মুক্ত না। তো সেই ঝুঁকি চিহ্নিত করা, তার আঁচ কোথায় লাগবে, কিভাবে লাগবে, সেটি নির্ণয় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সিলেটের হুসনে আরা পারভীন আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি না এই হামলার পর বাংলাদেশে ভীষণভাবে এর কোনও প্রভাব পড়বে। কারণ, এই হামলা যে দেশে হয়েছে, তারা মোটামুটি অ্যাকশন নিয়েছে। তারপরও যেহেতু এখানেও এক ধরনের জঙ্গি বলি বা এক্সট্রিমিস্ট বলি, কিছু লোকজন তাদের আছে, আমাদের সিকিউরিটি সিস্টেম বা ইন্টেলিজেন্সে যারা আছেন, তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে এক্সিট পয়েন্ট বা এন্ট্রি পয়েন্টসহ সব জায়গায় এলার্ট থাকতে হবে।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে এমনিতেই এলার্ট আছে। আমি মনে করি না এখানে বড় ধরনের কোনও রিপারকেশন  হবে। তবে আমাদের এলার্ট থাকা উচিত।’

 

আরও পড়ুন:

ক্রাইস্টচার্চে হামলায় নিহতদের একজনের বাড়ি কুড়িগ্রামে

‘যথেষ্ট নিরাপত্তা পেলেই কোথাও খেলতে যাবে বাংলাদেশ’

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় নিহত ৪০: নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনায় যা দেখেছেন ক্রিকেটাররা

‘পুরো দল গোলাগুলির হাত থেকে বেঁচে গেলো’

১৭ মিনিট ধরে হামলার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে বন্দুকধারী!

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় মুসলিম বিশ্বের নিন্দা ও ক্ষোভ

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন