X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: দেশে সারের দাম বেড়েছে ১০৫ শতাংশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ জুলাই ২০২৩, ২২:০৯আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ২২:০৯

আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা একশনএইড পরিচালিত একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকগুলো প্যারামিটারে বেড়েছে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বাংলাদেশে সারের দাম ১০৫ শতাংশ, চিনির দাম ৬০ শতাংশ, পেট্রোলের দাম ৪৭ শতাংশ এবং স্যানিটারি প্যাডের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে। এতে করে দেশের জনগণ একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে নারী, মেয়ে ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে আপস করতে হচ্ছে।

রবিবার (২ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এশিয়া, আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ানজুড়ে মোট ১৪টি দেশে ১ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিরীক্ষণের সময় সারের দাম ১১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে, পেট্রোল এবং স্যানিটারি প্যাডের দাম ৮০ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে। একইসঙ্গে বাল্যবিবাহের হার বৃদ্ধি, নারী স্বাস্থ্যের অবনতি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে।

একশনএইড-এর গ্লোবাল পলিসি অ্যানালিস্ট আলবার্টা গুয়েরা বলেন, ‘এই সমীক্ষা থেকে দেখায় যে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষেরা আকাশ ছোঁয়া খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের দামের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা এই সময়ে নানান সংকটের কারণে প্রভাবিত হয়েছে, যা তাদের খাদ্য গ্রহণ, শিক্ষা, বাল্যবিবাহ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে প্রভাবিত করেছে।’

বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশে মেয়ে ও ছেলে উভয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপও বাল্যবিবাহের হার বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের নিরাপত্তার চেয়ে শিক্ষা অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের পাথর কোয়ারিতে বা জাদুকাটা নদীতে প্রতি দিন ৩০০ টাকায় বালু উত্তোলনের কাজ করতে হয়। এ কারণে তারা স্কুলে যেতে পারে না।’

সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, কোভিড-১৯, ঋণের চাপ এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন থেকে শুরু করে একাধিক সংকটে রয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল জলবায়ু বিপর্যয়, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘জ্বালানির দামের অস্থিরতা সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে খাদ্যের ওপর, যা নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করে। আমাদের জাতীয় প্রতিবেদন (বাংলাদেশ ব্যাংক) নির্দেশ করে যে, আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯.৫ শতাংশ। যদি আমরা বাস্তব দৃষ্টিতে দেখি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এখন চাল এবং ডিমের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর জন্য আগের দামের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিতে হচ্ছে। যার ফলে খাদ্য গ্রহণে মারাত্মক হ্রাস ঘটেছে, যা মানুষের পুষ্টির ভারসাম্যকে প্রভাবিত করেছে। অপরদিকে, আমাদের এনার্জি খাত অত্যন্ত জ্বালানি-নির্ভর এবং তাই জ্বালানির অতিরিক্ত দাম আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ এবং জাতীয় ব্যয়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘একশনএইড একটি সমন্বিত ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত তহবিলের পক্ষে জোর দাবি জানাচ্ছে— যা জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণের চাপ এবং ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের গভীর প্রতিক্রিয়াসহ মূল্য সংকটকে বাড়িয়ে তোলা সব আন্তঃসংযুক্ত সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম।

ফারাহ্ কবির আরও বলেন, ‘পরিবর্তিত বাস্তবতা এবং মানুষের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে জরুরিভাবে সামঞ্জস্য করা দরকার। শিশুসহ পরিবারগুলোকে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে হবে। চাষাবাদে অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অ্যাগ্রোইকোলোজিক্যাল চাষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন।’

১৪টি দেশের মোট ১ হাজার ১০ জন মানুষের মধ্যে ১মার্চ থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে এই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। উত্তরদাতাদের ৬৩ শতাংশ ছিলেন নারী। অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সমীক্ষার দিনে গমের পণ্য, রান্নার তেল, পেট্রোল, রান্নার জন্য গ্যাস, সার এবং স্যানিটারি প্যাডের দাম কত ছিল এবং এই পণ্যগুলোর মূল্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল (যখন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল)। অংশগ্রহণকারীদের তাদের জীবন জীবিকার ওপর এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং সম্ভাব্য উত্তরগুলোর একটি সিরিজ থেকে কমপক্ষে একটি প্রতিক্রিয়া নির্বাচন করতে উৎসাহিত করা হয়।

জরিপে অংশ নেওয়া ১৪টি দেশ হলো— আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি), ইথিওপিয়া, হাইতি, কেনিয়া, মালাউই, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, সোমালিল্যান্ড, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রাশিয়ার ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় জেলেনস্কি
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
সর্বশেষ খবর
একদিন পর আবার বাড়লো সোনার দাম
একদিন পর আবার বাড়লো সোনার দাম
ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করে ভালো আইন তৈরি করা যায় না: আইনমন্ত্রী
ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করে ভালো আইন তৈরি করা যায় না: আইনমন্ত্রী
কিশোরগঞ্জ ও বান্দরবানের আলীকদমে দুদকের অভিযান
কিশোরগঞ্জ ও বান্দরবানের আলীকদমে দুদকের অভিযান
জামায়াত-শিবিরের সামাজিক আন্দোলনের ফাঁদে দেশ
জামায়াত-শিবিরের সামাজিক আন্দোলনের ফাঁদে দেশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?