তীব্র গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের জীবন। এক সপ্তাহ যাবৎ এই অবস্থা চলমান। কোথাও কোথাও দু'এক পশলা বৃষ্টি হলেও গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই মেলেনি। প্রখর রোদ ও তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। সূর্যের তাপ এতটাই প্রখর যে রোদে খোলা আকাশের নিচে হাঁটলে গরম বাতাসে মুখ পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে যেন।
হন্যে হয়ে তীব্র এই গরম থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছেন রাজধানীবাসী। রাস্তার দু'ধারে গাছের ছায়া খুঁজে না পেলেও উঁচু দালানের পাশে বা নিচে দাঁড়িয়ে একটু স্বস্তি খুঁজছেন তারা। এদিকে গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে রাজধানীতে ক্যাপ, ছাতা, হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে পোর্টেবল ছোট চার্জার ফ্যানের চাহিদা।
রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান ও পুরান ঢাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখা যায়, কেউ মাথায় দেওয়ার জন্য ক্যাপ কিনছেন। কেউ ছাতা দরদাম করছেন। আবার কেউ কিনছেন হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান। দোকানদারদের কাছ থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে এই জিনিসগুলোর চাহিদা অনেক বেড়েছে।
বায়তুল মোকাররম গোল্ড মার্কেটের সামনে দেখা যায়, সেখান থেকে চার্জার ফ্যান কিনছেন ক্রেতারা, যা খুব সহজেই ব্যাগে নিয়ে চলাচল করা যায়। ক্রেতা সবুজ মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গরমে মনে হচ্ছে মুখসহ সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে। হাঁটার সময় বাতাস পেলেও সেই বাতাসে তীব্র গরম। তাই ৬০০ টাকা দিয়ে ছোট একটা চার্জার ফ্যান নিলাম।
দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই ক্রেতা বলেন, আমার রুমমেট সপ্তাহখানেক আগে এই ফ্যান কিনেছে ৪৫০ টাকা দিয়ে। গত বছর এটার দাম ছিল ৩০০/৩৫০ টাকা। আজ ৬০০ টাকায় বিক্রি করছে। দোকানদারের সঙ্গে দামাদামির সুযোগ নাই। বলে, ভাই এক দাম। গরম বাড়ার সঙ্গে এই ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। এজন্য বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম রাখছে।
বায়তুল মোকাররমের পাশেই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছাতা দেখছিলেন হায়দার আলী। অনেক দামাদামির পর সাড়ে পাঁচশ’ টাকা দিয়ে একটা ছাতা কিনেছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, তীব্র রোদে পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। এতদিন মাথায় রুমাল দিয়ে সূর্যের আলো থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি। কিন্তু তা দিয়ে এখন কাজ হচ্ছে না। তাই আজ ছাতা নিলাম। ছাতার দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এই ক্রেতা বলেন, ভালো ছাতা সাত-আটশ’র কমে বিক্রি করছে না। তাই নরমাল একটা ছাতা নিয়েছি।
ছাতা ও ফ্যানের দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলেছেন পাইকারিতে বেশি দামে কেনা, তাই বিক্রিও বেশি দামে হচ্ছে। বাইতুল মোকাররম এলাকায় মোরশেদ আলম নামের একজন ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা আগে যে দামে চার্জার ফ্যান কিনতাম এখন সেই দামে কিনতে পারতেছি না। পাইকারিতে চার্জার ফ্যানের দাম ৫০ টাকা করে বেড়ে গেছে। বিশ্বাস না হলে আপনি আমাদের মেমো কার্ড দেখেন। এখন আমারও তো ব্যবসা করে চলতে হবে। পাইকারিতে বেশি দামে কিনে খুচরায় তো কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না। বেশি দামে ছাতা বিক্রির ক্ষেত্রে একই অজুহাত দিয়েছেন বিক্রেতারা।
এদিকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে এখন তালপাতার হাতপাখা বিক্রি করছেন হকাররা। পুরান ঢাকার মুসলিম সরকারি হাইস্কুলের পাশে থেকে দরকষাকষি করে হাতপাখা কিনেছিলেন গৃহিণী সুমাইয়া আক্তার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও গ্রামে হাতে তৈরি এসব তালপাতার পাখার ব্যাপক প্রচলন ছিল। আমাদের মা-খালারা এসব হাতপাখা ব্যবহার করতেন। দাদা-দাদু বাড়ির উঠোনে বসে আমাদের এরকম হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতেন। আগে এসব হাতপাখার অনেক প্রচলন ছিল। এখন খুঁজেও পাওয়া যায় না। তবে গ্রামে এখনও এগুলো আছে। দামের বিষয়ে এই ক্রেতা বলেন, অত বেশি না, তুলনামূলক কম।
গাজীপুর থেকে পাইকারি দরে কিনে পুরান ঢাকার অলিগলি ও রাস্তায় ঘুরে এসব হাতপাখা বিক্রি করেন জাকির মিয়া (৬২)। তিনি জানান, গরমের শুরুতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ পিস হাতপাখা বিক্রি হতো। এখন হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিন আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় হাতপাখার পাইকারি দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, তালপাতার হাতপাখা পাইকারি ৪০ টাকা দরে কিনে খুচরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করি। আর কাপড়ের তৈরি হাতপাখা ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়, যার পাইকারি দাম পড়ে ৩০ টাকা। গরমের শুরুতে হাতপাখা বিক্রি করে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হতো। এখন দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা লাভ হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ১২ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে: থাকবে কতদিন?