নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ পাওয়ার আশায় বারবার রাজপথে দাঁড়িয়েছেন জানিয়ে মায়ের ডাকের সদস্যরা বলেন, আমাদের স্বজনরা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, তার খোঁজ দিন। এই প্রতীক্ষার অবসান ঘটুক।
বিভিন্ন সময় গুম-খুনের শিকার স্বজনদের খোঁজ জানতে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ থেকে তারা এ কথা বলেন। গুম, খুন, ক্রসফায়ার, কারা-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এ আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা বলেন, এখানে আমরা যারা দাঁড়িয়েছি তাদের কারও ভাই, কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও স্বামীকে এই সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কেউ বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি। তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা তাদের খোঁজ চাই। তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তারও কোনও খবর আমরা জানি না। যদি মরে যায় আমাদের জানান। জীবিত থাকলে ফিরিয়ে দিন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুতি জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের কান্না কি আপনি শোনেন না? ১০ বছর ধরে আমরা কাঁদছি, কেন আপনি দেখছেন না?
মায়ের ডাকের এই সমাবেশ শুরুতে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে সেখানে সমাবেশ করতে পারেনি সংগঠনটি। পরে তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আসেন এবং সেখানেই সামাবেশ করেন। সমাবেশে ভুক্তভোগীর পরিবার ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘সরকার হেলমেট বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী বানিয়ে সন্ত্রাস করে ঘরে ঘরে মানুষকে অত্যাচার করছে, হত্যা করছে। এর কোনও বিচার নেই। তাকে (শেখ হাসিনা) আরও অনেকদিন ক্ষমতায় থাকতে হবে! এই স্বজনহারা মা-বোনদের কথা, তাদের বুকের বেদনার কথা, তাদের জীবনের কথা কোনটাই চিন্তা করছে না সরকার।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমরা কতবার প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছি, কতবার কথা বলেছি। আমাদের মানবতার ডাক সরকারের কানে যায়নি। এখন মানুষের সব মানবিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে তারা (সরকার) একটি তামাশার চেষ্টা করছে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার কোন অবস্থানে? মায়ের ডাক সংগঠনকে সবাই চেনে। হাজার হাজার মায়ের কান্না ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংগঠনটি গড়ে উঠেছে। তাদের সমাবেশে পুলিশ ধাক্কা দিয়েছে, পুলিশ তাদের হেনস্তা করেছে, লাঞ্ছিত করেছে এবং শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এসব ঘটনা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি প্রমাণ বহন করে।’
সভাপতির বক্তব্যে মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, ‘গত ১০-১২ বছর ধরে আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার জন্য, যাদের খুন করা হয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আছি। এখন যাদের গায়েবি মামলা দিয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে, কারাগারে নির্যাতন করা হচ্ছে, যাদের না পেয়ে তাদের বাবা-ভাই-স্ত্রী-সন্তানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের বিচারের দাবিতে, তাদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাজপথে দাঁড়িয়েছি।’
সমাবেশ আরও ছিলেন– গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের একংশের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব।