X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী

কবির হোসেন
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০২আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০২

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কিছু চক্রের সদস্যকে। কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীও। তবে এত কিছুর পরও থেমে নেই গ্যাং তাণ্ডব। সুযোগ পেলেই অপরাধে জড়াচ্ছে শিশু-কিশোররা। পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, চুরি, মাদক নেওয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পরও কেন কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব শিশু-কিশোর বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। এ জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পারিবারিক, সামাজিক, সাংগঠনিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই শিশু-কিশোরদের অপরাধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।

রাজধানীর কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন সাজেদা বেগম (৪৫)। বাড়ি ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর কিশোর গ্যাংয়ের ১৩-১৪ জন সদস্য তার বাসায় গিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সাজেদা বেগমকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে গত ৪ এপ্রিল রাতে একই চক্রের সদস্যরা আবার সাজেদা বেগমের বাসায় যায় এবং চাঁদা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। একইসঙ্গে সাজেদা ও তার ভাড়াটিয়াদের গালিগালাজ করে তারা।

চাঁদা দাবির অভিযোগে কিশোর গ্যাংয়ের এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সংস্থাটি জানিয়েছে, এরা বেশ কিছু দিন ধরে রাজধানীর কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

চলতি বছর চট্টগ্রাম নগরের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নগর পুলিশের বিশেষ শাখা (সিটিএসবি) জরিপ চালায়। জরিপ চলে ৭৮২ জন শিক্ষার্থীর ওপর। এতে ভিত্তি ধরা হয় গত এক বছরের (২০২৩ সাল) উপস্থিতির হার। তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি গড়ে ৪৬ শতাংশ। অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ছাত্র, যাদের অনেকে জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে।

সিটিএসবি জানায়, নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অস্থিরতা বা কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ। এসব ছাত্র পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, চুরি, মাদক নেওয়া ও কেনাবেচা এবং অনলাইন জুয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নেয় স্কুলের সময়টা। এমনকি স্কুলের সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপস্থিতি দেখা গেছে।

র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের তিন মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৪১৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৬ জনকে, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৯ এবং মার্চের ২৫ দিনে ২১৩ জনকে। গত ৭ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ‘টেনশন গ্রুপ’ এবং ‘ডেভিল এক্স গ্রুপ’ কিশোর গ্যাংয়ের দলনেতাসহ ১৭ জনকে আটক করে র‌্যাব-১১।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও মহানগর গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। অপরাধী শিশু-কিশোর বা যেই হোক, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। ঢাকায় পল্লবীর হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের গ্রেফতার করেছি। রাজধানীর পাড়ায় পাড়ায় অভিযান চালিয়ে অনেক কিশোর গ্যাং সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষে একা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। তারা এলাকায় মারামারি, মাদক সেবন, ইভটিজিং করবে– শুধু গ্রেফতার করে তাদের দমানো যাবে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে এলাকার গণ্যমান্যদের এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকেও। খেয়াল রাখতে হবে ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কিনা, যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে যাচ্ছে কিনা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না।’

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছি। তাদের গ্রেফতার করছি। কিন্তু কিশোর গ্যাং একেবারে নির্মূল করতে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কাজ করতে হবে সবাই মিলে। কিশোর গ্যাং নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিশোর গ্যাং সদস্যদের আটক করলে আদালতকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি কারাগারে কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘বর্তমান সময়ে শিশু-কিশোররা সরাইবার অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক–এসব প্ল্যাটফর্মে কোনও একটি চরিত্র দেখে নিজেকে আসল হিরো সাজাতে চায় অনেক শিশু-কিশোর। বাস্তব জীবনেও সেগুলোর প্রতিফলন ঘটাতে চায়। সে ক্ষেত্রে যখন নিজের মতো আরও অনেককে পেয়ে যায়, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তেমনটাই করছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। তারা দলবেঁধে বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের সঠিক পথে ফেরাতে কাজ করতে হবে পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সব জায়গা থেকে। যারা নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের ব্যবহার করে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা এসব কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ করবে, তাদেরও দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সামাজিকভাবে সবাই মিলে এ জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।’

/আরকে/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
দায়িত্ব নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যা বললেন র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র
রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর অপরাধ বেশি: ডিএমপি কমিশনার
কেরানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড