X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিমার্জন ভুল-ভ্রান্তিতে, হেফাজতকে তুষ্টই রাখা হচ্ছে

এস এম আববাস ও রশিদ আল রুহানী
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৩০আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৩৯

পাঠ্যবইয়ে ভুল শিক্ষাবিদদের সুপারিশ থাকলেও ২০১৮ সালের সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে হেফাজতের ২৯ প্রস্তাবে সংযোজন করা কনটেন্ট সরানো হচ্ছে না। ভুল বা বিকৃতি ঠিক করে পরিমার্জন করা হচ্ছে। তবে শিক্ষাবিদদের প্রত্যাশা হেফাজতের সুপারিশ করা কনটেন্ট বই থেকে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দেবে সরকার। শুরু হতে পারে ২০১৯ সালের শিক্ষাবর্ষ থেকে।
শিক্ষাবিদ, মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৬ সালে হেফাজতের ২৯টি দাবির প্রেক্ষিতে নতুন পাঠ্যবইয়ে কনটেন্ট পরিবর্তন করায় বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। সমস্যা সমাধানে শিক্ষাবিদদের নিয়ে বৈঠক করে মন্ত্রণালয়। এরপর শিক্ষাবিদরা মাধ‌্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়াতে কিছু কনটেন্ট বাদ দেওয়া, অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া এবং প্রশ্ন ব্যাংক তৈরিসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেন।

শিক্ষাবিদদের ওই সুপারিশের ভিত্তিতেই ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা এবং নবম-দশম শ্রেণির ১২টি বই পরিমার্জনে কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নবম-দশম শ্রেণির পরিমার্জিত ছয়টি পাঠ্যবই আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদসহ বিশেষজ্ঞ শিক্ষামন্ত্রীর হাতে বই তুলে দেন। এর আগে পরিমার্জিত আরও পাঁচটি বই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়। বাকি রয়েছে আরও একটি বই।  

হেফাজতের প্রস্তাবে পাঠ্যবইয়ে কনটেন্ট পরিবর্তন বিষয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘মৌলবাদীরা ঠিক করবে আমাদের ছেলেমেয়েরা কী পড়বে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের মূল ধারার ছেলেমেয়েরা কিভাবে লেখাপড়া করবে, তাতে মন্তব্য করবে, নাক গলাবে সেটা মানতে পারি না।’

হেফজতের প্রস্তাবে নতুন সংযোজন করা বিষয় বই থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকার আমাদের সুপারিশগুলো রাখবেন। আমি উনাদের (মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা) সমালোচনা করি, তারপরেও উনারা আমাকে ডাকেন।’ মৌলবাদীদের প্রস্তাব না থাকা উচিত বলে মনে করেন ড. জাফর ইকবাল।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান এবং বই পরিমার্জন ও পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা বলছেন এ বছর কনটেন্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘নবম-দশম শ্রেণির মতো সব বই শিক্ষাবিদদের সহায়তায় সুখপাঠ্য সুন্দর করে পরিমার্জন করা হবে।’

তবে পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না উল্লেখ করেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে কনটেন্ট পরিবর্তনের সুপারিশ নিয়ে সেই কনটেন্ট পরিবর্তন হবে কী হবে না, তা অনুমোদন দেয় ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন (এনসিসিসি)। তারপর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সেই কাজ করি। কিন্তু এ বছর এনসিসিসি’র কাছে থেকে আমরা কনটেন্ট পরিবর্তনের কোনও নির্দেশনা পাইনি। শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত দু’টি কমিটি পাঠ্যবই সুখপাঠ্য করে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ীই বই ছাপা হচ্ছে।’

এর আগে নারয়ণ চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, প্রতি বছরই ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করতে পাঠবই পরিমার্জন করা হয়।সেই অনুযায়ী অন্যান্য ক্লাসের বই পরিমার্জন করা হচ্ছে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, পাঠ্যবইয়ের কনটেন্ট পরিবর্তন ব্যাপারটি বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ফলে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন আনতে অবশ্যই সময় লাগবে। ফলে আগামী বছর (২০১৮) বইয়ে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন আসছে না। পরের বছর (২০১৯) থেকে হতে পারে। তবে পাঠ্যবই সহজীকরণ, সাবলীল ও সুখপঠ্য করার কাজ চলছে।’

পরিমার্জন ও পরিবর্তন হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে এনসিটিবি’র সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমালোচনার পরে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনার পর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ‘ও’তে ‘ওড়না চাই’ এর পরিমার্জন করে ‘ও’ তে ওজন’ দিয়ে ভিন্ন ছবি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। আবার একই বইয়ে ‘অ’ শেখাতে গিয়ে ‘অজ’ হিসেবে ছাগল গাছের ওপরে দু’টি পা দিয়ে আম খাচ্ছে এমন ছবির পরিবর্তন করে ছাগলকে একটু নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণিতে কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল্‌ চল্‌ চল্‌’ রণ সঙ্গীতেও বাদ পড়া অংশটুকু যুক্ত করা হচ্ছে।’

পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই অধিকতর পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দিতে গঠন করার কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, তিনি ইংলিশ বই পরিমার্জনের কাজ করেছেন। সেখানে কনটেন্ট পরিবর্তনের মতো কিছু ছিল না।’

অন্যদিকে এনসিটিবি’র সুত্রে জানা গেছে, কয়েকটি কবিতার বিকৃত করা লাইনগুলো সংশোধন করে ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে  তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের বহুল পরিচিত ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় বিকৃত লাইনগুলো ঠিক করা হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুর ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতায় চারটি স্থানে পরিবর্তন করা হয়। যা এখন ঠিক করা হচ্ছে। অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণি থেকে গোলাম মোস্তফার ‘প্রার্থনা’ কবিতা থেকে বাদ দেওয়া লাইনটি এবার যুক্ত হতে পারে।’

পাঠ্যবই পরিমার্জন কমিটির সদস্য শিক্ষক ও শহীদ জয়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউকে বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে প্রচুর বানান ভুল ছিল, শব্দ জটিল ছিল, অর্থে ভুল ছিল এসব ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া যেসব কবিতার লাইন বিকৃতি করা হয়েছিল, কবিতা থেকে লাইন বাদ পড়েছিল, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। তবে, কোনও ধরনের কনটেন্ট পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করে দেওয়ার সময় কনটেন্ট পরিবর্তন করার বিষয়ে কোনও নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।’ 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ